শিরোনাম
স্রোতস্বিনী এক প্রাকৃতিক ‘দুগ্ধধারা’ কলাবাগান জলপ্রপাত
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০১৯, ১৭:০৫
স্রোতস্বিনী এক প্রাকৃতিক ‘দুগ্ধধারা’ কলাবাগান জলপ্রপাত
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলাধীন ঝর্ণাধারাটি স্থানীয়ভাবে ‘কলাবাগান ঝর্ণা’। এটিকে দেশের ‘দীর্ঘতম ঝর্ণাধারা’ বললেও বোধহয় অতিরঞ্জিত হবে না। যেটি এখনো অনেকটাই অনাবিষ্কৃত-অপরিচিত। রূপসী এই জলপ্রপাতটি চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহামড়কের ঘাগড়া অঞ্চলের কলাবাগানে অবস্থিত।


এখানে কেবল একটি ঝর্ণা নয়, সারিবদ্ধভাবে ছোটবড় অন্তত ৮-১০ টি ঝর্ণাধারা রয়েছে। যার মধ্যে ৪-৫ টি বড় বড় ঝর্ণাধারা। প্রথম ঝর্ণা থেকে সর্বশেষ ঝর্ণার দূরত্ব হবে অন্তত দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার পাহাড়ি বন্ধুর অথচ ‘মসৃণ’ পথ। এত দীর্ঘ পথজুড়ে এবং এতগুলো ঝর্ণাধারা দেশের আর কোথাও আছে বলে অন্তত আমার মনে হয় না।


রাঙামাটি সড়কের ঘাগড়া সেনাবাহিনী ক্যাম্প থেকে ৩-৪ কিলোমিটার এগিয়ে কলাবাগান এলাকা। চাকমা অধ্যুষিত এলাকাটিতে বড়জোর শ’খানেক লোকের বসবাস। তবে অন্যান্য পাহাড়ি ঝর্ণাধারার মতো এখানকার পথঘাট অতটা দুর্গম নয়। মূল সড়ক থেকে হাতের বামে প্রবাহমান একটি ছোট্ট পাহাড়ি ছড়া পেরিয়ে মাত্র পাঁচ মিনিট হেঁটেই যাওয়া যাবে ঝর্ণা তলায়।


সেই ছড়ার উপর ছড়িয়ে-ছিঁটিয়ে থাকা অংসখ্য পাথরকুচির উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে এগিয়ে যেতে হয় মূল ঝর্ণার দিকে। চলার পথে অসংখ্য ছোট ছোট ঝর্ণা পর্যটকদের নজর কাড়তে শুরু করবে। মাত্র পনেরো মিনিট হেঁটে এগোলেই দৃষ্টিনন্দন প্রথম ঝর্ণাটি স্বাগত জানাবে ভ্রমণ পিপাসুদের। এরপর হালকা পিছলা অথচ মসৃণ পথ বেয়ে উপরের দিকে উঠতে গিয়ে যে কারো মাথায় দুষ্টুমি ভর করবে।


মনে হবে- এইতো সুযোগ মাছের মত স্বচ্ছ পানিতে জলরঙ্গ খেলার! কেউ কেউ আবার এক কাঠি সরেষ। যেন তপ্ত দুপুরে কাঠফাটা রোদে পোড়া দস্যি ছেলের দল পুকুরে নাইতে নেমেছে। শীতল পানিতে গা এলিয়ে দিয়ে পাথরের পিঠে ইচ্ছেমত শরীরটাকে ঘষে নিয়েও এখানে সুখ পাওয়া যায়।


আরেকটু সামনে গেলে আরো উঁচুতে অপর ঝর্ণাটি পর্যটকদের ক্লান্তি দূর করে বিমোহিত করবে। কখনো ইস্পাত-কঠিন পাথরের দেয়াল দেখে মনে হবে মহাস্থানগড়ের পোড়াবাড়ি কিংবা কোন টেরাকোটা স্থাপত্য, কখনোবা উপর থেকে নিচের ক্ষতবিক্ষত পাথরখণ্ড দেখে আলুটিলার গুহা মনে হবে, শেষ বিকেলে ঝর্ণাধারায় যখন সূর্যের আলো পড়বে তখনকার সূর্যসঙ্গম আপনাকে দারুণ সুখতৃপ্তি দেবে।


এভাবে একেকটা ঝর্ণাধারা পেরিয়ে একের পর এক যত উঁচুতে উঠবেন ততই আপনি মুগ্ধ হতে থাকবেন। উপর থেকে নিচের দিকে তাকালে মনে হবে আপনি ছোটখাটো এভারেস্ট জয় করে ফেলেছেন। সবশেষ আকাশচুম্বী যে ঝর্ণাটি রয়েছে তার উচ্চতা এত বেশি যে কোন পর্যটক তার কাছে ঘেঁষতে ভয় পেয়ে যাবেন। তবে জলপ্রপাতের সুধা পান করতে এসে ভড়কে না গিয়ে ঝুঁকি নিয়েও অনেক সেলফিবাজরা সাহসিকতার পরিচয়ও দিচ্ছেন।


মনোরম এই প্রাকৃতিক ঝর্ণাগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমতল থেকে স্তরে স্তরে অন্তত দেড় থেকে দুইশ ফুট উঁচু থেকে পানি ঝড়ে পড়ছে। প্রতিটি ঝর্ণারই রয়েছে একেবারে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। যা স্বচক্ষে না দেখলে কারো বিশ্বাস হবে না। কলাবাগানের ঝর্ণাধারার পানি এতবেশি পরিষ্কার ও স্বচ্ছ যে ঝর্ণার উপরিতল থেকে ইচ্ছেমত হাত-পা ছেড়ে দিয়ে ৫০-৬০ ফুট নিচে অবলীলায় নেমে যাওয়া যায়। পা পিছলে পড়ে যাওয়ার কিংবা পাথরকুচির সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার লেশমাত্র সম্ভাবনা এখানে নেই।


তবে সাবধানের তো আর মার নেই! এখানকার পানি স্বচ্ছতা দেখে অনেক পর্যটক একে ‘দুধ’ বলে অভিহিত করছেন। তারা নিজেদের মিনারেল ওয়াটারের বোতলের পানি ফেলে দিয়ে ঝর্ণাধারার দুগ্ধরূপী পানি পান করছে। এমনকি অনেকে সাথে করে ওই দুগ্ধরূপী পানি নিয়েও যাচ্ছে।


অপার সম্ভাবনাময় প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া অপরূপ এই সৌন্দর্য্যের সমারোহ উপভোগ করতে ইদানীং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে নির্জন কলাবাগান। বিশেষ করে শুক্রবার বিকেলে দারুণ জমজমাট হয়ে পড়ে চাকমা অধ্যুষিত এই এলাকাটি। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকিই এখানকার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। এখানে পর্যটকদের জন্য নেই কোন হোটেল-রেস্টুরেন্ট কিংবা বিশ্রামের জন্য রেস্ট হাউজ। উপজাতিদের কিছু উশৃঙ্খল যুবক মদ্যপ অবস্থায় প্রায়শ বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করার পাশাপাশি চুরি-ছিনতাইয়ের ঝুঁকিতেও আতঙ্কিত থাকেন পর্যটকরা।


প্রকৃতি এখানে যতই উদারতা দেখাক না কেন, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে না এলে পাহাড়েই কেঁদে মরতে হতে পারে দেশের দীর্ঘতম (সম্ভবত!) প্রাকৃতিক ঝর্ণাধারাটির। খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন এখানে হবে না। প্রথমত পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য একটি পুলিশ ফাঁড়ি এবং ঝর্ণা এলাকায় কিছু নিরাপত্তাকর্মী। এরপর মাত্র আধা-কিলোমিটারের মতো একটা যাতায়তের ছোট্ট রাস্তা।


পর্যটকদের দাবি, দারুণ দৃষ্টিনন্দন এই প্রাকৃতিক ঝর্ণারাশিকে পর্যটন সুবিধার আওতায় আনতে পারলে কলাবাগান ঝর্ণা হয়ে উঠতে পারে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সবচাইতে আকর্ষণীয় পর্যটন বিজ্ঞাপন।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com