
সামাজিক ব্যবসার রূপান্তর ক্ষমতা ও স্থায়ী ইতিবাচক পরিবর্তনে শক্তিশালী সক্ষমতার উপর জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা সকলের জন্য একটি ‘সুন্দর ও উন্নত বিশ্ব’ তৈরি করতে পারি। সামাজিক ব্যবসা বর্তমান অন্ধকার থেকে মুক্ত করে অর্থপূর্ণ রূপান্তর ঘটাতে পারে।
তিনি বলেন, ‘...বিশ্বের অন্ধকার চিত্র, যা আমাদের কোনো দোষ ছাড়াই কিছু লোক আমাদের জন্য এই অন্ধকার তৈরি করেছেন। এই অন্ধকার পৃথিবী তৈরির জন্য আমরা দায়ী নই। আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরি করতে চাই এবং আমরা তা করতে পারি।’
নোবেল বিজয়ী বলেন, সামাজিক ব্যবসা কেবল একটি দেশে নয়, বরং সমগ্র বিশ্ব এবং সমগ্র সভ্যতায় পরিবর্তন আনতে পারে। ‘আমরা এটি করতে পারি। আসুন এটি বাস্তবায়ন করি।’
শুক্রবার (২৭ জুন) ঢাকার সাভারে ১৫তম সামাজিক ব্যবসা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এবং মূল বক্তা হিসেবে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
তাৎপর্যপূর্ণ ও আবেগঘন মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস সকলকে মনে করিয়ে দেন যে, বিশ্ব ভুল পথে চলছে। কেবল স্বার্থপরতা ত্যাগ করে, চিন্তা এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমেই তারা একটি ন্যায্য ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।
তিনি ‘স্বাস্থ্যসেবাকে মানবাধিকার হিসেবে’ তুলে ধরেন। তিনি ‘চাকরিপ্রার্থীদের নয়, উদ্যোক্তাদের’ অনুপ্রাণিত করে—এমন শিক্ষার পরিকল্পনা করার আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনশীলদের ছোট করে শুরু করার, বড় স্বপ্ন দেখার এবং তিন শূন্যের —শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নির্গমনের একটি বিশ্ব গড়ে তুলেতে একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান এই অর্থনীতিবিদ।
‘সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় সামাজিক ব্যবসা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ইউনূস সেন্টার ও গ্রামীণ গ্রুপের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী ১৫তম সামাজিক ব্যবসা দিবস সাভারের জিরাবোতে সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ভারত, পাকিস্তান, ইউক্রেন, ইরান, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের যুদ্ধেল কারণে চলতি বছরে বিশ্ব যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে তার কথা তুলে ধরেন অধ্যাপক ইউনূস। বলেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখতে চাই। আমরা স্বপ্ন ত্যাগ করি না। আমরা নিজেদের জন্য একটি নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই। মানুষ আসলে এটাই—স্বপ্নের পিছনে ছুটতে। তাই, আমরা স্বপ্নের পিছনে ছুটতে থাকি। কল্পনা—এই স্বপ্নের মূল কথা আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি।’
অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্যের দিকে আলোকপাত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো স্বাস্থ্যসেবা সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘কোনো দেশই এই সমস্যাটি সফলভাবে সমাধান করতে পারেনি—সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা। সুতরাং, এটি একটি চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্র, যা আমাদের মোকাবিলা করতে হবে এবং আমরা মোকাবিলা করতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, তারা যা দেওয়ার চেষ্টা করছে—তা হলো বিশ্বকে পরিবর্তন করার একটি বার্তা এবং তাদের প্রতিটি জাতির অংশগ্রহণ, প্রতিটি জাতির এত বছরর ধরে উত্থাপিত সমস্যাগুলোর সমাধান করা উচিৎ।
ড. ইউনূস বলেন, ‘বার্তাটি খুবই সহজ—যা আমরা বারবার পুনরাবৃত্তি করে আসছি। বার্তাটি হলো আমরা ভুল পথে আছি। যদি আপনারা এই পথ অনুসরণ করতে থাকেন—তাহলে সকলেই বিশাল বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। আমরা এ থেকে বাঁচতে পারব না।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ভিন্ন পথ অনুসরণ করার খুব সহজ উপায় আছে এবং এটি এমন কিছু নয়, যা তাদের রাতারাতি সবকিছু ধ্বংস করে দিতে হবে। ‘আপনারা কেবল ধীরে ধীরে ভিন্ন দিকে এগিয়ে যান। এটুকুই—খুব সম্ভব এবং খুব সুনির্দিষ্ট কিছু,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার সমগ্র বিশ্বকে মনোযোগী করার চেষ্টা করছি—তা মানুষের স্বার্থপরতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। মানুষ নিজেকে স্বার্থপর প্রাণী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। আমরা এটিরই আপত্তি জানাচ্ছি। আমরা বলি স্বার্থপরতা আমাদের মধ্যে খুব বেশি আছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে নিঃস্বার্থতার অস্তিত্বও ভুলে যাবেন না।’
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]