
ঘূর্ণিঝড় রেমাল রাত ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে আঘাত হানতে পারে দেশের উপকূলে। এ দুর্যোগ মোকাবিলায় মোকাবিলায় আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
২৬ মে, রবিবার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে রিমাল মোকাবিলার প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের অনুমান রব্বীবার রাত ৯টা থেকে রাত ১২টার মধ্যে এটি আঘাত হানবে। আমাদের প্রতিটি নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। কোস্টগার্ড গত তিনদিন ধরে উপকূলের ৫৭টি স্থানে মাইকিং করছে। একইসঙ্গে সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ বোটের সঙ্গে কিছু রিলিফও তারা যোগাড় করে রেখেছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তীতে এই রিলিফ তাদের প্রয়োজন হতে পারে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে উপকূল পেরিয়ে আমাদের লোকালয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আঘাত হানবে। এ দুর্যোগে যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয় ও জনসাধারণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কম হয় সে লক্ষ্যে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি সভা করেছি। এ সভায় আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী- বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস এমনকি আইজি (প্রিজন্স) এখানে ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সচিব (সুরক্ষা), অতিরিক্ত সচিবসহ (জননিরাপত্তা) যাদের প্রয়োজন ছিল তারা সবাই সভায় উপস্থিত ছিলেন। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাও এখানে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবার কথাবার্তা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৯৯৯ সেল চালু করেছি। যেকোনো অভিযোগ বা প্রয়োজন পেলেই এই ৯৯৯ এ কল দিয়ে সেবা নেয়া যাবে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তীতে এই রিলিফ তাদের প্রয়োজন হতে পারে বলে প্রস্তুতি তারা নিয়ে রেখেছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের নৌ-পুলিশ ও জেলা পুলিশ কাজ করছে। লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে তারা কাজ করছে। বাংলাদেশ আনসার এবং গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গত চারদিন যাবত ১০ হাজার সদস্যকে ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন ও পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য সেখানে অবস্থান করছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিজিবি ও র্যাব আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় বিজিবির ছোট-ছোট বিওপি সুরক্ষার জন্যও ব্যবস্থা নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পরে যদি সেখানে কিছু ধ্বংস হয় সেটা এবং রিলিফ কার্যক্রমের জন্য র্যাব সেখানে প্রস্তুত রয়েছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছেন তাদের নিরাপত্তার জন্য এখনই পুলিশ এবং র্যাব সেসব জায়গায় অবস্থান নিয়েছে।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনগুলা সুরক্ষিত। সেখানেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যেখানেই প্রয়োজন হবে সেখানেই এসব এলাকার লোকজনকে আশ্রয় দিতে প্রস্তুত থাকবে। উপকূলীয় এলাকা ও দেশব্যাপী ফায়ার সার্ভিস এই কাজগুলো করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি প্রচুর বৃষ্টি হতে পারে। প্রচুর বৃষ্টি হলে পার্বত্য এলাকায় ভূমিধস হতে পারে। সেই ক্ষতি প্রতিরোধেও আমাদের ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুত রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জে হঠাৎ করে বন্যা এসে কারাগারের ভেতরে দুই থেকে তিনফুট পানি ঢুকে গিয়েছিল। সেজন্য উপকূলীয় কারাগারগুলোয় যাতে এধরনের পরিস্থিতি না হয় সে জন্য আইজি (প্রিজন) সেসব প্রস্তুতি নিয়েছেন। উপকূলীয় এলাকার কারাগারে বন্দীদের অন্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া বা তাদের খাদ্য সামগ্রীর যাতে কোনো ঘাটতি না হয় সেগুলোরও তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন। এবং সেগুলো তাদের ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসছেন। আমাদের উপকূলীয় এলাকায় সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য ভি-সেট নেটের মাধ্যমে কোস্ট গার্ড লাইভ মনিটরিং করে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস পুরো উপকূলীয় এলাকায় তিনটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ করেছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য পাঁচ হাজার কর্মী প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনগুলা সুরক্ষিত। সেখানেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যেখানেই প্রয়োজন হবে সেখানেই এসব এলাকার লোকজনকে আশ্রয় দিতে প্রস্তুত থাকবে। উপকূলীয় এলাকা ও দেশব্যাপী ফায়ার সার্ভিস এই কাজগুলো করবে। আমরা আশংকা করছি প্রচুর বৃষ্টি হতে পারে। প্রচুর বৃষ্টি হলে পার্বত্য এলাকায় ভূমিধস হতে পারে। সেই ক্ষতি প্রতিরোধেও আমাদের ফায়ার সার্ভিস ও সেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুত রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যদি ঘটে তারা তাৎক্ষণিক যাতে ব্যবস্থা নিতে পারে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে রাস্তাঘাট ও স্থাপনা মেরামত এবং অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট জনবল ও সেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুত, যাতে তাৎক্ষণিক আমরা একটা ব্যবস্থা নিতে পারি। আমাদের সবাই সেজন্য প্রস্তুত আছে। ঘূর্ণিঝড়কালীন কিংবা পরবর্তী সময় লুটপাটের ঘটনা এড়াতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা প্রস্তুত আছে বলেও জানান এ মন্ত্রী।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]