রাজনীতি
নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না: হানিফ
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৩, ১৯:১৬
নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না: হানিফ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।


বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করুন। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।


শনিবার (১৩ মে) বিকেল ৩ টায় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবলীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, দেশে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে দমন করার জন্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে। আর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে তার জন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠন যেকোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তত আছে।


হানিফ বলেন, ২০২৩ সালের শেষ দিকে অথবা ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আবার সরকার গঠন হবে। কিন্তু এই নির্বাচন বানচাল করার জন্য ইতোমধ্যে একটি মহল ষড়যন্ত্র শুরু করে উঠে পড়ে লেগেছে।


আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্য হচ্ছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে স্তব্ধ করা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করা। দেশের উন্নয়ন দেখলে তাদের গায়ে জ্বালা ধরে। তাই তারা ষড়যন্ত্র করে। এরা কারা? তারা বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি। তবে এর পেছনেও তাদের আরো পরিচয় আছে।


তিনি বলেন, জামায়াত পাকিস্তানের তৈরি। তাদের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদূদী পাকিস্তানে দাঙ্গা, ফ্যাসাদ করার মূল হোতা। বিএনপিও পাকিস্তান রাষ্ট্রের তৈরি। একাত্তরে যাদের পরাজিত করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই পাকিস্তানের তৈরি বিএনপি।


২০১২ সালে একটা খবর এসেছিলো পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল আসাদ দুররানি আদালতে সাক্ষী দেয়ার সময় বলেছিলেন, বিএনপি নামক দলকে নানা সময়ে আর্থিক সহায়তা করেছে পাকিস্তান। যাদের আমরা পরাজিত করে স্বাধীনতা পেয়েছি সেই পাকিস্তান কোন স্বার্থে বিএনপিকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।


দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করেছে আইএসআই। বাংলাদেশেও হরকাতুল জিহাদসহ বিএনপি নামক দল করেছে তারা। যে বিএনপি পাকিস্তানের তৈরি সেই দল রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর, মানুষের জন্য ভালো কাজ করতে পারে না- বলেন তিনি।


আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আন্দোলন, আন্দোলন খেলা খেলছে। এদেশের মানুষ বহু আন্দোলন দেখেছে। ১৯৪৯ সালের পর থেকে আন্দোলন করে দেশ স্বাধীন করেছে আওয়ামী লীগ। স্বৈরাচারী জিয়া, এরশাদ সরকারকে প্রতিহত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ।



বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, সরকার নাকি তাদের (বিএনপি) নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়। এজন্য তাকে আটকে রেখেছে। ২০০৭ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নামে এতিমের টাকা আত্মসাৎ, নাইকো-গ্যাটকো মামলা হয়েছিল। তখন আমি বলেছিলাম, যদি অপরাধী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া আদালত কর্তৃক সাব্যস্ত হন তাহলে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতার করা হবে। তখন বিএনপি নেতারা আস্ফালন করে বলেছিলেন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে এই বাংলাদেশ রক্তগঙ্গা হবে, সরকার থাকবে না। আজ খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনুকম্পায় বাসায় আছেন।


তিনি বলেন, দেশে কোনো আন্দোলনও হয়নি, সরকারও উল্টায়নি। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে দেশের মানুষ দুর্নীতিবাজ বিএনপি-জামায়াতের সাথে নেই। দুর্নীতিবাজ খালেদা জিয়ার সাথেও নেই।


হানিফ বলেন, পাকিস্তানের ইমরান খানকে যখন গ্রেফতার করা হয় লাখো মানুষ রাজপথে প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করেছেন। কই এত জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। কারাগারে নেয়ার পর লাখ তো দূরের কথা হাজারো মানুষও তো রাজপথে নামেনি। এরপরও বিএনপি নেতারা কোন মুখে বলেন খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সরকার তাকে কারাগারে রেখেছে।


বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহবান জানিয়ে হানিফ বলেন, আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আন্দোলন, আন্দোলন খেলে লাভ নেই। নির্বাচনে অংশ নিন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করুন আপনাদের জনপ্রিয়তা কতখানি। তখন প্রমাণ হবে জনগণ উন্নয়ন-অগ্রগতি, শান্তি চায় নাকি আপনাদের দুর্নীতিবাজ নেতা খালেদা জিয়া, সন্ত্রাসী তারেক রহমানকে চায়।


তিনি বলেন, জনগণ সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না বলে আপনাদের আন্দোলনে জনগণের সমর্থন মেলেনি। জনগণ আপনাদের পাশে নেই। আপনারা জানেন জনগণ আপনাদের চায় না। নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করার সম্ভাবনা নেই। আর এজন্য নির্বাচন বানচাল করে সরকার উৎখাত করতে চান।


জনগণের উপর আপনাদের ভরসা নেই। আপনাদের ভরসা এখন বিদেশি প্রভুদের ওপর। তাই ষড়যন্ত্রের রাস্তা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ভাবছেন বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিলেই বিদেশি প্রভু সরকারের পতন ঘটিয়ে দিবে- বলেন তিনি।


সরকারের ওপর বিদেশিদের কোনো চাপ নেই উল্লেখ করে হানিফ বলেন, আমরা পরিস্কারভাবে বলে দিতে চাই, আমাদের ওপর কিসের চাপ থাকবে? বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন হবে সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। আমাদের বিদেশি বন্ধুরা বলেছেন, তারাও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চান। আমাদের ও তাদের চাওয়া তো এক। তাহলে সরকারের ওপর কিসের চাপ থাকবে? আমরা তো বলিনি কাউকে বাদ রেখে নির্বাচন করবো। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হবে না- একথা তো কেউ বলেনি। তাহলে কিসের চাপ থাকবে। এই মিথ্যাচারের ধোয়া তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।


এসময় যুবলীগের প্রশংসা করে হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন প্রতিরোধে রাজপথে শক্ত ভূমিকা রেখেছিল যুবলীগ। এই যুবলীগ খালেদা জিয়া, তারেকের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের সময় শেখ হাসিনার পাশে থেকে ভ্যানগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করে রাষ্ট্রক্ষমতায় এনেছিল। যুবলীগ সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। বিএনপি নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে তাদের সন্ত্রাসীদেরকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য যুবলীগই যথেষ্ট। এদেশের মানুষ কোন অগ্নিসন্ত্রাসীদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।


সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা দেশের বিরুদ্ধে, মানুষের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। যারা সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, মাদককারবারী তাদেরকে নিয়ে তারা পল্টনে সমাবেশ করছে।


তিনি আরো বলেন, আজকে শেখ হাসিনার প্রসংশা সারা বিশ্বে। যে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করে দিয়েছিল, সেই বিশ্ব ব্যাংকের সভাপতির হাতে নিজেদের টাকায় তৈরি পদ্মা সেতুর স্কেচ তুলে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এটাই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাই বলতে চাই, যদি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দেশ ও সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপি ষড়যন্ত্র করে তাহলে তাদেরকে রাজপথেই কঠোরভাবেই প্রতিহত করবে যুবলীগ।


এসময় আরো বক্তব্য রাখেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল কান্তি জোদ্দার, তাজউদ্দিন আহমেদ, মো. জসিম উদ্দিন মাতুব্বর, মো. আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান চপল, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দফতর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, উপ-দফতর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা।


এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মীর মো. মহিউদ্দিন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মো. হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা, ধর্ম সম্পাদক মাওলানা মো. খলিলুর রহমান সরদার, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মুক্তা আক্তার, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাড. শেখ নবীরুজ্জামান বাবু, উপ-শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার সম্পাদক কাজী খালিদ আল মাহমুদ টুকু, উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক সফেদ আশফাক আকন্দ তুহিন, উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফজলে রাব্বী স্মরণ, উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শামছুল ইসলাম পাটোয়ারী, উপ-কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মোল্লা রওশন জামির রানা, উপ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মো. গোলাম কিবরিয়া শামীম, উপ-ধর্ম সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্যসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।


বিবার্তা/সোহেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com