দিনের সফরের শেষ দিনে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনি এলাকা কোটালিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা করেন।
সভায় পুরানো স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, দেশ ছেড়ে যাওয়ার একেবারেই ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু, তখন কেন যেন যেতে হলো। তারপর ফিরে আসলাম। ফিরে আসাটা কষ্টদায়ক ছিল। কারণ যেদিন এয়ারপোর্ট ছেড়ে যাই কামাল, জামালসহ প্রায় সকলেই ছিল।
সেই ৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এলাম। কাউকে পাইনি। বেঁচে গিয়েছিলাম। এটা হয়তো আল্লাহর ইচ্ছা ছিল। ছিল বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ। সেদিনও ঝড়-বৃষ্টি ছিল। সেদিন ঘোষণা দিয়েছিলাম বাংলাদেশের মানুষই আমার আপনজন, তারাই আমার আত্মীয়। আমি মা-বাবা হারিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসার ছোঁয়া পেয়েছি। আসার পর থেকে আমার চলার পথ খুব মসৃণ ছিল না। যে ঘাতকরা আমার বাবা-মাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো তাদের বিচার হবে না। তাদের বিচার থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে পুরষ্কৃত করা হয়েছে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে।
কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখেন। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, শহীদ উল্লাহ খন্দকার, আয়নাল হোসেন শেখ প্রমুখ।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭১ সালে যারা এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, লুটপাঠ করেছে, নারীদের অত্যাচার করেছে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন।
যে দেশটাকে আমার বাবা সারা জীবন কষ্ট করে স্বাধীন করে দিয়ে গেলেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। সেই মানুষগুলো জন্যতো কিছু করতে হবে। কারণ জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে বিজয় তুলে এনেছেন। সেই বিজয় ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। কোনো এক মেজর ঘোষণা দিল আর দেশ স্বাধীন হয়ে গেল? জয়বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করা হলো, ৭ মার্চের ভাষণও নিষিদ্ধ করা হলো। এমন কি বাংলাদেশের নামটাও পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। পাকিস্তানের একটি প্রদেশের মতো বাংলাদেশকে পরিচালনা করার পরিকল্পনা ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বারবার আমি মৃত্যুকে সামনে দেখিছি। এই কোটালীপাড়াতেও বিশাল বিশাল বোম মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। সরাসরি গুলি এই অবস্থার মধ্য দিয়েও আল্লাহ বারবার আমাকে বাঁচিয়ে রাখলেন।
এরই মধ্য দিয়ে আমরা ৯৬ সালে সরকার গঠন করি। আবার ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি। ২০০৯ থেকে আমরা একটানা সরকারে আছি। অন্তত আজ এইটুকু বলতে পারি বাংলাদেশটা বদলে গেছে। বাংণাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে এখন আর খাদ্যের হাহাকারটা নেই। খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। চিকিৎসা সেবা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। শিক্ষার সুযোগ আমরা সৃষ্টি করেছি। ঠিক যা জাতির পিতা চেয়েছিলেন। একটানা সরকারে থাকতে না পারলে আমাদের উন্নয়ন দৃশ্যমান হতো না।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আবার তারা আন্দোলন করে। সমাজের কিছু অবাধ্য লোকজনের হাতে টাকা দিয়ে আগুন দেয়ায়। যুবদলের নেতা নিজে সরাসরি আগুন দিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। জনগণ কিন্তু সচেতন। তাদের ধরে ধরে পুলিশে দিয়ে দিচ্ছে।
কোটালীপাড়ায় মতবিনিময় শেষে তিনি সড়ক পথে টুঙ্গিপাড়া যান। বিকেলে তিনি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন এবং বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করবেন।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]