আমরা আমাদের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন নই, উদ্বিগ্ন রাষ্ট্র নিয়ে: ছাত্রদল
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১৫:১৮
আমরা আমাদের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন নই, উদ্বিগ্ন রাষ্ট্র নিয়ে: ছাত্রদল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ছাত্রদলের নেতারা বলছেন, আমরা আমাদের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন নই, আমরা উদ্বিগ্ন আমাদের রাষ্ট্র নিয়ে। হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে। নেতারা অভিযোগ করে বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে আমাদের অনেক নেতাকর্মী বাড়িতে যেতে পারে না। অনেকে দুই ঘণ্টা নিদ্রায় যেতে পারে না। সব সময় রাষ্ট্র বাহিনী আমাদের পেছনে ধাওয়া দিয়ে বেড়াচ্ছে।


বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নেতারা এ কথা জানান।


লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান বলেন, এদেশের আপামর জনসাধারণ অবগত আছেন যে, ঐতিহাসিকভাবেই আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ এদেশে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরোধী তথা শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। স্বাধীনতা প্রাপ্তির অব্যবহতি পরই ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারী 'ভিয়েতনাম দিবস' উপলক্ষ্যে বের করা মিছিলে গুলি চালিয়ে শিক্ষার্থী হত্যা শুরুর মাধ্যমে যে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছিল, আওয়ামী লীগের সেই কলঙ্কিত ইতিহাসের ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত আছে।


তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গণে ছাত্রলীগের অব্যাহত সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য, পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস বিকৃতি, পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষার সরকারি আশীর্বাদপুষ্ট সিন্ডিকেট, উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার নির্দেশনা, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, দলীয় বিবেচনায় অযোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা বিলোপের অপচেষ্টা, জবাবদিহিতাহীন অস্বাভাবিক প্রকল্প ব্যয়, শিক্ষা উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আজ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। অবাধে নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য, ছাত্রদল যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে প্রতিবাদ করতে না পারে সেই উদেশ্যে দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসের বাইরে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসগুলোতে সহবস্থান বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই।


এই ছাত্র নেতা বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বিএনপি সহিংসতার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করছে বলে বক্তব্য দিয়েছেন। আর এই বক্তব্যের পরই তার বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণে মাঠে নেমে পড়েছে কিছু অতিউৎসাহী গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে গ্রেফতার করে। এরপর হাসপাতালে রোগী দেখা শেষে বের হবার পথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আবুল হাছান চৌধুরীকেও তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশের সদস্যরা। জিসানকে খুঁজতে তার বাসায় গেলে সহ সাধারণ কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি হাসানুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আর রিয়াদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আরিফ বিল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়। বেআইনিভাবে দীর্ঘ সময় আটক রাখার পর বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরব হয়ে উঠলে একপর্যায়ে অস্ত্রসহ গ্রেফতারের নাটক সাজিয়ে তাদেরকে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়। হেফাজতে থাকার সময়ে ছাত্রনেতাদের ওপর বর্বর নির্যাতন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছাত্রনেতা জিসানের শরীরের জমাট বাঁধা কালচে রক্তের ছাপগুলোই যেন আজকের বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। এই রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবার বদলে আজকের বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে কিছু আওয়ামী লুটেরার অবাধ লুটপাটের জায়গা, প্রশাসনের কিছু দলবাজ অতিউৎসাহী সদস্যের নাটক মঞ্চস্থ করার ক্ষেত্র!


তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মাগুরা জেলা শাখার অধীনস্থ মহম্মদপুর উপজেলার ৪ নং রাজাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ আবু তৈয়ব মোল্লা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়ে তিনদিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অবশেষে গতকাল ইন্তেকাল করেছে। গত ১৯ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট এই ৪ দিনেই কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি আবুল হাছান চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ আশরাফুল হোসেন মামুন, প্রচার সম্পাদক ওমর সানী, সহ-সাধারণ সম্পাদক মীর ইমরান হোসেন মিথুন, সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান, সহ-সভাপতি হাসানুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আর রিয়াদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার যুগ্ম-আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন আনান, যাত্রাবাড়ী থানার যুগ্ম-আহবায়ক সুমন সরকার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আরিফ বিল্লাহ, ছাত্রনেতা রাব্বি, মোংলা সরকারি কলেজ শাখার আহবায়ক আসলাম হোসেন চয়ন, নেত্রকোনা জেলা শাখার সহ-সভাপতি সজল তালুকদার, নেত্রকোনা সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সৈয়দ মোকসেদুল আলম রাজীব, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলা শাখার সদস্য সচিব মোঃ হাবিব সিকদার, যুগ্ম-আহবায়ক সারোয়ার শাহেদ মুন্না, জামালপুর জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ স্বপন মাহমুদ, জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম-আহবায়ক মোঃ ফিরোজ কবির, ময়মনসিংহের পাগলা থানার ছাত্রনেতা আবদুল্লাহ খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তেজগাঁও কলেজ শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, অষ্টগ্রাম উপজেলা শাখার সদস্য সচিব আল মাহমুদ মোস্তাক, সিলেট জেলা শাখার সহ-দপ্তর সম্পাদক জয়নাল আবেদিন রাসেলকে। সারাদেশের একাধিক জেলা ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা কারাবন্দী আছেন।


"পদযাত্রা কর্মসূচিতে হবিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, বরগুনাসহ বিভিন্ন স্থানে নৃশংস হামলা করে অসংখ্য ছাত্রনেতাকে আহত করা হয়েছে।


তিনি আরো বলেন, আজ এই অবৈধ সরকার আর তার মোসাহেবরা মিলে আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা আমাদের ভাবতে হবে। আমরা কোনভাবেই উত্তর কোরিয়ার কাতারের রাষ্ট্র হতে চাই না। আজ বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশকে নিয়ে ক্রমাগত উদ্বেগ জানাচ্ছে, স্যাংশন আসছে, ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসছে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। এই সবকিছুরই মূল হচ্ছে, একতরফা অবৈধ কারচুপির ভোটচুরির নির্বাচন। একজন ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতায় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বিলোপ করেই দেশকে আজকের পর্যায়ে ঠেলে দেয়া হয়েছে।"


ছাত্রদলের এই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে, গণমানুষের ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায়, সাম্য-মানবিক মর্যাদা- সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার এই লড়াই যতো বেগবান হচ্ছে, শহীদের সংখ্যা, গ্রেফতারের সংখ্যা, আহতের সংখ্যা, পঙ্গুত্বের সংখ্যা, গুমের সংখ্যা, অস্ত্র উদ্ধারের মতো দূর্বল স্ক্রিপ্টের নাটকের সংখ্যা ততো বেশি দীর্ঘতর হচ্ছে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা স্পষ্টচিত্তে বলতে চাই, অবৈধ ক্ষমতার দখলদারদের এধরণের নিপীড়ন-নির্যাতন, মোসাহেবদের হুমকি-ধামকি, নানান কল্পকাহিনী সাজানোতে আমরা নূন্যতমও বিচলিত নই।


"গণতন্ত্রের পক্ষে আমাদের যে রক্তস্নাত পথচলা, সেই পথচলা কোনকিছুতেই থামবেনা, থামানো যাবেনা। তবে একইসাথে বলতে চাই, আমাদের সহযোদ্ধাদের প্রতিবিন্দু রক্ত, প্রতি ফোঁটা চোখের জল আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। যারা আজকে ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে, মোসাহেবির নেশায় বুঁদ হয়ে, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাদের মতো বক্তব্য দিয়ে নিজেদেরকে ফ্যাসিবাদের বড় দোসর প্রমাণের প্রতিযোগিতা করছেন, তারা কেউই আইনের উর্ধ্বে নন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার পর, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পর আপনাদেরকে অবশ্যই এসব অপকর্মের জবাবদিহি করতে হবে, ইনশাআল্লাহ।


তিনি বলেন, বিজয় আমাদের অনিবার্য। রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে সেই অবশ্যম্ভাবী বিজয় অচিরেই অর্জিত হবে, ইনশাআল্লাহ।"


বিবার্তা/এমই/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com