ইন্টারনেট শাটডাউনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার: ফখরুল
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১৬:১৪
ইন্টারনেট শাটডাউনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার: ফখরুল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিরোধী আন্দোলন দমনে সরকার ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


২৩ জুলাই, রবিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।


ফখরুল বলেন, সরকার গণঅভ্যুত্থানের ভয়ে ভীত হয়ে প্রয়োগ করছে নতুন ডিজিটাল অস্ত্র ‘ইন্টারনেট-শাটডাউন’। নিরবিচ্ছন্ন ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে জনগণকে, কেড়ে নেয়া হচ্ছে মত প্রকাশের অধিকারকে।


‘সরকার পতনের চলমান এক দফা আন্দোলনের সম্পূরক হিসেবে আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক ইন্টারনেট শাটডাউন, নজরদারি, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, মোবাইল ফোর তল্লাশীসহ সকল ধরনের ডিজিটাল নির্যাতনের অপব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’


অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।


তিনি বলেন, ইন্টারনেট-শাটডাউনের ঘটনাকে নাগরিক অধিকারের ভয়ংকর লঙ্ঘন। এটা গুম-খুনের মতোই একটা অপরাধ। কোনো ব্যক্তি গুমের শিকার হলে কেবল একজন হারিয়ে যান। কিন্তু কোনো স্থানে ইন্টারনেট শাটডাউন করা হলে তার শিকার হয় দেশ-বিদেশের লক্ষ কোটি মানুষ। মানুষকে খুন করা যেমন অপরাধ, তেমনি অনলাইন থকে তার অস্তিত্বকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলাও অপরাধ। ক্রমাগতভাবে এই অপরাধ করে যাচ্ছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার।


গত ১২ জুলাই নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ চলাকালে ওই এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা বিচ্ছিন্ন ও বিঘ্নিত করাসহ গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা, রাজশাহী ও ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশগুলোতেও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।


তিনি বলেন, ইন্টারনেট অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘এক্সেস-নাও’ এর ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্টারনেট শাটডাউনের সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে। তার আগে চারটি দেশে (ভারতে ৮৪ বার, ইউক্রেনে ২২ বার, ইরানে ১৮ বার ও মিয়ানমারে ৭ বার) বর্তমান বিদ্রোহ অথবা যুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করেছে যা তাদের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণ বলে তারা দাবি করেছে।


‘আমাদের প্রশ্ন পঞ্চমস্থান অধিকারকারী বাংলাদেশেও কি কোনো যুদ্ধ চলছে। কাদের বিরুদ্ধে সরকার সেই যুদ্ধ করছে। ইতোমধ্যে ৬ বার ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়েছে।’


মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট পরিসেবা মত প্রকাশের অপরিহার্য একটি মাধ্যমে। এই পরিসেবা বিচ্ছিন্ন করা হলে তা মূলত মত প্রকাশের অধিকারকেই বাধাগ্রস্ত করা হয়।ইন্টারনেট পরিসেবা আজ শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার বিনোদনেই সীমাবদ্ধ নয়।


ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার ডিজিটালাইজেশনকেই জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ডিজিটালের মাধ্যমে নিপীড়ন, জনগণের ওপর নজরদারি, ফোন কল রেকর্ড, অনলাইনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, অনলাইনে নারীদের প্রতি সহিংসতাকে উস্কে দেয়া, ভিন্ন মতালম্বীদের ব্ল্যাকমেইল করা, ভুল তথ্য-অপতথ্য-বিকৃত তথ্য ও কন্টেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে প্রপাগান্ডা চালানোসহ নানা অপরাধ করছে সরকার।


‘ডিজিটাল-রাইটস বা ডিজিটাল অধিকার ব্যাপারটি হয়তো অনেকের কাছে নতুন মনে হতে পারে। কিন্তু এটি সার্বজনবিদিত জরুরী একটা বিষয়।


তিনি বলেন, জনগণের টাকায় নজরদারি প্রযুক্তি কিনে জনগণের উপরেই গোয়েন্দাগিরি করছে এই স্বৈরাচার।


‘ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের উপর নজরদারি করে ইলিয়াস আলীর মত বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গুম করার তথ্যও ইতোমধ্যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। আবার বিরোধী রাজনীতিকদের আইডি হ্যাক করে তাদের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মত কুখ্যাত আইনের দ্বারা নির্যাতন করা হচ্ছে। সাইবার প্রযুক্তির অপব্যবহার যত ধরনের অপরাধ করা সম্ভব, এই সরকার তা সবই করছে।’


বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে কি করবে তা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ডিজিটাল নির্যাতনের এই পরিস্থিতি চূড়ান্ত অবসানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে প্রণীত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার ৩০ দফায় বিএনপির প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছেন। ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ডিজিটাল সেবাকে বিএনপি বৈশ্বিক মানে উন্নীতি করবে।’


গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের আয়োজনে ‘ইন্টারনেট-শাটডাউন’সহ সকল ধরনের নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।


সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সদস্য শাম্মী আখতার, রুমিন ফারহানা, কাদের গনি চৌধুরী, মোর্শেদ হাসান খান, ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, আতিকুর রহমান রুমন, আলী মাহমুদ ও শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/এমই/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com