
বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, অধ্যাপক ড. এম শমশের আলী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শোকবার্তায় বলা হয়েছে, আজ (রোববার) বাদ জোহর ধানমণ্ডির ৭ নম্বর রোডের বায়তুল আমান মসজিদে জানাজা হবে। এরপর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে। তার মৃত্যুতে আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
১৯৪০ সালের ৯ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারায় শমশের আলীর জন্ম। বাবার চাকরির কারণে শৈশবে কিছুদিন কেটেছে ভারতের চব্বিশ পরগনায়। দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে সপরিবারে ফিরে আসেন যশোরে। পরে যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং রাজশাহী কলেজ থেকে এইএসসি পাস করে শমশের আলী ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পদার্থবিজ্ঞানে ১৯৫৯ সালে অনার্স এবং ১৯৬০ সালে মাস্টার্স করেন।
১৯৬১ সালে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে শমশের আলীর কর্মজীবন শুরু। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যান যুক্তরাজ্যে। ১৯৬৫ সালে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে থিওরেটিক্যাল নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পিএইচডি করেন।
ওই বছর দেশে ফিরে তিনি ঢাকায় আণবিক শক্তি কেন্দ্রে যোগ দেন সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে। ১৯৭০ সালে আণবিক শক্তি কমিশনের পরিচালকের দায়িত্ব পান। সেই দায়িত্বে ছিলেন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত।
পরে ১৯৮২ সালে অধ্যাপক হিসেবে নিজের পুরোনো শিক্ষায়তন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন শমশের আলী। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব নেন। সেই দায়িত্ব শেষে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরেন তিনি।
২০০২ সালে বেসরকারি সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সময়ও তিনি উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন।
২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক শমশের আলী। তিনি বাংলা একাডেমির একজন ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সদস্য এবং আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির সদস্য ছিলেন।
বিজ্ঞানের পাশাপাশি সাহিত্য এবং সুফি দর্শনে গভীর আগ্রহ ছিল শমশের আলীর। তিনি জালালুদ্দিন রুমিসহ ইসলামিক দর্শন, বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান নিয়ে লিখেছেন। বিজ্ঞান শিক্ষা, ধর্ম, সাহিত্য, দর্শন নিয়ে বিটিভিতে অনুষ্ঠান করেছেন।
তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘পবিত্র কোরআনে বৈজ্ঞানিক ইঙ্গিত’, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলিম অবদান’, ‘আলাদিনস রিয়েল ল্যাম্প : সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’।
বিজ্ঞান সাধনায় ভূমিকার জন্য মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক, খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ স্বর্ণপদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হরিপ্রসন্ন রায় স্বর্ণপদক, জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]