ট্রেনে আগুন নিয়ে যা জানালো যুবদলের সদস্য মনসুর আলম
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:১৯
ট্রেনে আগুন নিয়ে যা জানালো যুবদলের সদস্য মনসুর আলম
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা, যেখানে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় দুই শিশুসহ চারজন। ভোটের ঠিক দুদিন আগে নাশকতার এ ঘটনায় তদন্ত চলছে জোরেশোরে।


এরই মধ্যে অগ্নিসংযোগের এ ঘটনায় বিএনপি ও যুবদলের সম্পৃক্ততার তথ্য নিশ্চিত হয়েছে ডিবি পুলিশ। তাদের তথ্যমতে, ঘটনার আগের রাতেই যুবদলের এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় ট্রেনে আগুন লাগানোর।


বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনামের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি এই মিটিংটি হয়। ১৭ মিনিটের ওই মিটিংয়ে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয় আগুন দেয়ার জন্য। সে অনুযায়ী শুক্রবার রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেয়া হয়।


গ্রেফতারের পর ট্রেনে আগুন দেয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানান মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য মোহাম্মদ মনসুর আলম


ভিডিও জবানবন্দিতে তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত হওয়ার পর একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয় ট্রেনে আগুন দেয়ার জন্য। এরপরে শুক্রবার রাত ৯টা ৫ মিনিটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয়া হয়।


জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, আমরা ভার্চুয়ালি মিটিং করি। মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক, সদস্য সচিবসহ আমাদের যতগুলো টিম আছে তাদের টিম লিডারসহ ভার্চুয়ালি মিটিং করি। সর্বশেষ আমাদের মিটিং হয়েছে গতকাল (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে। আমি মতিঝিলে আমার বড় ভাইয়ের অফিসে ছিলাম, ৬ টার পর যখন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কল আসছে আমি যুক্ত হই মিটিংয়ে। প্রায় ১৭ মিনিটের মতো কথা হয়েছে গ্রুপে। মিটিংয়ে দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম সিদ্ধান্ত হলো ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ করা যাতে ভোটাররা ভয়ে সেখানে না আসেন। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হয় ট্রেনে আগুন দেয়ার। মিটিংয়ে যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন জিজ্ঞাসা করেন ট্রেনে আগুন দিতে পারবে কে? উপস্থিত অন্য কেউ কিছু না বললেও একজন রাজি হন।


এসময় কোরআন শরীফে হাত দিয়ে তিনি তার বাচ্চার কসম কেটে বলেন, আমি সব সত্যি বলছি। আমি কাউকে ফাঁসাইতে চাই না কিংবা মিথ্যা কথা বলছি না। থানা আর ওয়ার্ডভিত্তিক টিমগুলোকে ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া ককটেল ফাটিয়ে আতংক সৃষ্টি করার জন্য বলা হয়েছে যাতে ভোটার না আসে। ট্রেনের বিষয়ে একটা কাজ ছিল, সেটা কে করতে পারবে বলে জিজ্ঞেস করেছিল আমাদের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম। তখন নির্দেশনা ছিল কথা অল্পের মধ্যে শেষ করে দেয়ার জন্য। সদস্য সচিব জানতে চাইল ট্রেনে কে কাজ করতে পারবে?


কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামি ট্রেনকে নরসিংদী কিংবা গাজীপুরের কোথাও ঢাকায় ঢোকার আগে আর নাহলে নারায়ণগঞ্জের রুটে আপ অ্যান্ড ডাউন যেকোনো জায়গায়। মিটিংয়ে অনেকেই ইচ্ছা প্রকাশ করলে সদস্য সচিব নির্দিষ্ট করে দেন কে কাজটি করবে। তিনি বলেন, তার সঙ্গে সোর্স দিয়ে দিবে। তখন তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলবো। এর মধ্যে সবাই গ্রুপ কল থেকে বেরিয়ে গেছে, তারা নিজেরা পার্সোনালি কথা বলছে।


শনিবার (৬ জানুয়ারি) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের পরিকল্পনা হিসেবে বিএনপির নেতারা ভিডিও কনফারেন্স করেন। কনফারেন্সে প্রথমে আসেন মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনাম। এরপর আসেন সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ গাফফার, ইকবাল হোসেন বাবলু, একজন দপ্তর সম্পাদক ও কাজী মনসুর।


যুবদলের এই নেতাকর্মীরা ভিডিও কনফারেন্সে এসে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে বিশেষ করে নরসিংদীর কাছে সুবিধাজনক স্থানে অগ্নিসংযোগ করার কথা বলেন। আরেকটি স্থানও তারা নির্ধারণ করেন। কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ লাইনের আপ-ডাউনে সুবিধাজনক স্থানে। সেখানে যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন লাগিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরিকল্পনা করেন তারা।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com