কেয়ামতের দিন আরশের ছায়া পাবেন যে ৭ ব্যক্তি
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:২০
কেয়ামতের দিন আরশের ছায়া পাবেন যে ৭ ব্যক্তি
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কিয়ামত শব্দটি আরবি। অর্থ দাঁড়ানো। এই দিন বিচারের পূর্ব পর্যন্ত সবাইকে দাঁড়িয়েই থাকতে হবে, তাই এই দিনের নাম কিয়ামত। কিয়ামতের দিনে সূর্য মাথার উপর চলে আসবে। হাশরের ময়দানে তখন আরশের ছায়া ব্যতীত কোথাও কোনো ছায়া থাকবে না। সেদিন নেককার ইমানদার আরশের সুশীতল ছায়ায় স্থান পাবেন।


হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ৭ ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর (আরশের) ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। কিয়ামতের দিনটি হবে অত্যন্ত দীর্ঘ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেই দিনের পরিমাণ তোমাদের গণনায় সহস্র বৎসর।’ (সুরা: সাজদা, আয়াত: ৫) কোরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ওই দিনের ব্যাপ্তি পঞ্চাশ হাজার বছর।’ (সুরা: মাআরিজ, আয়াত: ৪) সেদিন সূর্য মাথার এক বিঘত ওপরে থাকবে, পায়ের নিচে জমিন হবে তামার। পাপী-তাপী গুনাহগারেরা ঘামতে থাকবে। পাপের পরিমাণ হিসাবে কষ্টের ও ঘামের পরিমাণ হবে। কারও হাঁটু পর্যন্ত, কারও কোমর, কারও বুক, কারও গলা পর্যন্ত, কারও ঘামে সাঁতার কাটতে হবে; তারা তাতে হাবুডুবু খাবে। (বোখারি, হাদিস: ৬৫৩২)


কিয়ামতের ভয়াবহতা নিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিনী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আজাবই কঠিন। (সুরা: হাজ্জ ১-২)


আরশের ছায়ায় থাকবেন যারা-
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর (আরশের) ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না।
ন্যায়পরায়ণ শাসক, সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ভালোবাসে এবং তারা এই ভালোবাসার ওপর মিলিত হয় ও এই ভালোবাসার ওপরেই বিচ্ছিন্ন হয় (মৃত্যুবরণ করে), সেই ব্যক্তি যাকে কোনো সুন্দরী রমণী ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে, কিন্তু সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’, সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপনে, এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে তা তার বাম হাতও জানতে পারে না, আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে অশ্রুধারা বয়ে যায়।’
(তিরমিজি: ২৩৯১, বোখারি: ৬৬০, মুসলিম: ১০৩১, নাসায়ি: ৫৩৮০, মুসনাদে আহমাদ: ৯৩৭৩, মুওয়াত্তা মালিক: ১৭৭৭, ইবনু হিব্বান: ৪৪৮৬)


১. ন্যায়পরায়ণ শাসক


পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র বা কোন দলের নেতা যাই হোক না কেন। নেতৃত্বের ব্যাপারে ন্যায় ও ইনসাফ। নেতা বলতে সর্বস্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে বোঝানে হয়েছে। হাদিসে এসেছে ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বোখারি ২২৪৯, তিরিমিজি ১৭১১)
নেতার কাজ কী হবে, এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তারা এমন লোক যাদেরকে আমি জমিনে ক্ষমতা দান করলে নামাজ কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজে বাধা দেবে। আর সব বিষয়ের চূড়ান্ত পরিণতি আল্লাহর হাতে।’ (সুরা: হজ্জ ৪১) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদেরকে মানুষের নেতা বানিয়েছিলাম তারা আমার বিধান অনুযায়ী পরিচালিত করে পথ প্রদর্শন করে। আমি ওহির মাধ্যমে তাদেরকে ভালো কাজ করার, নামাজ কায়েম করার এবং জাকাত আদায় করা আদেশ করেছি, তারা খাঁটিভাবে আমার ইবাদত করত।’ (সুরা: আম্বিয়া ৭৩)


২. যার যৌবন আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত হয়


যৌবনে শক্তি থাকে, সামর্থ্য থাকে। মানুষ সে সময় সব কাজ ভালোভাবে করতে পারে। আমরা তো বয়স হলে আল্লাহকে স্মরণ করি, ইবাদত করি। যৌবন বয়সে আল্লাহকে তেমন স্মরণ করি না। যৌবনের সময় মনে করি, এই বয়সটা তো ফুর্তি করার সময়। অনেকে ছেলে-মেয়েরা অল্প বয়সে ইবাদত শুরু করলে মনে করেন বা মুখে বলেও থাকেন, এখন কি এসবের বয়স হয়েছে? এখন তো লেখাপড়া করার বয়স। তাদের ভাবখানা এমন যে, ইবাদত-বন্দেগি করার বয়স হল যখন বৃদ্ধ হবে। অথচ আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল সা. যৌবন বয়সে ইবাদতকেই বেশী পছন্দ করেন।
৩. মসজিদে মন পড়ে থাকে এমন নামাজি


আল্লাহর সাথে সান্নিধ্য লাভের ব্যাপারে যার ব্যাকুলতা থাকে, তার মনই মসজিদে পড়ে থাকে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়ার জন্য ব্যাকুল থাকে যার মন। যে ব্যক্তি নামাজ পড়ার পর মসজিদ থেকে বের হয়ে যায়, কিন্তু আবার নামাজের জন্য মসজিদে আসার কথা তার মনের মধ্যে জাগ্রত থাকে। এ লোকের অবস্থা এমন যে, মসজিদ থেকে যেন বের হতে তার মনে চায় না কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে তাকে বের হতে হয়েছে।
৪. আল্লাহর ভালোবাসায় পরস্পর মিলিত ও পৃথক হওয়া দুই ব্যক্তি


দুই জন লোক, যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালবাসে। তাদের ভালবাসা থাকা কিংবা ভালবাসা না থাকা উভয়টা হয় আল্লাহকে কেন্দ্র করে। এখানে বোঝানো হয়েছে- তাদের ভালবাসা দুনিয়ার কোন উদ্দেশ্যে, দুনিয়ার কোন স্বার্থে নয় বরং আল্লাহকে কেন্দ্র করে। আল্লাহ বলেন,
‘বলুন আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ সবই একমাত্র আল্লাহর জন্য।’ (সুরা: আন আম ১৩২)


৫. সৎ চরিত্রবান ব্যক্তি


যে আল্লাহকে ভয় করে। গোপনে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। রূপ সৌন্দর্যের অধিকারিণী নারী খারাপ কাজের দিকে আহ্বান করে আর সে এই বলে বিরত থাকে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেওনা। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং অসৎ পন্থা।’ (সুরা: বনি ইসরাঈল ৩২) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে তার নিকটেও যেওনা, তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক।’ (সুরা: আনআম ১৫২)


৬. গোপনে দান-সদকা করা


যে ব্যক্তি সম্পদ ব্যয় করে এমনভাবে, তার ডান হাত যা ব্যয় করে তার বাম হাত তা জানতে পারে না। দান-সদকা করার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে এই রিয়া (লোক দেখানোর চিন্তা) থাকতে পারে। এটা আল্লাহ পছন্দ করেন না। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করো মৃত্যু আমার আগেই।’ অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কিছুতেই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলিকে আল্লাহর পথে ব্যয় করবে।’ (সুরা: আল ইমরান ৯২)


৭. নির্জনে আল্লাহর ভয়ে কান্না করা


যে ব্যক্তি নির্জনে বসে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার চোখ অশ্রু ঝরাতে থাকে । যে ব্যক্তি মনের আবেগ মিশিয়ে, মনের মাধুরী মিশিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে আর মনে থাকে আল্লাহর চিন্তা-চেতনা, মনে থাকে পরকালের চিন্তা-চেতনা, মনে থাকে জাহান্নামের ভয়, আজাবের ভয়, এই ভয়ে সে কাঁদতে থাকে, চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে, এ অবস্থা যার হয়, সে তো আল্লাহর খাস মানুষে পরিণত হয়। তাই কেয়ামতের দিন আল্লাহর খাস বান্দা হিসেবে তাকে আরশের নীচে ছায়া দেয়া হবে। আল্লাহর রাসুল সা. বলেন, ‘দু’ধরনের চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না। ঐ চোখ যা আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন দেয়। ঐ চোখ যা আল্লাহর পথে পাহারাদারীতে রাত জাগে। (তিরমিজি ১৬৪৫)


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com