ঈদুল আজহা যে শিক্ষা দেয়
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৩, ০৯:৪৫
ঈদুল আজহা যে শিক্ষা দেয়
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কোরবানির ঈদ-পালনের মাধ্যমে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবী হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)এর অতুলনীয় আনুগত্য এবং মহান ত্যাগের পুণ্যময় স্মৃতি বহন করে। এজন্য মুমিন বান্দার জীবনে পবিত্র ঈদুল আজহা এবং কোরবানির গুরুত্ব সীমাহীন।


মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘অতএব আপনি আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন’ (সুরা কাউসার, আয়াত ২)।


কোরবানি শব্দের অর্থ নৈকট্য, ত্যাগ, উৎসর্গ। আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর পশু কোরবানি করে থাকে।


পবিত্র কোরআন ও হাদিসের তথ্য অনুসারে ঈদুল আজহার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নিগূঢ় ইতিহাস যার সূচনা হয়েছিল হযরত আদম আ.-এর পুত্র হাবিল ও কাবিলের প্রতিযোগিতা মূলক কোরবানি করার মাধ্যমে।


এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে-


‘ওদেরকে আদমের দুই পুত্রের (হাবীল ও ক্বাবীল) ঘটনা ঠিকঠিকভাবে শোনাও; যখন তারা (আল্লাহর উদ্দেশ্যে) একটি করে কোরবানি করেছিল। তাদের একজনের কোরবানি কবুল হল, অন্যজনের হল না। তখন দ্বিতীয়জন (প্রথমজনকে) বলল, ‘আমি তোমাকে খুন করে ফেলব।’ প্রথমজন বলল, ‘আল্লাহ তো কেবল মুত্তাকীদের কোরবানি কবুল করেন।’ (আল মায়িদাহ:২৭)।


এরই ধারাবাহিকতা হযরত ইবরাহিম আ. পর্যন্ত পৌঁছে। তিনি মহা পরীক্ষার সম্মুখীন হোন। স্বীয় পুত্র ইসমাইল আ.- কে উৎসর্গ করার দৃঢ় মনোবল ও মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার ঈর্ষণীয় ঈমান নিয়ে আত্মোৎসর্গের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে যান। তার আত্মত্যাগে মহান প্রতিপালক এতোই সন্তুষ্ট হয়ে পড়েন যে, পরবর্তী মুসলিমদের উপর এই কোরবানির বিধান অত্যাবশ্যক করে দেন। ইব্রাহিম ও ইসমাইল আ.- এর মাঝে ঘটে যাওয়া চমৎকার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে,


‘অতঃপর যখন সে বাবার সাথে ছুটোছুটি করার বয়সে উপনীত হল তখন (একদিন) ইবরাহীম বলল, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমি তোমাকে জবাই (আল্লাহর নামে কোরবানি) করছি। অতএব ভেবে বল, তোমার মত কি?’ তিনি (ইসমাইল) বললেন, ‘বাবা! তোমাকে যা করতে বলা হচ্ছে তাই কর। আমাকে তুমি ইনশাআল্লাহ ধৈর্যশীল পাবে।’ (আস সফ্ফাত : ১০২)।


এরপর এই ধারাক্রম যথানিয়মে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছে এবং উম্মতে মুহাম্মদীর সামর্থবানের জন্য ঈদুল আজহায় কোরবানি করা ওয়াজিব বা আবশ্যক হিসেবে সাব্যস্ত করে দেয়া হয়।


পশু কোরবানি একটি প্রতীকি ব্যাপার। এখানে পশু কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জানমাল থেকে শুরু করে সবকিছুই কোরবানি করতে প্রস্তুত।


হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পুরো পরিবারের নজিরবিহীন কোরবানির ইতিহাস মানুষকে যে ত্যাগের শিক্ষা দেয় তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে একজন মুমিন তার সবকিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকে।


ঈদ যেমনি আনন্দের বার্তা দিচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে শিক্ষা দিচ্ছে মহান আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালনের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করার। নিজের মাঝে থাকা পশুত্ব ও অমানবিক মন মানসিকতা বিসর্জন দেওয়ার। বার্তা দিচ্ছে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর। সুপথ দেখাচ্ছে ন্যায় নীতি আর নিষ্ঠার পথে চলার। শিক্ষা দিচ্ছে সুন্দর ও পবিত্র মনের অধিকারী হওয়ার।


ঈদুল আযহা কেবল পশু কোরবানি করা এবং আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে আনন্দ প্রমোদকে বুঝায় না বরং ঈদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আত্মোৎসর্গ, নিজের ভেতরে থাকা পশুত্বের মূলতপাটন এবং একমাত্র রবের সন্তুষ্টি। ঈমান আনয়নের মাধ্যমে সবাই মুমিন বা মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ঈমান গ্রহণের সাথে সাথেই প্রতিটি মুমিন ইসলামের সকল বিষয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে। সুখ দুঃখ এবং সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা সর্বাবস্থায় ইসলামই একমাত্র অনুশাসন একথাটি নিজের মধ্যে দৃঢ় করে নেয়া। প্রকৃত মুমিনের মৌলিক চিন্তা চেতনা এমন হওয়াটাই কাম্য।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com