বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাই ছিল আমাদের সমস্ত শক্তির ভিত্তি
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪, ১৯:০৯
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাই ছিল আমাদের সমস্ত শক্তির ভিত্তি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, যিনি এসপি মাহবুব নামে পরিচিত। জন্ম ১৯৪৫ সালে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।


১৯৭১ সালে ঝিনাইদহ মহকুমার মহকুমা পুলিশ প্রশাসক ছিলেন মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন সশস্ত্র সংগ্রামে। ১৭ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।


বীরবিক্রম মাহবুব উদ্দিন আহমদ বিবার্তা২৪ডটনেটের সাথে আলাপচারিতায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেছেন, স্মৃতিচারণ করেছেন একাত্তরের উত্তাল দিনের। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আলাপচারিতায় তার বক্তব্যের অংশটুকু তুলে ধরা হলো।


বিবার্তা: ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের কথা জানতে চাই?


বীরবিক্রম মাহবুব উদ্দিন আহমদ: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দেশের জন্য আমাদের জাতির জন্য স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, তার সংগ্রামের সঙ্গেই সবকিছু সংশ্লিষ্ট।


সাতচল্লিশ থেকে যদি শুরু করি, বায়ান্ন'র ভাষা আন্দোলন থেকে পুরো জীবন জুড়েই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। বাঙালি জাতির দুর্দশা ও দুরাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তাঁর সারাজীবনের শ্রম-সাধনা ব্যয় করেছেন।


'৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি জেল থেকে মুক্তি পান এবং বঙ্গবন্ধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। '৭০ এর নির্বাচনের পর তিনি বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে কথা বলার আইনগত অধিকার পান। তিনি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়েই সরকার গঠন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা হতে দেওয়া হয়নি। বরং, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী রাতের আঁধারে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জাতির পিতা।


বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গিয়েছিলেন ২৬ মার্চ, স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে- সেই স্বাধীনতা বাস্তবিক আইনগত ভিত্তি পেল ১৭ এপ্রিল। সরকার গঠন- সেখান থেকেই ১৭ এপ্রিলের গুরুত্ব।


বিবার্তা: বঙ্গবন্ধুর আহ্বানই মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি ছিল, আপনার মতামত জানতে চাই।


বীরবিক্রম মাহবুব উদ্দিন আহমদ: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলন করেছেন। এরপর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ দেশের জনগণ পাকিস্তানি হানাদারের গুলি খেয়েছে তারপরও বুক পেতে দিয়েছে, পিছপা হয়নি।


২৫ মার্চ রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে জাতি হিসেবে আমাদের ধ্বংস করে দিতে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল। এর বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন বাজি রেখে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। আর এটাই ছিল আমাদের সমস্ত শক্তির ভিত্তি। ২৬ মার্চের উপর ভিত্তি করে আইনগতভাবে ১৭ এপ্রিলের প্রয়োজনীয়তা হয়েছিল।


বিবার্তা: ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছিলেন আপনি। সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, ছিলেন পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি। সে সম্পর্কে বলুন।


বীরবিক্রম মাহবুব উদ্দিন আহমদ: ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা দেন এবং তিনি আহ্বান জানান ততদিন পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে যতদিন পর্যন্ত শেষ শত্রুটি থাকবে।


এই যে রাষ্ট্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দিয়েছিলেন এই কারণে তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন। সেই কারণে পরবর্তীকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে ঘোষণাপত্র হয়েছিল সেখানে কিন্তু বলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু যতদিন পর্যন্ত পাকিস্তান কারাগারে থাকবেন বা যেকোনো কারণে তিনি দেশে ফিরে এসেও যদি তার কর্তব্য পালনে অপারগ হন, ততদিন পর্যন্ত তাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে।


২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়ে গেল, কিন্তু সরকার গঠনের আগেই তিনি গ্রেফতার হন। তিনি তার সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান এমনকি এদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মীরজাফর খন্দকার মোশতাক আহমেদ- সকলকেই কিন্তু বলে গিয়েছিলেন আমি যদি নাও থাকি, তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।


বিবার্তা: ২৬ মার্চের পর আপনি কোথায় ছিলেন?


বীরবিক্রম মাহবুব উদ্দিন আহমদ: ১ এপ্রিল ভোরে যশোর সেনানিবাস থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল ঝিনাইদহে রওনা হয়। বিষয়খালীতে ইপিআর, পুলিশ ও ছাত্রজনতা পাকিস্তানি সেই বাহিনীকে বাধা দেয়। সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানিরা পিছু হটে যায়, ওই যুদ্ধে আমি সক্রিয় ছিলাম।


২৬ মার্চের পর চারদিনের মধ্যে তাজউদ্দীন আহমদ, ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম ভারতে চলে গেলেন। তারা ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করেন। দেশের মানুষের কথা জানান, খাবার প্রয়োজন, আশ্রয় প্রয়োজন সেসব বলেন। ইন্দিরা গান্ধী বলেন, যতক্ষণ তোমরা সরকার হিসেবে চুক্তি না করছ, ততক্ষণ আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না। সেই সময়ই তড়িঘড়ি করে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়।


বিবার্তা: বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার দীর্ঘদিনের যে সংগ্রাম, সেটি কী বাস্তবায়িত হয়েছে?


বীরবিক্রম মাহবুব উদ্দিন আহমদ: আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে আমরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আর যাই হোক, বঙ্গবন্ধুর কন্যার রক্ত বঙ্গবন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না।


মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি যারা তাদের এই দেশে রাজনীতি করা উচিত না। তারা এই দেশের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করে না। এই দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মুক্তিযুদ্ধ জড়িয়ে আছে। সেখানে যদি এখনো কেউ পাকিস্তানের কথা বলে, তাহলে সেই লোকের তো পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত।


বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমি এমন কোনো জায়গা খুঁজে পাই না যেখানে বঙ্গবন্ধু তার সিদ্ধান্ত দিয়ে যাননি। সাড়ে তিন বছরে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের সবগুলো জায়গা স্পর্শ করে গেছেন। তিনি যদি আরো সময় পেতেন তাহলে দেশ অনেক আগেই আজকের অবস্থানে থাকত। তারপরও বলতে হয়, আমরা ভাগ্যবান- বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল।


বিবার্তা/অলক/এসবি/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com