বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড
‘কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মনে হচ্ছে অন্ধকার যুগে বাস করছি’
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪, ১৭:৫৭
‘কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মনে হচ্ছে অন্ধকার যুগে বাস করছি’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

একে পর এক অগ্নিদুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুকে অন্ধকার যুগের সাথে তুলনা করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন জীবন দিয়েছিল। তারপর কী হয়েছিল? টনক কী নড়েছিল? নড়েনি। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর একে পর এক অগ্নিদুর্ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে আমরা এখনো অন্ধকার যুগে বসবাস করছি।


১ মার্চ, শুক্রবার বিকেল ৪টায় বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।


তিনি বলেন, নিমতলীতে ১২৪ জন মারা যাওয়ার পরে কি হয়েছে? কিছুই হয়নি। নিমতলীর পর চুড়িহাট্টার ঘটনা ঘটেছে, আবার বানানীতে আগুনে ৪৮ জন মারা যায়। এভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। বৃহস্পতিবার বেইলি রোডে ৪৬ জন মারা গেছে। এ মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে শুনেছি আমি।


জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এতগুলো মানুষ মারা গেছে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না। আমরা বার বার একই ঘটনা দেখতে পাচ্ছি, এরপর কিছুদিন এ ঘটনার উত্তপ্ত থাকে তারপর আবার আগের মতই হয়ে যায়।


তিনি আরো বলেন, সাততলা ভবনের একটি মাত্র সিঁড়ি, কোনো ফায়ার এক্সিটও নেই। একমাত্র সিঁড়িটিও আবার গ্যাস সিলিন্ডারে পরিপূর্ণ ছিল। ভয়ঙ্কর ব্যাপার! এরকম একটা অবস্থায় আপনি কিভাবে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা করবেন। এসব ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অবশ্যই দায় আছে। বিশেষ করে সেখানে ফাস্ট সেফটি নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব ছিল।


কামাল উদ্দিন বলেন, এতগুলো মানুষ এখানে মারা গেছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না। আমরা বার বার একই ঘটনা দেখতে পাচ্ছি। ঘটনা ঘটার পর পরিস্থিতি কিছুদিন উত্তপ্ত থাকে, তারপর আবার আগের মতোই হয়ে যায়।


মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, গত বছরের ৪ জুন আমরা একটি জাতীয় সেমিনার করি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে। সেখানে আমরা নিমতলীর ঘটনা, চুরিহাট্টার ঘটনা, বঙ্গবাজারের ঘটনা, নিউমার্কেটের ঘটনাসহ সব বড় বড় অগ্নিকাণ্ড নিয়ে পর্যালোচনা করি। সেখানে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করি। কিন্তু সেসব সুপারিশের আলোকে আজ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।


তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি এখানে রেস্টুরেন্টে পার্টি হচ্ছিল। কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ২০ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দেয়া হয়েছিল। সে কারণে মানুষের সংখ্যাও ছিল অনেক বেশি। কিন্তু তারা আর জীবন নিয়ে ফিরতে পারলেন না।


জাতীয়ভাবেই আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা কেউ এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সচেতন হচ্ছি না। কর্তৃপক্ষকে এখন বাধ্য করতে হবে ফায়ার সেফটি নিশ্চিত করতে।


সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, এখানে অবশ্যই অসচেতনতা ছিল, অবহেলা ছিল। এত বড় একটি বাণিজ্যিক ভবনে ফায়ার এক্সিট থাকবে না? আর এটা না থাকার কারণে মানুষ পাগলের মতো ছুটাছুটি করেও বের হতে পারেনি।


কর্তৃপক্ষের অবহেলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে কামাল উদ্দিন বলেন, দেখুন, এখনও পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউন সরেনি। কাদের দায়িত্ব এটা সরানোর? ফায়ার সার্ভিস সরানোর জন্য একের পর এক নোটিশ করবে আর এগুলো সরবে না- এটা তো হতে পারে না।


এই মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতকিছুর পরও যদি কর্তৃপক্ষের টনক না নড়ে তাহলে তো আর কিছু বলার নেই।


উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, আসলে কি টনক নড়েছে? নিমতলীতে ১২৪ জন মারা যাওয়ার পরে কি হয়েছে? কিছুই হয়নি। নিমতলীর পর চুড়িহাট্টাসহ রাজধানীর কয়েকটি স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে।


তিনি আরো বলেন, এরকম ঘটনা ঘটতে থাকা মানে হলো আমরা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে বসবাস করছি। এই অগ্নিকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের আলোর দিকে এগিয়ে যেতে হবে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com