'‌স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠকের তালিকায় চতুর্থ নম্বরে থাকবে জিয়ার নাম'
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩, ২০:০০
'‌স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠকের তালিকায় চতুর্থ নম্বরে থাকবে জিয়ার নাম'
ফাইল ছবি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে হাত মিলিয়ে বিএনপি ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন করে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ নিয়ে বারবার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ২৭ মার্চ বিকেলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক সেজে যান। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের প্রথম দাবিদার হলেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মরহুম আব্দুল হান্নান সাহেব। ইতিহাসে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম থাকবে চতুর্থ নম্বরে।


তিনি বলেন, ৭ই মার্চ বাঙালি জাতির এক ঐতিহাসিক দিন। পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধু সেদিন স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল।


৬ মার্চ, সোমবার কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগ কর্তৃক আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ৭ই মার্চের ইতিহাস মুছে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধু জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ১৪টি বছর বাঙালির অধিকার আদায়ে কারাগারে থাকতে হয়েছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে ৭ই মার্চের ভাষণ, জয় বাংলা নিষিদ্ধ করেছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আর্কাইভ থেকে, রেডিও-টেলিভিশন থেকে মুছে ফেলেছিল। যিনি আমাদের পতাকা, সংবিধান দিয়েছেন- তাকেও নিষিদ্ধ-বিতর্কিত করতে চেয়েছে।


তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কারো দয়ায় আসেনি, আলোচনার টেবিলে বসে, কোন মেজরের হুইসেলেও আসেনি। স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতার নেতৃত্বে আমাদেরকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম, যুদ্ধ করতে হয়েছে।


আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান ও ভারত সৃষ্টি হয়েছিল। পাকিস্তানের দু'টি খণ্ড ছিল। একটি পূর্ব-পাকিস্তান, আরেকটি পশ্চিম পাকিস্তান। শুরু থেকেই পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষ নির্যাতন, নিপীড়ন বঞ্চণার স্বীকার হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ গঠন করেছিলেন। এর আগে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি সেই সময়েই বুঝতে পেরেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান বাঙালির জন্য নয়; কারণ তখন পাকিস্তানের ৫৬ ভাগ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। উর্দু ছিল মাত্র ৭ ভাগ। অথচ জিন্নাহ উর্দুকেই রাষ্ট্র ভাষা করার ঘোষণা দেন। তখনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল এই পাকিস্তান আমাদের জন্য নয়।


হানিফ বলন, ভাষার জন্য আন্দোলন করে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধু প্রথম গ্রেফতার হয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বারবার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলের স্বীকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনও ভীত হননি। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে তিনি কেবিনেটের সদস্য হন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সরকারে থেকে বাঙালির অধিকার আদায় সম্ভব হচ্ছে না। তাই তিনি পদত্যাগ করেন।


তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু '৬৬ ছয় দফা ঘোষণা করেন। এই ছয় দফাতেই আমাদের স্বাধীনতার সোপান ছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পেরেছিল তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। যার জন্য তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু ততদিনে ঘুমন্ত বাঙালি জেগে উঠেছিল। যার কারণে তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৫৯ সালে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তির পর ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাকে ‌‌‌বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেছিল।


হানিফ বলেন, জাতির পিতা ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। ১৯ মিনিটের সেই ভাষণে তিনি পাকিস্তানিদের অত্যাচার, নিপীড়ন তুলে ধরেছিলেন। এর পাশাপাশি আমাদের কি করণীয় তাও বলে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন,‌ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এসব মূলত ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা।


তিনি আরো বলেন, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিরা নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে আগে থেকে রেকর্ড করা স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআর ওয়ারল্যাসে প্রচার করলেন। তাকে গ্রেফতার করা হলো। ২৬ মার্চ দুপুর দেড়টার সময় পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান ইয়াহিয়া বেতার ভাষণে বললেন, শেখ মুজিব বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিনা শাস্তিতে পার পেতে দেয়া যাবে না। বিশ্বের বড় বড় গণমাধ্যম বুলেটিন প্রচার করে- বাঙালি নেতা শেখ মুজিব স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেছেন।


জিয়াউর রহমান কখনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না- এমন দাবি করে হানিফ বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি। সিলেটে আমি বহু সভা-সমাবেশে গিয়ে বহুবার জানতে চেয়েছি- জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। কিন্তু কেউ বলতে পারেনি জিয়া সরাসরি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। ইতিহাসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না সরাসরি যুদ্ধ করেছে। এরকম নজির নেই।


তিনি বলেন, তবে একটা নজির আছে। পাকিস্তানের ব্রিগেড কমান্ডার আসলাম বেগের একটা চিঠি জিয়াউর রহমানে কাছে গিয়েছিল। মে মাসের ২৯ তারিখে চিঠিতে আসলাম বেগ জিয়াকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন, আমার তোমার কাজে খুশি। তোমার স্ত্রী-সন্তান ভালো অবস্থায়া আছে। তুমি চালিয়ে যাও।


জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় দখল করে জয় বাংলা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ নিয়ে আসলেন। দালাল আইন করে রাজাকারদের মুক্ত করে দিলেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলেন। তখনই প্রমাণ হলো পাকিস্তানের ব্রিগেড কমান্ডার তার কাজে কেন খুশি ছিল। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছিল- বলেন তিনি।


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সমালোচনা করে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল বলেন, মিথ্যা মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা তো আপনারা দেখিয়েছিলেন। গাড়ি পোড়াবেন আর মামলা হলে বলবেন মিথ্যা মামলা, এটাতো হবে না।


বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিল এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। আর তারা এখন মায়াকান্না করে। অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে যে পাপ করেছেন তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।


তারেক রহমান কোন রাজনৈতিক নেতা নয় উল্লেখ করে হানিফ বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে বসে হুমকি দেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় দখলের স্বপ্ন দেখেন। আপনি তো রাজনৈতিক নেতা নয়। সন্ত্রাসীদের নেতা হিসেবে বিবেচিত। প্রতিপক্ষতকে হত্যা করে যে ক্ষমতা দখল করতে চায় সে কখনো রাজনৈতিক নেতা হতে পারে না।


তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল। সরকার কী কচুপাতার পানি যে ধাক্কা দিলে টলমল করে পড়ে যাবে। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া দল। শেখ হাসিনার সরকারকে পতন ঘটাতে পারে এদেশে এমন কোন শক্তি নেই। ক্ষমতার পরিবর্তন চাইলে নির্বাচনের মাধ্যমে চেষ্টা করতে হবে।


আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ্। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। এছাড়া কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতাসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com