কোচিং ব্যবসা পরিহার করতে শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:০৭
কোচিং ব্যবসা পরিহার করতে শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

শিক্ষকদের প্রতি কোচিং বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, যে অভিভাবকরা জিপিএ-৫ পেলে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান, আপনারা যদি মনে করেন সন্তানকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে, বাস্তব শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে, তাহলে এ ধরনের কোচিংয়ে পড়ানোর অবস্থান থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। শিক্ষকদের কাছেও কোচিং ব্যবসা পরিহার করার আহ্বান থাকল।


৫ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।


রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শিক্ষকদের মধ্যে কেউ কেউ কোচিংয়ের রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছেন। যেটা শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার শিক্ষা থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আপনাদের এ কোচিং ব্যবসা পরিহার করতে হবে।’


অভিভাবকদেরও সন্তানকে কোচিংয়ে দেওয়ার আগ্রহ কমাতে হবে উল্লেখ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, শুধু জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য অভিভাবকরা তাড়াহুড়া করে সন্তানকে একটা ভালো কোচিংয়ে দেন। তারা মনে করেন যে, এ কোচিংয়ের মাধ্যমে তাদের সন্তানকে গুণগত বা ভালো শিক্ষা দিতে পারব। কিন্তু ঘটছে উল্টো। এ মানসিকতা থেকে সরে আসতে হবে।


সমাজের ভিত্তি নির্মাণে শিক্ষকরাই মূল প্রকৌশলী উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর যত উল্লেখযোগ্য অর্জন, গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, আধুনিক সভ্যতা গঠন— সবকিছুর পেছনে কোনো কোনো শিক্ষক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রেখে চলেছেন। শিক্ষকরা শুধু শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক দিকটাই দেখেন না, মানবিক মূল্যবোধ, সততা, দেশপ্রেমবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখেন। সমাজ গঠন ও সমাজের ভিত্তি নির্মাণে শিক্ষকরাই মূল প্রকৌশলী।


শিক্ষার্থীকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য শেখাতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, আপনারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বোঝাবেন। মানবসেবা, দেশপ্রেম ও পিতামাতার প্রতি যত্নশীল হওয়ার শিক্ষা দেবেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পিতা-মাতাতুল্য আচরণ করবেন। শাসনও করবেন। কিন্তু যেটা শাস্তির পর্যায়ে পড়ে, সেটা পরিহার করবেন।


শিক্ষকদের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষকরা হলেন শিক্ষিত সমাজের বিবেক। জাতি গঠনের এ কারিগররা অক্লান্ত পরিশ্রম ও পরম যত্নে জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক সমাজ গঠনে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের সমাজব্যবস্থায় শিক্ষকতা এখন অন্য যেকোনো পেশার তুলনায় অনেক ঊর্ধ্বে। তারপরও আজকাল সামাজিক যে অবক্ষয় ঘটেছে, তাতে শিক্ষকদের অমর্যাদা ও অসম্মানিত হতে হচ্ছে। যেটা অত্যন্ত কষ্টের, দুঃখের।


রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, একটা সময় ছিল— যখন রাস্তায় যদি আমরা শিক্ষককে দেখতাম, মূল রাস্তা থেকে ছোট গলির রাস্তায় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করতাম। শ্রদ্ধা করে এটা করতাম। আজকাল যেটা দেখি- শিক্ষক সামনে আসছেন, তার সামনেই শিক্ষার্থী সিগারেট টানতে টানতে চলে যাচ্ছে। কোনো রকম সম্মানবোধটাও থাকছে না।


শিক্ষকদের মর্যাদা ফেরাতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অভিভাবক, সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিসহ সবাই মিলে যদি এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করেন, তাহলে আমাদের শিক্ষকদের সেই মান-মর্যাদা ফিরে আসবে। তারা আর দুঃখবোধ করবেন না। মনে মনে ভাববেন না যে, এমন ছাত্র-ছাত্রীকে পড়ালাম, মানুষ করার চেষ্টা করলাম, তাদের দ্বারা অসম্মানিত হচ্ছি। শিক্ষকদের এ দুঃখ-দুর্দশা নজরে নিয়ে সবাইকে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে চেষ্টা করতে হবে।


শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।


অনুষ্ঠানে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং শিক্ষকরা অংশ নেন।


বিবার্তা/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com