জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবস আজ
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:৫১
জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবস আজ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলা সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রাঙ্গনের অন্যতম নাম জহির রায়হান। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক হওয়ার পাশাপাশি তিনি কথাসাহিত্যিক এবং গল্পকার হিসেবে অবদান রেখে গেছেন সাহিত্য অঙ্গনে।


৩০ জানুয়ারি, বুধবার চলচ্চিত্র পরিচালক, সাংবাদিক, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার জহির রায়হানের ৫২তম অন্তর্ধান দিবস। ১৯৭২ সালের এ দিনে ঢাকার মিরপুর থেকে নিখোঁজ হন তিনি।


দিবসটি উপলক্ষ্যে পারিবারিকভাবে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে জহির রায়হানের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা, প্রামাণ্যচিত্র ও তার নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী।


বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের তদন্তে ১৯৭২ সালে জহির রায়হানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটির কার্যক্রম চলাকালেই অজ্ঞাত সূত্রের খবর পেয়ে ওই বছরের ৩০ জানুয়ারি মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ভাই শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মৃতদেহ মিরপুরের বধ্যভূমিতে খুঁজতে যান জহির রায়হান। তবে এরপর আর ঘরে ফিরেননি এই প্রখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার। মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের হাতে মিরপুরে তিনি শহীদ হন বলে পরে জানা যায়। তবে তার মৃতদেহটিও পাওয়া যায়নি।


তবে ৩৭ বছরের ছোট্ট জীবদ্দশায় তিনি উপহার দিয়ে গেছেন অসাধারণ সব রচনা। ১৯৬১ সালে ‘কখনও আসেনি’ চলচ্চিত্রের মুক্তিলাভের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার।


মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ও সৈয়দা সুফিয়া খাতুন দম্পতির সন্তান জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ।


জহির রায়হান ১৯৪০ সালে কলকাতা মডেল স্কুলে ভর্তি হন। তার বাবা তখন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। মডেল স্কুলে তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেইন) থেকে সপ্তম শ্রেণী পাস করে আলিয়া মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্শিয়ান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বাবার সঙ্গে মজুপুরে চলে আসেন। স্থানীয় আমিরাবাদ হাইস্কুল থেকে ১৯৫০ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। ঢাকা কলেজে পড়াশোনার সময় তিনি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর এক বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়ে বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৫৮ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে অনার্স পাস করেন। এরপর এমএ’তে ভর্তি হন।


মুক্তিযুদ্ধের কিছুকাল আগে তার নির্মিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে প্রতিকী কাহিনির মাধ্যমে তখনকার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার ও নিপিড়নকে তুলে ধরা হয়। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে জনগণকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি।


এছাড়াও বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার উপর নির্মাণ করেন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ যা আজও প্রশংসনীয়। তার অসাধারণ সব রচনার জন্য তিনি জীবনের বিভিন্ন সময় আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, নিগার পুরস্কার, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক সহ আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।


এছাড়াও ‘কখনো আসেনি’, ‘সোনার কাজল’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘বাহানা’, ‘বেহুলা’, ‘আনোয়ারা’, ‘সঙ্গম’ প্রভৃতি তার কালজয়ী চলচ্চিত্র। তার রচিত উপন্যাসের মধ্যে ‘হাজার বছর ধরে’, ‘আরেক ফাল্‌গুন’, ‘বরফ গলা নদী’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘আর কত দিন’, ‘কয়েকটি মৃত্যু’, ‘তৃষ্ণা’ উল্লেখযোগ্য। ‘সূর্য গ্রহণ’ তার সুপরিচিত গল্পগ্রন্থ।


সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন জহির রায়হান। উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি হলো— আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৪, হাজার বছর ধরে), নিগার (কাঁচের দেয়াল, শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭১, সাহিত্য : মরণোত্তর, ১৯৭২ সালে ঘোষিত), একুশে পদক (১৯৭৭, চলচ্চিত্র : মরণোত্তর) ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯২, সাহিত্য : মরণোত্তর)।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com