
মিয়ানমারের রাখাইনে বিমান হামলা ও ভারী গোলা বিস্ফোরণে কাঁপছে টেকনাফ সীমান্ত। এতে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোর থেকে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে শোনা যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত টানা বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, শনিবার ভোর ৪টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপেছে টেকনাফ। ওই সময় মিয়ানমারের আকাশে বিমান দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, মংডু শহর নিয়ন্ত্রণে নেয়া আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে বিমান থেকে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ ও শাহপরীর দ্বীপ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, সীমান্তের ওপার থেকে আসা বিকট বিস্ফোরণের শব্দে টেকনাফের লোকজন আতঙ্কে আছে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, ‘মংডু শহরের দক্ষিণ পাশের গ্রামগুলো থেকে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। মর্টারশেল, শক্তিশালী গ্রেনেড ও বোমার শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফের বসতবাড়িগুলো। সীমান্তের কোনো মানুষ রাতে ঘুমাতেও পারছে না। শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। মংডু এলাকায় যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে দেখেছেন বাসিন্দারা।’
সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, মংডু শহরের দক্ষিণে উকিলপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সিকদারপাড়া, হারিপাড়া ও ফাতংজা এলাকা ঘিরে তীব্র লড়াই চলছে। প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, যেখানে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর পক্ষে আকাশযোগে হামলা চলছে। অপরদিকে স্থলে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি স্বশস্ত্র গোষ্ঠীও।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের নয়াপাড়ার বাসিন্দা মো. ইসলাম বলেন, বিস্ফোরণের শব্দে বাড়িঘর কাঁপছে। অনেকে শীতের রাতে ঘরের বাইরে থাকছেন।
টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা মো. আলমগীর আকাশ জানান, মিয়ানমারের চলমান যুদ্ধে আরাকান আর্মি গত ১০ মাসে রাখাইনের অধিকাংশ সেনা ক্যাম্প ও বিজিপির সীমান্ত চৌকি দখল করে নেন। এখন এসব দখলের পরে আরাকান আর্মি রাখাইনের মংডু শহর পুরোপুরি দখল নিতে হামলা চালাচ্ছেন। অপরদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীও শহরটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাল্টা বিমান হামলা ও ভারী গোলাবর্ষণ করছেন। শুক্রবার মধ্যরাতেও যুদ্ধ বিমানের শব্দ শোনা গেছে।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ চলতেছে। ওই যুদ্ধে বিকট শব্দের পাশাপাশি টেকনাফ সীমান্তে ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। এতে আমিও ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
সীমান্তে বাসিন্দাদের তথ্য মতে রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী এখন আকাশ যোগে হামলা করছে। আরাকান আর্মিও মংডু শহর পুরোপুরি দখল করতে পাল্টা হামলা করছেন।
ইউএনও আরও বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশকারী যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারির পাশাপাশি টহল জোরদার রাখা হয়েছে।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]