তৃতীয় ধাপে ৮৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ আজ
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৪, ০০:৫৫
তৃতীয় ধাপে ৮৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ আজ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ৮৭ উপজেলায় ভোটের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘূর্ণিঝড় রেমালের বিপদ কেটে যাওয়ায় ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।


২৯ মে, বুধবার সকাল ৮টায় দেশের ৮৭ উপজেলায় ভোট শুরু হয়ে চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত।এর মধ্যে ১৬টি উপজেলায় ইভিএমে এবং বাকিগুলোতে প্রচলিত ব্যালট পেপারে ভোট হবে।


নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, তৃতীয় ধাপের উপজেলাগুলোয় সাধারণ নির্বাচনের জন্য ইসি ও মাঠ পর্যায়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে অনেক নির্বাচনী এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের প্লাবিত হয়েছে, বেড়ি বাঁধ ভেঙেছে, কোথাও গাছ ভেঙে পড়েছে। কোথাও সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এজন্যে কিছু উপজেলায় আপাতত ভোট স্থগিত করা হয়েছে।


তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীর মৃত্যু, মামলা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার একক প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়া এবং রেমালের দুর্যোগ কিছু বিবেচনায় নিয়ে ২৫টি উপজেলার ভোট বাদ দিয়ে এ ধাপে বুধবার নির্বাচন হবে ৮৭টি উপজেলায়।


ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানিয়েছেন, ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার নির্বাচন সামগ্রীর সঙ্গে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে ৪১৪ কেন্দ্রে। আর ভোটের দিন বুধবার সকালে ৭ হাজার ৩৬ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে যাবে।


উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। অন্যদিকে বিএনপির অল্প কিছু নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়লেও, দলটি উপজেলা পরিষদের ভোট বর্জন করেছে।


তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা হয়েছিল ১১২ উপজেলার। কিন্তু প্রার্থী মৃত্যু, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রার্থী নির্বাচিত, মামলার কারণে ভোট স্থগিত এবং রেমালের কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন থাকায় সব মিলিয়ে ২৫টি নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বুধবার ভোট হবে ৮৭ উপজেলায়। এই ধাপে মোট ১ হাজার ১৫২ জন প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৯৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৫৬ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৯৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ধাপে চেয়ারম্যান পদে ১ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৪ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন; অর্থাৎ মোট ১২ জন প্রার্থী ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় তিনটি পদেই একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে ১টি উপজেলায় ভোট করার প্রয়োজন পড়ছে না। প্রার্থীর মৃত্যু ও মামলা জনিত কারণে স্থগিত ২টি- নরসিংদীর রায়পুরা ও যশোর সদর। রেমালে স্থগিত ২২ উপজেলাগুলো হল- শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মংলা, কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ, দুমকী, মঠবাড়িয়া, তজুমদ্দিন, লালমোহন, রাজাপুর, কাঠালিয়া, বামনা, পাথরঘাটা, বাঘাইছড়ি, কচুয়া, ফরিদগঞ্জ ও খালিয়াজুরী।


ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ থেকে ১৯ জন সদস্য মোতায়েন থাকঝেন। বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা) সাধারণ কেন্দ্রে ১৯জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ থেকে ২১ জন সদস্য মোতায়েন করা হবে।


ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানিয়েছেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবিধার্থে উচ্চ পর্যায়ের একটি মনিটরিং সেল থাকবে নির্বাচন কমিশনে। এই সেলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থার প্রতিনিধিদেরও রাখা হয়।


নির্বাচন উপলক্ষে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করতে ও সুসংহতকরণের লক্ষ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী সেলও গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে শুরু থেকেই তাগিদ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।


ইসি ইতোমধ্যে চারজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে। তলব করা হয়েছে একজন মন্ত্রী এবং একজন সংসদ সদস্যকে। এবং অনেক প্রার্থীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রথম দুই ধাপের ভোটে সিংহভাগ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাই জিতেছেন। এছাড়া বিএনপির বহিষ্কৃতসহ অন্তত ১০ জন বিভিন্ন দলের প্রার্থী জিতেছেন। এই ধাপে ৮৭ উপজেলার মধ্যে ১৬টিতে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে। ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কেন্দ্রে যাওয়ার পর ভোটার নম্বরের ভিত্তিতে ভোটকক্ষ খুঁজে নিতে হবে ভোটারদের। লাইনে দাঁড়িয়ে নির্ধারিত কক্ষে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে পৌঁছানোর পর যাচাই করা হবে ভোটারের পরিচয়।


কয়েকটি উপায়ে ভোটারের পরিচয় শনাক্ত করেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার। এগুলোর মধ্যে আছে, স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে; দশ ডিজিটের স্মার্ট কার্ডের নম্বর; ১৭ ডিজিটের লেমিনেটেড এনআইডির নম্বর; ১২ ডিজিটের ভোটার নম্বর এবং আঙুলের ছাপ শনাক্ত করে।


এর যে কোনো একটি পদ্ধতিতে তালিকায় ভোটারের নাম শনাক্ত করার পর মেলানো হবে তার আঙুলের ছাপ। ছাপ মিললে ভোটারের ছবি ও ভোট তথ্য সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সামনে একটি মনিটরে ভেসে উঠবে। প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ও ভোটার তা দেখতে পাবেন।


কন্ট্রোল ইউনিট থেকে আঙুলের ছাপ মিললে একজন পোলিং অফিসার ভোটার তালিকায় ভোটারের নামের পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে রাখবেন। আরেকজন পোলিং অফিসার ভোটারের আঙুলে লাগিয়ে দেবেন ভোটের অমোচনীয় কালি। এরপর সেই ভোটারকে ইভিএমে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।


কোনো কারণে আঙুলের ছাপ না মিললেও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বিধি মেনে মোট ভোটারের সর্বোচ্চ ১ শতাংশকে ভোটার হিসেবে শনাক্ত করে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করতে পারবেন।


উপজেলা নির্বাচনে তিনটি পদে পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক দেখে ডান দিকের বোতামে চাপ দিয়ে সিলেক্ট করতে হবে এবং সবুজ রংয়ের CONFIRM বোতাম চেপে ভোট সম্পন্ন করতে হবে। এরমধ্যে প্রথম ধাপে ২২ এবং দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি উপজেলায় ইভিএমে ভোট হয়েছে। আর চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইভিএমে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। দেশের মোট ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫ উপজেলায় চার ধাপে ভোট হচ্ছে এবার। প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায় ভোট হয়েছে গত ৮ মে। এসব উপজেলায় গড়ে প্রায় ৩৬% ভোট পড়ে। প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৮ জন নির্বাচিত হন। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ভোট পড়ে ৩৮%। দ্বিতীয় ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা পার হয়েছেন ২২ জন। আর তৃতীয় ধাপে ১২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপের ভোট রয়েছে।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com