সংকটেও অবহেলিত জ্বালানি, গুরুত্ব বিদ্যুৎখাতে
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৪, ২২:১১
সংকটেও অবহেলিত জ্বালানি, গুরুত্ব বিদ্যুৎখাতে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। যেখানে বিদ্যুৎ খাতে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে জ্বালানির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতের চেয়ে জ্বালানির বরাদ্দ ২৭ শতাংশ কম।


২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ করা হয় ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে ৪ হাজার ৫০২ কোটি টাকা কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।


২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বাজেটের ১৩.২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হলেও- এবার এখাতে ১১.৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।


৬ জুন, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদন হয় এবং পরে ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।


চলতি অর্থ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। সেই হিসেবে আগামী অর্থবছরে এ খাতে মোট ৪ হাজার ৫০২ কোটি টাকা কম বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ২৮ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা করা হয়।


২০২৩-২৪ অর্থবছরে জ্বালানি বিভাগের বরাদ্দ রাখা হয় ৯১১ কোটি টাকা। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। বিপরীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুতে বরাদ্দ রাখা হয় ৩৩ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ সালে বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।


বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ইতিমধ্যে শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াটে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস হতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন ও ব্যবহার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।


জ্বালানিখাতে অগ্রগতির কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আমাদের গ্যাসের উৎপাদন ছিল দৈনিক ১৭৪ কোটি ঘনফুট, যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় ২১০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি দৈনিক প্রায় ১১০ কোটি ঘনফুট আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।


বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৪ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে অনশোর এলাকায় তেল বা গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য ৪৮টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভার করার পরিকল্পনা রয়েছে।


সামুদ্রিক খনিজ ও অন্যান্য সম্পদের আহরণ এবং এর সুষ্ঠু ব্যবহারের গুরুত্ব বিবেচনায় সুনীল অর্থনীতি খাতে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।


এদিকে দেশজুড়ে গ্যাস সংকট সমাধানে জ্বালানি খাতে বড় বরাদ্দের প্রত্যাশা করেছিলেন শিল্পোদ্যোক্তা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞারা। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের মতোই কম বরাদ্দ পেয়েছে এ খাত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জ্বালানি বিভাগের বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা।


দেশে কয়েক বছর ধরে জ্বালানি সংকট চলছে। দেশীয় গ্যাস উৎপাদন কমতে থাকায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। এবারের বাজেট প্রস্তাবেও এলএনজি আমদানির সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আমদানির ঝোঁক কমিয়ে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে জ্বালানি খাতে এবার ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও বিদায়ী অর্থবছরে ৯৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকায়।


জ্বালানি সংকটের মধ্যেও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ কমার সমালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দেওয়া দরকার। সরকার একাধিক প্রকল্প নেওয়ার কথা বলেছে। আগে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে টাকা নিয়ে গ্যাস অনুসন্ধান করা হতো। এলএনজি আমদানিতে খরচ করে এখন সেই তহবিল অনেকটা ফাঁকা। তাই জ্বালানি খাতে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি খাতের সংকটের মূল কারণ আমদানি নির্ভরতা। কারণ, কয়লার প্রায় পুরোটা, গ্যাসের এক তৃতীয়াংশ জ্বালানি তেলের প্রায় সবটুকু আমদানি করা হয়। এই নির্ভরতা কমাতে হলে দেশীয় জ্বালানির উপর গুরুত্ব দিতে হবে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com