ফের সক্রিয় হচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’: র‍্যাব
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:১৫
ফের সক্রিয় হচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’: র‍্যাব
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

‘আফগানিস্তানে তালেবান সমর্থিত সরকার ফের ক্ষমতায় আসায়’ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে দাবি করে র‌্যাপিড এ্যকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) জানায়, গত ৩১ আগস্ট ২০২৩ তারিখ রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর তথ্যের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম এর খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।


১৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বশীল মুনতাসির বিল্লাহ সহ ৪ সদস্যকে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।


রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৩ এর আভিযানিক দল ঠাকুরগাঁও সদর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।


এ অভিযানে ঠাকুরগাঁও থেকে গ্রেফতার মো. মহসীন আলীর ছেলে মো. ইয়াছিন (১৭)। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ ভোরে দিনাজপুর সদর ও বিরল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. মুনতাসির বিল্লাহ (৩৬) পিতা মো. কেরামত আলী, রিয়াজুল ইসলামের ছেলে আব্দুল মালেক (৩৩) এবং মৃত আব্দুস সালামের ছেলে সাব্বির হোসেন (২০)-কে গ্রেফতার করা হয়। আলামত হিসেবে বিভিন্ন দাওয়াতী বই (হার্ড কপি এবং পিডিএফ কপি), ৪টি মোবাইল ও ৪টি সীমকার্ড জব্দ করা হয়।


গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সদস্য। তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।


এর আগে ৩১ আগস্ট রাষ্ট্রীয় (সামরিক) গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর তথ্যের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম এর খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা উগ্রবাদী সংগঠনটির বিভিন্ন অঞ্চলের কার্যক্রম ও সদস্য নিয়োগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নজরদারী বৃদ্ধি করে। তার ধারাবাহিকতায় আজ ও গতকাল এ অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব।


র‌্যাবের দাবী, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা (গ্রেপ্তারকৃতরা ) নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সদস্য। তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে তামিম আল আদনানী, হারুন ইজহার, গুনবীসহ বিভিন্ন আধ্যাত্মিক নেতার বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে ওই সংগঠনে যোগদান করে।


এরা উত্তরাঞ্চলে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সরাসরি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা সমাজের ধর্মভীরু মুসলমানদের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের উপর নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনে যোগদান ও তাদের তথাকথিত জিহাদের প্রতি আগ্রহ করার মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করে তোলে। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা উত্তরাঞ্চলে সংগঠনের কার্যক্রম প্রসারিত করার লক্ষ্যে মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো বলে জানা যায়।


তারা বিভিন্ন অপব্যাখ্যা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো বলে জানা যায়।


র‌্যাবের ভাষ্য, গ্রেফতারকৃত মুনতাসির বিল্লাহ সংগঠনটির উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি টেক্সটাইল বিষয়ে অধ্যয়নরত থাকাকালীন ৬ মাস অধ্যয়নের পর পড়া বাদ দিয়ে এলাকায় হিজামার ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি এলাকায় প্রাইভেটও পড়াতেন। তিনি ২০২১ সালে উক্ত সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগ দেন ও উত্তরাঞ্চলের দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি উত্তরাঞ্চলে দাওয়াতী কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি অদ্যাবধি ১৫ এর অধিক ব্যক্তিকে সংগঠনে যুক্ত করে বলে জানা যায়। তিনি নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তিনি ঠাকুরগাও, দিনাজপুর, ঢাকা, লক্ষীপুর, ভোলা এবং খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফর ও সভায় অংশগ্রহণ করতেন বলে জানা যায়।


এছাড়াও তিনি পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতেন। তিনি সদস্যদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা সরবরাহ করতো বলে জানা যায়।


গ্রেফতারকৃত ইয়াছিন এসএসসি পাশ করে ঠাকুরগাঁও এলাকায় মধুর ব্যবসা করতো। সে ২০২২ সালে গ্রেফতারকৃত মুনতাসিরের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। সে সরাসরি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করত বলে জানা যায়। সে তার এলাকার ৬ জনকে উদ্বুদ্ধ করে সংগঠনে যোগদান করিয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গ্রুপে সংগঠনের সদস্যদের সাথে সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করত। সে তার মধু ব্যবসার অর্থ এবং ঠাকুরগাঁও এলাকার সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের নিকট হতে চাঁদা সংগ্রহ করে গ্রেফতারকৃত মুনতাসিরকে দিত বলে জানা যায়। সে ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত রিপন এর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করত ও রিপনকে তথাকথিত হিজরতের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে গমনের উদ্দেশ্য মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করেছে বলে জানা যায়।


গ্রেফতারকৃত আব্দুল মালেক পূর্বে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে একটি রেস্টুরেন্টে কুক হিসেবে কর্মরত ছিল। পরবর্তীতে সে ৩ বছর পূর্বে দিনাজপুরে ফিরে এসে দিনাজপুর শহরে চাংপাই চাইনিজ নামে একটি ফুড কার্ট এর ব্যবসা শুরু করে। ২০২১ সালে গ্রেফতারকৃত মুনতাসিরের সাথে তার পরিচয় হয় এবং আনসার আল ইসলাম এর মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। সে অদ্যাবধি ৪/৫ জনকে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করিয়েছে বলে জানা যায়। সে সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করত। এছাড়াও সে গ্রেফতারকৃত মুনতাসিরের সাথে দিনাজপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের সভায় অংশ নিয়েছে বলে জানা যায়।


গ্রেফতারকৃত সাব্বির মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে দিনাজপুরের বিরলে ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করত। সে ২০২২ সালে গ্রেফতারকৃত মুনতাসির এর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘আনসার আল ইসলাম’ এ যোগদান করে। সে তার নিজ এলাকা দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল এবং ৩/৪ জনকে সংগঠনে যোগদান করিয়েছে বলে জানা যায়। সে গ্রেফতারকৃত মুনতাসীরের সাথে উত্তরাঞ্চল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের মিটিং এ অংশগ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। সে সংগঠনের কাজে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করত এবং অন্যান্য সদস্যদের নিকট হতে চাঁদা সংগ্রহ করে গ্রেফতারকৃত মুনতাসিরের নিকট প্রদান করত বলে জানা যায়।


র‌্যাবের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, র‌্যাব প্রতিনিয়ত অভিযান ও নজরদারী পরিচালনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমনে কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে র‌্যাবের নিয়মিত নজরদারী অব্যাহত রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ২ হাজার জঙ্গিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র‌্যাব। যখনই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়েছে তখনই র‌্যাব ফোর্সেস সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে।


গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানায় র‍্যাব।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com