আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে সমন্বয়ক হাসনাত-সারজিসের দুই রিটের বেঞ্চ বদল
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৪
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে সমন্বয়ক হাসনাত-সারজিসের দুই রিটের বেঞ্চ বদল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম বিভিন্ন অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগসহ দেশের ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি বিগত তিনটি নির্বাচন অবৈধ ঘোষণার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে দুটি পৃথক রিট দায়ের করেছিলেন। তবে রিট দুটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও শেষ পর্যন্ত আবেদন দুটি শুনতে অপারগতা প্রকাশ করেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ। পরবর্তীতে জেষ্ঠ্য বিচারপতিদের সমন্বয়ে গঠিত অন্য একটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় রিট দুটি অন্তর্ভুক্ত হয়।


২৯ অক্টোবর, মঙ্গলবার হাইকোর্টের পরিবর্তিত বেঞ্চে রিট দুটি শুনানি হওয়ার কথা।


রিট আবেদনের পর সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের ভেরিফায়েড পেজে হাসনাত ও সারজিস বিষয়টি নিয়ে পোস্ট দেন, যেখানে তারা লিখেন, ‌‘২টি রিট করেছি। ১. আওয়ামী লীগের বিগত তিনটি নির্বাচনকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধভাবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো কেন ফিরিয়ে দেবে না সে বিষয়ে। এ ছাড়া দ্বিতীয় রিট, এই মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেন তাদেরকে পলিটিক্যাল সকল একটিভিটি থেকে বিরত রাখা হবে না, সে বিষয়ে।’


ওইদিন বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলা দুটি যথাক্রমে ২৮৩ ও ২৮৪ নম্বর ক্রমিকে ছিল। তবে শুনানির জন্য নির্ধারিত থাকলেও এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ।


এদিন রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজ বিন ইউসুফ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন হানিফ।


ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায়, মামলা দুটির ক্রমিক ও বাদী-বিবাদীর নামের সামনের ঘরে ‘আউট’ লেখা রয়েছে। যেটি মূলত ‘আউট অব লিস্ট’ বা কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়াকে বুঝানো হয়ে থাকে।


হাসনাত-সারজিসের রিট দুটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজ বিন ইউসুফ জানান, মামলা দুটির শুনানি না করে আদালত কার্যতালিকা থেকে বাদ দিতে অনুরোধ করেছেন। আদালত রিটকারীদের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেছেন, রিট দুটিতে অনেক সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-বিষয় উঠে এসেছে। যেহেতু অনেক সাংবিধানিক বিষয় জড়িত তাই আবেদন দুটি এখতিয়ারাধীন সিনিয়র বেঞ্চ (হাইকোর্টের) আছে, সেখানে শুনানি করলে ভালো হয়।


আদালতের বক্তব্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন রিটকারী আইনজীবী। পরে মামলাটি বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।


সুপ্রিম কোর্টের কজ লিস্ট থেকে পাওয়া তথ্য মতে, আবেদন দুটি বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) শুনানির জন্য কার্যতালিকার ২০৮ ও ২০৯ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বলেন, আদালত কোনও মামলা না শুনতে চাইলে তার অপারগতা প্রকাশের সুযোগ রয়েছে। যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রিট দুটিতে রয়েছে সেহেতু জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সমন্বয়ে গঠিত কোনও হাইকোর্ট বেঞ্চে এর শুনানি হতে পারে।


দায়ের করা রিট দুটিতে হাইকোর্টের কাছে পৃথক পৃথক আরজি চাওয়া হয়েছে। প্রথম রিটে নিষিদ্ধ চাওয়া হয়েছে ১১টি দলকে। সে দলগুলো হলো- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় পার্টি (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), সাম্যবাদী দল (দীলিপ বড়ুয়া) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ।


দলগুলোর বিরুদ্ধে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসসহ বেশকিছু অভিযোগ যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ফলে তারা যেন পরবর্তী রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা ও নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে বিষয়ে রিটে রুল এবং নির্দেশনা জারির আবেদন জানানো হয়েছে।


দ্বিতীয় রিট আবেদনে বিগত তিনটি নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও ওই নির্বাচনগুলোতে যারা সংসদ সদস্য হয়ে বেতন-ভাতাসহ যেসব সুবিধা ভোগ করেছেন তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।


আওয়ামী লীগসহ ১১টি দল নিষিদ্ধে সারজিস ও হাসনাতের রিট দুটি দায়েরের বিষয়ে হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয় প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারকে।


সেখানে তিনি জানান, সরকার এখনও এসব বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। সরকার শুধু ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং জানানো হয়েছে। আর কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের এই মুহূর্তে কোনও সিদ্ধান্ত নেই বলেও জানান তিনি।


বিবার্তা/এনএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com