
ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে জলদস্যুরা বন্ধ করে দিয়েছে স্যাটেলাইট ফোনের যোগাযোগ ব্যবস্থাও। জাহাজটি এখন আর ট্র্যাকিংও করা যাচ্ছে না। জলদস্যুদের নির্ধারিত এলাকায় পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হবে অন্তত ৪৫০ নটিক্যাল মাইল থেকে ৫০০ নটিক্যাল মাইল।
অন্তত দেড় থেকে দু-দিন সময় লাগবে পৌঁছাতে। এখন শুধু সচল আছে জাহাজের ভেতর অভ্যন্তরীণ ওয়াইফাই ব্যবস্থা। যে কোন মুহূর্তে সেই ব্যবস্থাও অকেজো করে দিতে পারে দস্যুরা।
ইতিমধ্যে ডিজি শিপিংয়ের মাধ্যমে উদ্ধারকারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন উদ্ধারকারী সংস্থার কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
মার্চেন্ট মেরিন অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন মো. সাখাওয়াত হোসেন মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, বড় একটি দল জাহাজে আছে। ৫০ জন জলদস্যুদের এত বড় দল আর কখনো জাহাজ নিয়ন্ত্রণ নিতে কাজ করেনি। ১০ বছর আগে সোমালিয়ার জলদস্যুরা বাংলাদেশি যে জাহাজ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল সেটিতেও জলদস্যুদের ২০/২৫ জনের ছোট দল ছিল। কিন্তু এবার বড় একটি দল নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জাহাজের।
তিনি বলেন, দস্যুরা ২৩ নাবিকের সবার মোবাইল ফোনসহ যোগাযোগের সব মাধ্যম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানতে পেরেছি শুধু জাহাজের অভ্যন্তরীণ ওয়াই ফাই ব্যবস্থা সচল আছে। এটি যদি দস্যুরা জানতে পারে তবে তাদের মধ্যে অবিশ্বাস দেখা দেবে। আর অবিশ্বাস দেখা দিলে যে কোন কিছু তারা করতে পারে।
কবে যোগাযোগ স্থাপন হতে পারে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, দস্যুদের নির্ধারিত স্থানে জাহাজটি নিয়ে যাচ্ছে। যে গতিতে যাচ্ছে তাতে জাহাজটি তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে অন্তত ২ থেকে ৩ দিন লাগবে। এরপর আরো কয়েকদিন গেলে তারা যোগাযোগ করতে পারে মুক্তিপণের জন্য। এর আগ পর্যন্ত কোন ধরনের তথ্য পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে বিভিন্নভাবে নাবিকদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি দু’একদিনের মধ্যে হয়ত কোন তথ্য পাব।
এদিকে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর নাবিকরা বিভিন্নভাবে মার্চেন্ট মেরিন অফিসারদের সাথে মেসেজ দিয়ে যোগাযোগ করেছে। অনেকে ফেসবুকে আক্রান্ত হওয়ার তথ্যও জানিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন। জলদস্যুরা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর পরই এক নাবিক দ্রুত বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতার কাছে মেসেজ দেন।
এতে লেখা ছিল, ‘এমভি আবদুল্লাহ পাইরেটস অ্যাটাক অন সোমালিয়া, প্লিজ হেল্প আস। দে হ্যাভ গান। উই আর অ্যাটাকড।’
এই বার্তার পরই মূলত জলদস্যুদের কবলে পড়ার বিষয়টি প্রকাশ হয়। মার্চেন্ট মেরিন কর্মকর্তারা জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের কর্মকর্তাদের কাছে দ্রুত বিষয়টি অবহিত করেন। এরপর পরই জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে কবির গ্রুপের কর্মকর্তাদের কথা হয়।
নাবিকরা তাদের জানান, তাদের কেবিনে আটকে রাখা হয়েছে। জলদস্যুরা পুরো জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে জাহাজের নাবিক আসিফুর রহমান ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেন,‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে আমরা আক্রমণের শিকার। আমরা সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছি। আমাদের প্রার্থনায় রাখুন।’
এদিন বিকেল পাঁচটায় জাহাজটির আরেক কর্মকর্তা ফেসবুক পোস্ট দেন। কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান ফেসবুক পোস্ট দেন বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে। এতে তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ দুশ্চিন্তা কোরো না।
এদিকে জিম্মি নাবিক ক্রুদের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- এমভি আবদুল্লাহর মাস্টার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের রাশেদ মোহাম্মদ আব্দুর, চিফ অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের খান মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ, সেকেন্ড অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের চৌধুরী মাজহারুল ইসলাম, থার্ড অফিসার হিসেবে আছেন ফরিদপুরের ইসলাম মো. তারেকুল, ডেক ক্যাডেট হিসেবে আছেন টাঙ্গাইলের হোসাইন মো. সাব্বির, চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন নওগাঁর শাহিদুজ্জামান এ এস এম, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন খুলনার ইসলাম মো. তৌফিকুল, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন নেত্রকোনার উদ্দিন মো. রোকন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের আহমেদ তানভীর, ইঞ্জিন ক্যাডেট হিসেবে আছেন লক্ষ্মীপুরের থান আইয়ুব, ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে আছেন উল্লাহ ইব্রাহিম খলিল, এবিল সি-ম্যান (নাবিক) হিসেবে আছেন নোয়াখালীর হক মোহাম্মদ আনোয়ারুল, চট্টগ্রামের রহমান মো. আসিফুর, চট্টগ্রামের হোসাইন মো. সাজ্জাদ, অর্ডিনারি সি-ম্যান (সাধারণ নাবিক) হিসেবে আছেন নাটোরের মোহাম্মদ জয়, সিরাজগঞ্জের হক মো. নাজমুল, ওয়লার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের হক আইনুল, চট্টগ্রামের শামসুদ্দিন মোহাম্মদ, বরিশালের হোসাইন মো. আলী, ফায়ারম্যান হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের শাকিল মোশাররফ হোসেন, চিফ কুক হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের ইসলাম মো. শফিকুল, জেনারেল স্টুয়ার্ড হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের উদ্দিন মোহাম্মদ নূর এবং ফাইটার হিসেবে আছেন নোয়াখালীর আহমেদ মোহাম্মদ সালেহ।
বিবার্তা/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]