নাশকতার পরিকল্পনা: সিটিটিসি’র জালে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর শীর্ষ নেতা
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:০৮
নাশকতার পরিকল্পনা: সিটিটিসি’র জালে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর শীর্ষ নেতা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

হিযবুত তাহরীরের অন্যতম শীর্ষ নেতা তৌহিদুর রহমান ওরফে তৌহিদ ওরফে সিফাতকে (২৯) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) কক্সবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।


ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষায়িত কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও দেশবিরোধী পোস্টার ও বয়ান প্রভৃতি কার্যক্রমে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তাছাড়া অনলাইন সম্মেলনগুলোতে তিনি প্রধান সমন্বয়ক ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রধান বক্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছিলেন।


বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।


এতে সিটিটিসির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তৌহিদ রাজধানীর শনির আখড়া এলাকার শুভেচ্ছা টাওয়ার থাকেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তৌহিদ বলেছেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২০১১ সালে দুজন বন্ধুর মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন এবং ওই সংগঠনে যোগ দেন।


দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে থাকা নিষিদ্ধ এ সংগঠনটি এতদিন পোষ্টারেই সীমাবদ্ধ থাকলেও খোলস ছেড়ে আক্রমণমুখী হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে তারা সদস্য সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ এমনকি অনলাইনে সম্মেলনও করছে। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনলাইন সম্মেলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা তৌহিদ ওরফে সিফাতকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম। বুধবার রাতে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতারের পর নিষিদ্ধ সংগঠনটির বর্তমান পরিকল্পনা জানতে পারেন কর্মকর্তারা।


সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন পর আমরা নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির অন্যতম শীর্ষ সারির নেতাকে গ্রেফতার করতে পেরেছি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর হিযবুত তাহরীরের অনলাইনে যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলো এই সিফাত। ওই সম্মেলন থেকে সরকার উৎখাতের জন্য বক্তব্য প্রদান করা হয়। তারা নাশকতার পরিকল্পনা করছে।


অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত তৌহিদ জানায়, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে এমবিএ শেষ করে বর্তমানে ফ্রিলান্সিং করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২০১১ সালে দুই বন্ধুর মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে এবং এ সংগঠনে যোগদান করে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সে হিজবুত তাহরীর করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে হাজারীবাগ থানার মামলায় সাড়ে চার মাস জেলে ছিল। জামিনে মুক্তি পেয়ে সে পুনরায় হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। ২০১৭ সালে আরও সক্রিয়ভাবে সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে সংগঠনটি অন্যতম শীর্ষস্থান দখল করে। তারা সংগঠনের জন্য তৈরি বিশেষ এ্যাপসের মাধ্যমে অন্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। ফলে বেশির ভাগ সময় তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে পুনরায় সে গ্রেফতার হয়। নয় মাস কারাভোগের পর সে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও আরও হিজবুত তাহরীরের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও দেশ বিরোধী পোস্টারিং, মসজিদে মসজিদে নামাজের পর বয়ান প্রভৃতি কার্যক্রমে সে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে জানা যায়। তাছাড়া অনলাইন সম্মেলনগুলিতে সে প্রধান সমন্বয়ক ও ক্ষেত্র বিশেষে প্রধান বক্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করে।


অনুসন্ধানে জানা যায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযুবত তাহরীর এখন পর্যন্ত তারা কোন নাশকতা চালানোর সুযোগ পায়নি। তবে তারা আল কায়দার আদর্শপুষ্ঠ। জেএমবি, নিউ জেএমবি, আনসার আল ইসলাম, হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ, হিন্দাল শ্বারিকিয়াসহ অন্যান্য সংগঠনগুলো নাশকতায় অংশ নিয়েছে। আনসার আল ইসলাম টার্গেটেড কিলিংও করেছে। হিযবুত তাহরীর বার বার পোষ্টার করে সেখানে রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য এমনকি হুমকিও দিয়েছে। তবে তারা কোন নাশকতায় যেতে পারেনি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয়েছে।


জানা যায়, মাঝে মধ্যেই রাজধানীতে হিযবুত তাহরীর পোষ্টার সাঁটায়। এমনকি মসজিদের সামনে বিভিন্ন সময় লিফলেটও বিতরণ করেছে। তাদের পোষ্টার ও লিফলেটে জিহাদের ডাক থাকতো। গত ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে ও পরে অনলাইন ও অফলাইনে ব্যাপক প্রচার চালায় সংগঠনটি। রাজধানীর বিভিন্নস্থানে তারা পোষ্টারও সাঁটায়।


অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরা, আজমপুর, খিলক্ষেত, এয়ারপোর্ট এলাকায় বর্তমানে হিজবুত তাহরীরের বেশি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এই সকল এলাকায় বিশেষ করে শুক্রবার জুম’আর নামাযের পর হিজবুত তাহরীর কর্মীরা ওই এলাকার বিভিন্ন মসজিদে লিফলেট বিতরণ করে। কখনো তারা নিজেরা আবার কখনো ভাড়া করা লোক দিয়ে এই লিফলেট বিতরণ করে।


সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলেন, হিযবুত তাহরীর ভেতরে ভেতরে শক্তি সঞ্চয় করেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনলাইন সম্মেলনে তাদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে এমনটাই মনে হয়।


তারা জানান, রাজধানীর কয়েকটি স্থানে পোস্টার সাঁটানোর সময় কয়েকজনকে আমরা হাতে নাথে গ্রেফতারও করেছি। কিন্তু তাদের কাটআউট সিস্টেম খুব শক্তিশালী। এক গ্রুপ আরেকগ্রুপকে কেউ চেনেনা। পোস্টার মারার আগে তারা স্থানুগলো রেকি করে নেয়। এরপর সিসিটিভির আওতার বাইরে থাকা স্থানগুলোতে পোস্টার মারে।


এদিকে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিষিদ্ধ সব সংগঠনই গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারীতে থাকে। সেক্ষেত্রে হিযবুত তাহরীর ও জেএমবিও রয়েছে।


তিনি আরও বলেন, এই সংগঠন দুটির কার্যক্রম অমাদের নজরদারীর মধ্যে থাকে। যখনই এরা মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠে তখনই গ্রেফতার হয়।


প্রসঙ্গত, ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাথা চাঁড়া দেয় হিযবুত তাহরীর। পরবর্তীতে সরকার বিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের কারণে ২০০৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। গ্রেফতার করে হিযবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহিউদ্দীন ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজনকে। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি এদের কার্যক্রম। ধনিচারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পোষ্টার লিফলেট ছড়ানো থেকে শুরু করে প্রকাশ্যই মিছিল পর্যন্ত এরা করে থাকে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা তাদের নানা পরিকল্পনা এদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে থাকে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com