সরকার দেশকে ভারতের ‘স্যাটেলাইট রাষ্ট্রে’ পরিণত করেছে: রিজভী
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ১৭:৫৯
সরকার দেশকে ভারতের ‘স্যাটেলাইট রাষ্ট্রে’ পরিণত করেছে: রিজভী
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সরকার দেশকে প্রতিবেশী দেশের ‘স্যাটেলাইট রাষ্ট্রে’ পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।


২০ মার্চ, বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।


শনিবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে এবং রবিবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারত আমাদের পাশে ছিল বলেই বাংলাদেশের নির্বাচনে বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র অশুভ হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। যখন দেশ-বিদেশে নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্র, তখন ভারত স্ট্রংলি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’


সম্প্রতি আরেকটি অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেশে ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল, ওই সময় ভারত আমাদের পাশে ছিল। ২০১৮ সালে নির্বাচনে ভারত আমাদের সাথে ছিল। এবারও ভারত আমাদের পাশে ছিল ও আছে।’


দুই মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জনগণের ভোটাধিকার হরণ, গণতন্ত্র হত্যা এবং বিনা ভোটে অবৈধ ক্ষমতার অমরত্ব লাভের অপচেষ্টায় প্রতিবেশী ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও মদদের স্বীকারোক্তি প্রদান করে জোর গলায় বক্তৃতা দিচ্ছেন। কথায় কথায় প্রায় সব মন্ত্রী ভারত বন্দনায় মত্ত হচ্ছেন। তাদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ এখন ভারতের স্যাটেলাইট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।


তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন বা শক্তিতে নয়, ভারতের শক্তি ও সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতার সিংহাসনে টিকে আছে। আর এই টিকে থাকার জন্য যত দমন-পীড়ন, গুম-খুন, হত্যা, মামলা, হামলা, অবিচার ও অনাচার সব কিছু করছে সরাসরি ভারতের মদদে।


রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদের অকপট স্বীকারাক্তি প্রমাণ করে জাতিসংঘ সনদের ২(৪) ধারা সরাসরি লঙ্ঘন করে ভারত আমাদের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার সব কিছুর ওপর সরাসরি নগ্ন হস্তক্ষেপ করে চলেছে। ২(৪) ধারায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সকল সদস্য-রাষ্ট্র আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন থেকে এবং জাতিসংঘের উদ্দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো উপায় গ্রহণ করা থেকে নিবৃত্ত থাকবে।


তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় স্পষ্ট যে ভারত এ নীতি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। ভারত বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অরাজক, লুটেরা, খুনি ও গণধিকৃত বাকশালী শাসনের পক্ষে সহযোগিতা করছে। গণনিপীড়ক-হন্তারক-মাফিয়া সরকারকে প্রকাশ্যে মদদ ও সমর্থন দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ এখন একটি ভারতীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে, যা স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বার্থ ও মর্যাদার পরিপন্থী।


তিনি বলেন, গত নির্বাচনে জনগণ দেখেছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসে একদলীয় নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। ভারতীয় কুটনীতিকরা বাংলাদেশে এসে বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তারা স্থিতিশীলতা চান। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার চান না। ভারত মনোনীত প্রার্থীরা বীরদর্পে বলছেন, আমাকে ভারত মনোনয়ন দিয়েছে। আমি ভারতের প্রার্থী। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি। তাহলে কোথায় স্বাধীনতা, কোথায় সার্বভৌমত্ব, কোথায় ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ যার বিনিময়ে এই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আজকে সব কিছু ভারতের অঙ্গুলি হেলেনে চলছে। বাংলাদেশ কি পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ? তলে তলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভোমত্ব কি বিকিয়ে দেওয়া হয়েছে?


রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা ভারতের গোলামি করলেও এ দেশের মানুষ ভারতের গোলামি করবে না। ভারতের জনগণের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নাই। তবে আমাদের আপত্তি ভারতের শাসকদের পলিসি, নীতি নিয়ে। তাই দলমত নির্বিশেষে ভারতীয় এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। আওয়ামী লীগ নয়, ১৮ কোটি মানুষের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের ভূমিকায় ফিরে আসা উচিত ভারতের।


‘ভারত বিরোধী ক্যাম্পেইন’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্রই ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইন নিয়ে উত্তাল। ভারতীয় পণ্য বর্জন করে জনগণ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। রাজধানীতে মিছিল সমাবেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হচ্ছে। সচেতন মানুষ বলছেন, ভারতীয় পণ্য কিনলে তা বুলেট হয়ে জনগণের রক্ত ঝরাচ্ছে। এটা জনগণের কাছে পরিস্কার যে, গত তিন দশক আওয়ামী লীগ ভারতের সহযোগিতায় নির্বাচনের নামে তামাশা করে আসছে। গত ৭ জানুয়ারি বিনা ভোটে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে ভারতের সমর্থনে।


মানে মানুষ ভোট না দিলেও আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারে, জনগণের সমর্থনের প্রয়োজন হয় না। জনগণের ভোটাধিকার হরণ, গণতন্ত্র হত্যা, গুম-খুন-অবিচার, কুশাসনের জন্য ভারত দায়ী বলে জনগণ মনে করে। ভারত বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে নয়, আওয়ামী লীগের পক্ষে। সেজন্য জনগণ তাদের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটাচ্ছে ভারতীয় পণ্য বর্জন করে, জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ জানাচ্ছে ভারত হটাও আন্দোলনের পক্ষে। জনগণের এখন একটাই মদদাতা শক্তির উস্য ভারতীয় পণ্য কিনব না।


তিনি বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। বাংলাদেশের অধিকার হারা মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত আন্দোলন। সারাদেশের দেশপ্রেমে শাণিত মানুষের এই ভারতীয় পণ্য বর্জনকে আমরা যৌক্তিক মনে করি। সর্বহারা জনগণের এই আবেগকে আমরাও ধারণ করি। আওয়ামী লীগকে জোরপূর্বক ক্ষমতায় বসে থাকতে সহযোগিতাকারী ভারতীয় পণ্য বর্জন হোক মানুষের প্রতিবাদের হাতিয়ার। ভারতীয় পণ্য বর্জন মানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারকে বর্জন। কারণ আওয়ামী লীগ একটি ভারতীয় পণ্য।


রিজভী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে ঢেউ দৃশ্যমান তাতে মনে হয় দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী ভারতীয় পণ্য বর্জনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে। সুতরাং জনগণের দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিসহ ৬৩টি গণতন্ত্রকামী দল এবং দেশপ্রেমিক জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জনের এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছে।


সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের জয়নুল আবদিন ফারুক, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস প্রমুখ।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com