এনআইডির তথ্য ফাঁস, নজরদারিতে সব পার্টনার সার্ভিস
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ২০:০৭
এনআইডির তথ্য ফাঁস, নজরদারিতে সব পার্টনার সার্ভিস
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে তথ্য ফাঁসের ঘটনা নজরে এসেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের। তথ্য ফাঁসের ঘটনায় মোবাইল অপারেটরসহ সব পার্টনার সার্ভিসকে নজরদারিতে রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও এনআইডির সিস্টেম ম্যানেজারকে তথ্য ফাঁসের বিষয়টি তদন্ত করার দায়িত্ব দিয়েছে ইসি। যাদের বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসের প্রমাণ মিলবে, তাদের কালো তালিকায় করা হবে অন্তর্ভূক্ত। আর একবার কালো তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত হলে তারা আর বাংলাদেশে কাজ না করতে পারবে না।


৫ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।


মোবাইল নম্বরসহ ডিটেইল তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, এগুলো কীভাবে সম্ভব- এমন প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন কবীর বলেন, ইন্টারনেটের যুগে সবকিছু সম্ভব। নানা জনের কাছে আমাদের নানা তথ্য আছে। সব জায়গা থেকে ডাটা নিয়ে এগুলো করতে পারে। এর-ওর কাছে তথ্য আছে। সব এক জায়গায় জড়ো করা হচ্ছে।


কত জনের তথ্য ফাঁস হয়েছে, জানতে চাইলে এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, আমাদের এখান থেকে তো যায়নি। আমরা তো বলতে পারব না।


১৭৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেউ কি করেছে?- এমন প্রশ্নের উত্তরে হুমায়ুন বলেন, আমাদের এখান থেকে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে দুই সিস্টেম ম্যানেজারকে নিয়ে। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিলে বলতে পারব। কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে এমন কিছু বলা হয়নি। যতদিনে সম্ভব তারা দেবে। অফিসিয়াল ইনকোয়ারি, তবে অফিস অর্ডার হবে এত সময় কোথায়।


হুমায়ুন কবীর বলেন, রাত একটার সময় সেবা বন্ধ করেছি। সকালেও পাওয়া গেছে। ওই যে বোতলে যেমন পানি থাকে না, ওই রকম। যাদের কাছ থেকে তথ্য গেছে বলে সন্দেহ হয়েছে সবার সার্ভিস দেওয়া বন্ধ আছে। কত প্রতিষ্ঠান সেটা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। তদন্তের পর বলা যাবে। সরকারি-বেসরকারি আমার কাছে সেবা নিচ্ছে, এমন প্রতিষ্ঠানই রয়েছে এর মধ্যে।


ইসি দুর্বলতা ঢাকছে কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলেন, ইসির কোনো দুর্বলতা নেই। ইসি থেকে হ্যাক হয়নি। কারণ, তাদের ইসির টেকনিক্যাল দিকটা খুব স্ট্রং। তারা সব সময় এটা মনিটর করে।


মোবাইল নম্বর পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু সেটি তো হওয়ার কথা ছিল- এমন প্রশ্নে এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, মোবাইল কোম্পানি হয়তো নম্বর দিয়ে দিচ্ছে। আমি তো বলছি, পাঁচজনের কাছ থেকে পাঁচ রকম তথ্য নিচ্ছে। এই চক্রটা হচ্ছে...পৃথিবীতে আন ইথিক্যাল চক্র। এটাই আমরা বের করতে চাচ্ছি,এই চক্রটা কারা।


পার্টনার সার্ভিসের কেউ জড়িত হলে বড় কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা ওদের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক সেবা পুরোপুরি বন্ধ করতে পারছি না। তদন্তের পরে দোষী যে হবে তাকে আইনের তুলে দেওয়া হবে। জরিমানার কোনো বিধান নেই। জরিমানা করে কী হবে?


‘মোবাইল নম্বর’, ‘স্পাউজ নেম’ পার্টনার সার্ভিসের কাছে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, মোবাইল কোম্পানির কাছে নম্বর আছে না? আমদের ডাটা নিচ্ছে না তারা? মোবাইল অপারেটরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। আমরা সেটিই তদন্ত করে দেখছি।


একটি মন্ত্রণালয়ে এর আগে যে তথ্য দিয়ে এনআইডি পাওয়া গেছে এবারও তাই হচ্ছে। বিষয়টি উত্থাপন করা হলে এনআইডি অনুবিভাগের ডিজি এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখি। তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর সবাইকে সব তথ্য শেয়ার করা হয় না। পুলিশের কাছে দশ-বারোটা তথ্য আছে। ব্যাংকগুলোর কাছে নাম, বাবার নাম ও ঠিকানা আছে, এই রকম।


ভিন্ন ভিন্ন সার্ভিস পার্টনারের কাছে থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য নেয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, আমি তো বলতে পারি না। তদন্ত করে দেখি। সন্দেহভাজনদের সেবা বন্ধ করা হয়েছে।


প্রাইভেসি সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে এ কে এম হুমায়ূন কবীর বলেন, যখন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে আবেদন করেন, তখন প্রাইভেসি থাকে না কি? যখন নিকাহ নিবন্ধন করেন, তখন থাকে? তারপর ব্যাংকে, পাসপোর্টে তথ্য দিচ্ছেন, তখন কি দেখে না ওরা? প্রাইভেসি বলতে পৃথিবীতে টেকনোলজির যুগে কিছু থাকে না।


তিনি আরো বলেন, টেকনোলজির যুগে আপনার প্রাইভেসি, আপনার তথ্য সবকিছু পাবলিক হয়ে যায়। ইন্টারেনেট আমাকে খোঁজেন, পেয়ে যাবেন। আমরা তো লিক করিনি। আপনার তথ্য যদি উনাকে দিয়ে দিতাম তাহলে বলতে পারতেন।


সর্বোচ্চ ব্যবস্থা কি আছে, সেটা নেবেন কি না প্রশ্নের উত্তরে এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, সর্বোচ্চ ব্যবস্থা আছে। যারা সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্সে কাজ করে, সফটওয়্যার যারা লুক আফটার করে- এমন যদি হয়, তাহলে ব্ল্যাক লিস্টেড করতে আমরা সুপারিশ করব। সে যেন বাংলাদেশে কোথাও কাজ না পায়। কারণ, সে বাংলাদেশের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে।


ইসির কেউ জড়িত নয় দাবি করে এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলেন, আমাদের কেউ জড়িত নয়। আমাদের এখান থেকে লিক হয়নি। যেসব জায়গা সাসপেক্টেড, তাদের সেবা বন্ধ করা হয়েছে। তাদের জানানো হবে।


উল্লেখ্য, দেশের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রধারী নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে ফাঁস হয়েছে। এমন সংবাদ আজ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করা হয়। বিষয়টি স্বীকার করেছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা। সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এনআইডি সার্ভারে ১২ কোটি নাগরিকের তথ্য আছে। তাদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ কোটি নাগরিকের স্মার্ট এনআইডি আছে। গত মঙ্গলবার বিষয়টি চাউর হয়। এর পেছনে কে বা কারা, জানে না ইসির এনআইডি শাখার সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট। তবে, শনাক্ত করা গেছে, এনআইডি সার্ভারে অ্যাক্সেস রয়েছে, এমন ১৭৪টি সংস্থার একটির মাধ্যমেই এসব তথ্য ফাঁস হয়েছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com