২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি গুজবের শিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: রিউমর স্ক্যানার
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:০২
২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি গুজবের শিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: রিউমর স্ক্যানার
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সাল জুড়ে রাজনীতির ময়দানে এক উত্তাল সময় দেখেছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি গুজব রটেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।


আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানটি ভুল তথ্য শনাক্ত নিয়ে বার্ষিক হিসাবে এ তথ্য তুলে ধরেছে।


রিউমর স্ক্যানার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত বছর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে শুধু শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ১২১টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁকে জড়িয়ে ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে ৩১টি। ৩০টি ভুল তথ্যের শিকার হয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


রাজনীতিতে গুজবের প্রচারণা প্রতিপক্ষকে দমিয়ে দেয়ার এক পুরোনো কৌশল। সেই কৌশল কাজে লাগিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বরাবরই গুজবের প্রচলন ছিল তৃতীয় বিশ্বের এই দেশটিতে। তবে সময়ের সাথে এই প্রচলন যেন মহামারির রূপ নিচ্ছে। ২০২২ সালে যেখানে রাজনৈতিক বিষয়ে মাত্র ৯২টি গুজব প্রচারের প্রমাণ পেয়েছিল রিউমর স্ক্যানার, ঠিক পরের বছর সে সংখ্যাটা সাড়ে ছয় গুণ বেড়ে ৫৯৭ তে গিয়ে ঠেকলো!


রিউমর স্ক্যানার তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ছড়িয়ে পড়া ৫৯৭টি ভুল তথ্যের মধ্যে ৩২০টিই ছিল সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রিক। অর্থাৎ, রাজনৈতিক ভুল তথ্যের মোট সংখ্যার ৫৪ শতাংশই নির্বাচন কেন্দ্রিক ছিল।


রাজনৈতিক বিষয়ের বাইরে ২০২৩ এ আন্তর্জাতিক বিষয়ে ৩৫৯টি, খেলার বিষয়ে ২২৩টি, জাতীয় বিষয়ে ১৭১টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১৪২টি, শিক্ষা বিষয়ে ১০৭টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ৭৯টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ৬৫টি, আর্থিক প্রতারণা বিষয়ে ৫৫টি, স্বাস্থ্য বিষয়ে ২৯টি এবং অন্যান্য বিষয়ে ৮৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।


যারা ছিলেন রাজনৈতিক গুজবের টার্গেট


রিউমর স্ক্যানার টিম ২০২৩ সালে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়ানো ভুল তথ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, এ সময়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক (১২১টি) ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে, যা মোট রাজনৈতিক ভুল তথ্যের ২০ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতি তিনদিনে তিনি গড়ে একটি করে গুজবের শিকার হয়েছেন।


এই তালিকায় পরের অবস্থানে পাওয়া যাচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম, তার বিষয়ে ৩১টি গুজব প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। পরের অবস্থানেও বিএনপির আরেকজন রয়েছেন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার বিষয়ে ৩০টি গুজব প্রচার করা হয়েছে। এই তালিকায় পরের অবস্থানগুলোতে যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসিপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী রুমিন ফারহানা এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।


এর বাইরে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে জড়িয়ে ১৯টি এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমের বিষয়ে ২০টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে ১২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।


গুজবের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। গেল বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে ৬৪টি এবং বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো ৩৮টি গুজব শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এই বাহিনীগুলোর সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটেই এই গুজবগুলো প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।


গুজবের টার্গেট যখন সংসদ নির্বাচন
বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ বছর পরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে হিসেবে আগামী ০৭ জানুয়ারি (২০২৪) এই নির্বাচন দ্বাদশবারের মতো হতে দেখবে বাংলাদেশের জনগণ। গুজব নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, যেকোনো ইভেন্টভিত্তিক গুজব প্রায় সব দেশেই অন্তত একটি হলেও ছড়ায়। ইভেন্টের ব্যাপকতা বুঝে সে সংখ্যা এবং হার বাড়ে বা কমে। বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম দেখিনি আমরা। নির্বাচন এদেশের রাজনীতির মূল অনুষঙ্গ হয়ে ওঠায় নির্বাচনের আগে ও পরে বরাবরই উত্তাল থাকে দেশের রাজনীতি। গুজবও যেহেতু রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয় সেহেতু নির্বাচন আসলে গুজব প্রচারও বেড়ে যায় কয়েকগুণ।


২০১৮ সালে যখন সর্বশেষ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল এদেশে, সেসময় ফ্যাক্টচেকিংয়ের ধারণাটি একেবারেই নতুন ছিল দেশের মানুষের কাছে। তখন গুজব যাচাইয়ের কার্যক্রমও বেশ সীমিত ছিল। ফলে নির্বাচনের আগে পরে গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে সঠিক তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ খুব একটা ছিল না৷ তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। রিউমর স্ক্যানার টিম গেল বছরের শুরু থেকেই নির্বাচন বিষয়ে ভুল তথ্যের প্রচারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নজরে রেখেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি, জানুয়ারিতেই নির্বাচন কেন্দ্রিক গুজব প্রচার হতে শুরু করে। প্রথম তিন মাসে সংখ্যাটা হাতেগোনা হলেও পরের তিন মাসে এটি বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এ সংক্রান্ত গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা অবশ্য অনুমিতই ছিল। প্রথম তিন মাসে নির্বাচন বিষয়ে গুজবের পরিমাণ ছিল সাতটি। পরের তিন মাসে এটি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩২৯ শতাংশ হারে (৩০টি)। তৃতীয় তিন মাসে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ (৫৭টি) বাড়তে দেখা গেছে।


বছরের শেষ তিন মাস অর্থাৎ চতুর্থ তিন মাসে গিয়ে আগের তিন কোয়ার্টারের মোট সংখ্যাকে পেছনে ফেলেছে নির্বাচনী গুজব। এ সময় ছড়িয়ে পড়েছিল ২২৬টি গুজব, যা তৃতীয় তিন মাসের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৯৬ শতাংশ। তবে আপনি যদি প্রথম তিন মাসের সাথে এই সংখ্যার তুলনা করেন তাহলে অবাক না হয়ে উপায় নেই। প্রথম তিন মাসের তুলনায় শেষ তিন মাসে নির্বাচনী গুজবের ছড়িয়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩১২৯ শতাংশ।


গেল বছর আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশি গণমাধ্যম, রাষ্ট্র, কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং তাদের নেতৃত্বকে জড়িয়ে ভুয়া মন্তব্য বা তথ্য প্রচারের প্রবণতা লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার, সংখ্যার হিসেবে যার পরিমাণ ৪৯টি। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বাতিল সংক্রান্ত ৩৫টি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ৩০টি এবং রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য বিকৃত করে ৩২টি ভুল তথ্য প্রচার করতে দেখা গেছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com