নৌপথে মিলবে ভারতের অন অ্যারাইভাল ভিসা
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪, ২২:৫০
নৌপথে মিলবে ভারতের অন অ্যারাইভাল ভিসা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

নৌপথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত সহজ হতে যাচ্ছে। চালু হবে অন অ্যারাইভাল ভিসা। দুই দেশের অমীমাংসিত দূরত্ব কমিয়ে আনতে খুলছে অন অ্যারাইভাল ভিসার দুয়ার। তবে স্থলপথে নয়, আপাতত নৌপথে এই প্রক্রিয়া চালু হবে। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের মাঝামাঝি অর্থাৎ আসছে জুনে এটি চালু হতে পারে। ফলে দেশের মানুষের পুঞ্জীভূত দুঃখের অবসান ঘটবে। দুদেশের নাগরিকরা এর সুফল পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের।


দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের নাগরিকরা ভারতে যেতে অন অ্যারাইভাল ভিসার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করা হয়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও বিষয়টিতে ইতিবাচক সাড়া দেয়। গত বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের নৌসচিব পর্যায়ে বৈঠকে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে উভয়পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছায়। অবশেষে নৌপথে অন অ্যারাইভাল ভিসা চালু করতে ভারত সরকার সম্মতি দিয়েছে।


সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষে এটি চালু হতে পারে। অন অ্যারাইভাল ভিসা চালু হলে বাংলাদেশের মানুষের যাতায়াতের নবদিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শুধু বাংলাদেশ নয়, দুই দেশের নাগরিকরাই এর সুফল পাবেন- এমনটাই প্রত্যাশা সরকারের নীতিনির্ধারকদের। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে পর্যটন খাতে সুবিধা আদায় এবং পোর্ট অব কল অন্তর্ভুক্তি ইস্যুতে চলছে দেনদরবার। এ দুটি বিষয়ে যৌক্তিক দাবিনামায় একমত হতে ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। গঠিত হয়েছে বিভিন্ন কমিটি। শিগগিরই দুই দেশ নিজেদের স্বার্থ সমুন্নত রেখে ধারাবাহিক সভার মাধ্যমে চুক্তি বা সমঝোতায় পৌঁছবেন বলে কমিটির সদস্যরা আশাপ্রকাশ করছেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


এর আগে ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের নৌসচিব পর্যায়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছার পর এ জট খোলে। এছাড়া দুদেশের পর্যটন খাতের সুবিধা আদায় এবং পোর্ট অব কল অন্তর্ভুক্তি ইস্যুতেও চলছে দেনদরবার। এ দুটি বিষয়ে যৌক্তিক দাবিতে একমত হতে এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে। গঠিত হয়েছে বেশির ভাগ কমিটি। শিগগিরই দুদেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে চুক্তি বা সমঝোতায় পৌঁছাতে শুরু হবে কমিটির ধারাবাহিক সভা।


নৌ মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত নৌপথে যোগাযোগ, বাণিজ্য ও পর্যটক বৃদ্ধির জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা এবং প্রটোকল রুট বৃদ্ধিসহ একাধিক বিষয়ে সম্মত হয় সচিব পর্যায়ের সভা। এ ছাড়া সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন আরো সহজ করার জন্য দুই দেশের বিভিন্ন বন্দর ‘পোর্ট অব কল’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব ছিল। তবে নৌ বাণিজ্য সহজ করার নিমিত্তি অন অ্যারাইভাল ভিসা ইস্যুটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ।


এই ভিসায় সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। কারণ বিদেশে পৌঁছানোর পর ভিসা হাতে পাবেন। এক্ষেত্রে যাত্রার আগে ভিসা করতে হয় না। এটি ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ করে; যা ভ্রমণ হয় আরো দ্রুত এবং সুবিধাজনক। সব দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হয় না। এ পর্যন্ত নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপসহ বেশ কয়েকটি দেশে এ সুযোগ পেয়ে থাকেন দেশের নাগরিকরা। পার্শ্ববর্তী দেশে পর্যটন কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে বেশি ভ্রমণ করলেও অন অ্যারাইভাল ভিসা চালু করার বিষয়ে বরাবরই অনাগ্রহ ছিল ভারতের। সর্বশেষ নৌপথে বাণিজ্যিকীকরণ সহজ করার স্বার্থে অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালুর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায় বন্ধুপ্রতিম দেশটির পক্ষ থেকে। এ নিয়ে নৌ মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের লাভক্ষতি যাচাই সম্পন্ন করে শিগগির প্রস্তাবটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সংশোধিত ভ্রমণ ব্যবস্থা (আরটিএ) সংশোধনের কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন ভারতের সঙ্গে কনস্যুলার মিটিং করা এবং আরটিএ সংশোধন করার মাধ্যমে অন অ্যারাইভাল ভিসা প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। নৌ মন্ত্রণালয় আশা করছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অন অ্যারাইভাল ভিসা প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত রূপ পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে নৌপথে যাত্রী চলাচলে সুবিধা আরও সম্প্রসারিত হবে।


নৌ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নৌপথে ভ্রমণকারী বাংলাদেশি পর্যটক, যাত্রী ও ক্রুদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হবে। দুদেশের মধ্যে উপকূলীয় ও প্রটোকল রুটে যাত্রী ও ক্রুজ পরিষেবা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের আওতায় এ পর্যন্ত ৯টি সমুদ্রযাত্রা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি ভারতীয় জাহাজ এবং দুটি বাংলাদেশি জাহাজ। বাংলাদেশ-ভারতের পর্যটন খাতে সাম্প্রতিক উন্নয়নের কারণে অনেক বাংলাদেশি পর্যটক ভারত ভ্রমণ এবং নদী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটররাও ঢাকা থেকে কলকাতা নিয়মিত ক্রুজ পরিচালনা করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটররাও ঢাকা থেকে কলকাতা নিয়মিত ক্রুজ পরিচালনা করতে চায়। এটি চালু হলে দুই দেশের মধ্যে নৌপথে যাত্রী এবং ক্রুজ পর্যটক ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই নৌপথে ভ্রমণকারীর জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করে অন অ্যারাইভাল ভিসা চালুতে সম্মত হয় উভয় দেশ। দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির পর্যায়ে রয়েছে।


সম্প্রতি নৌ-সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের ২১টি ও ভারতের ১১টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে একাধিক বিষয়ে সম্মত হন উভয় দেশের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি দুই দেশের নৌ-প্রটোকল রুট সচল করা এবং পর্যবেক্ষণের জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত কমিটি গঠন করার পরপরই সকল কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।


এ বিষয়ে কমিটির অন্যতম সদস্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, নৌপথে বাংলাদেশ হয়ে ভারত এবং ভারত থেকে এখানে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে অন অ্যারাইভাল ভিসা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এটি মূল স্টেকহোল্ডার দুদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা সেটি খতিয়ে দেখেছে। উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আমরা আশা করছি, সব প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের মধ্যে নৌপথে চলাচল করা যাত্রীরা এর সুফল পেতে পারেন।


প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তির অনুসরণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি) ১৯৭২ সালের ১ নভেম্বর স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যমান পিআইডব্লিউটিটি ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরের পর থেকে নবায়নের ভিত্তিতে অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাঁচটি (আপডাউন হিসেবে দশটি) নৌরুট বিদ্যমান রয়েছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com