আজ নগরবাসীর ঈদের দিন
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:০৭
আজ নগরবাসীর ঈদের দিন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

১১ এপ্রিল ২০২২ বিবিসি নিউজ বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ''যানজট: ঢাকাবাসীর উচ্চ রক্তচাপ, বক্ষব্যাধি সহ আরো নানা স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ ট্রাফিক জ্যাম''


প্রতিবেদনে দুইজন নগরবাসীর মন্তব্য তুলে ধরা হয়, মন্তব্য দুটি ছিল এরূপ ''কয়েক দিন আগে বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন ওলিভা বিশ্বাস। মোহাম্মদপুর থেকে মহাখালী দূরত্ব ছয় কিলোমিটারের মতো। যাওয়ার সময় লেগেছিল দুই ঘণ্টা। আর ফিরতে প্রায় তিন ঘণ্টা।


তিনি বলছেন, "রাস্তায় আমার পাঁচ ঘণ্টা নষ্ট হল। বাবা আরো অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় নামলেই রীতিমতো কান্না পায়। মনে হয় যেন কোথাও যাচ্ছি না। শুধু বসেই আছি। সেদিন মনে হচ্ছিল সিএনজি থেকে নেমে দৌড় দেই। জ্যামের কারণে খুব জরুরি কাজ ছাড়া আমি কোথাও যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছি।"


''যেমন তাইমুন নাহার আফরোজ একটি বিমান কোম্পানিতে কাজ করেন। দিনকে দিন বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার জন্য তার সময় বাড়ছে। আগে যে সময় হাতে নিয়ে বের হতেন এখন তার চেয়ে আরো পনের মিনিট বেশি হাতে নিয়ে বের হন।''


''তিনি বলছেন, "অফিসে আসার আগেই জ্যামে বসে থাকতে থাকতে এই গরমে ঘেমে মনে হয় যেন পুরো গোসল হয়ে গেল। শরীরের সব পানি বের হয়ে গেল। পুরো ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাই। সাত সকালে অফিসে ঢোকার আগেই সব এনার্জি শেষ হয়ে যায়।", বলছিলেন তিনি।''


''ঢাকা শহরের যানজট কোন মাত্রায় পৌঁছেছে তা এই শহরের বাসিন্দাদের রোজকার অভিজ্ঞতাই বলে দেয়। রাস্তায় বসে বসে কান্না পাচ্ছে, চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে - ঢাকাবাসীর অনেকেরই সম্ভবত এমনটা মনে হয়। কেননা ইদানীং মনে হয় এই শহর যেন নড়ছেই না এবং দিনকে দিন পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে।'' (বিবিসি নিউজ বাংলা, ২০২২)।


''যানজটের কারণে ঢাকা মহানগরীতে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে কর্মজীবীদের, যার আর্থিক ক্ষতি বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা।'' (বণিক বার্তা, ২০২০)।


এই যানজট কমিয়ে নগরবাসীর জীবন স্বস্তিদায়ক করার জন্য শেখ হাসিনার সরকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বহুল প্রতীক্ষিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশের যান চলাচলের জন্য উদ্বোধন করবেন।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীতে এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হলে নগরবাসীর দৈনিক যানজটের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে। যে পথ পাড়ি দিতে আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো, এখন সেই পথ পাড়ি দেওয়া যাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিটে।


শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়েটি। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের কাজ। যা শনিবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।


মহাসড়কের বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত হয়ে বিরামহীনভাবে যান চলাচলের সুযোগ করে দিতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ধারণা আসে। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত শব্দ এক্সপ্রেসওয়ে। এর প্রথমটি হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে।


সাধারণত, প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত বিশ্বমানসমৃদ্ধ মহাসড়কের নাম এক্সপ্রেসওয়ে। এতে সব ধরনের যানবাহন চলবে না, শুধু দ্রুতগতির বাহন চলবে। এসব যানবাহন কোথাও থামবে না, চলবে একটি নির্দিষ্ট গতিতে। থামলেও নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হবে। এছাড়া যানবাহন কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল।


ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মিলবে যেসব সুবিধা


রাজধানীতে নির্মিতব্য ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দেখলে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেকের ধারণা পাল্টে যাবে। ইউরোপের অনেক সড়কও হার মানবে। একাধিক নিবন্ধে এমনটি দাবি করেছেন অনেক বিদেশি লেখক ও সাংবাদিক। কিন্তু এ এক্সপ্রেসওয়ে থেকে কী এমন সুবিধা মিলবে?


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যানজটে নাকাল নগরবাসীকে স্বস্তি দেবে এ এক্সপ্রেসওয়ে। তবে, এ সড়কপথ ব্যবহারে দিতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল।


এক্সপ্রেসওয়ে থেকে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে-


• অন্য যানবাহনের তুলনায় অনেক কম এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে।
• যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণ হবে।


• ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশেই কমে যাবে।


• ভ্রমণের সময় ও খরচ কমে যাবে। তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি পাবে মানুষ।


• এক কথায়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।


ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার জানান, বর্তমানে প্রথম ফেজের কাজ প্রায় শেষ। পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ।


বর্তমানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ফেজ হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনে থেকে ফার্মগেট অংশ পর্যন্ত যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এ পথের দূরত্ব ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। র‍্যাম্পসহ এ পথের মোট দৈর্ঘ্য ২২.৫ কিলোমিটার। ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে র‍্যাম্প রয়েছে ১৫টি। র‍্যাম্পগুলো হচ্ছে— বিমানবন্দরে দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরণিতে দুটি এবং ফার্মগেটে একটি। ১৫টির মধ্যে ১৩টি র‍্যাম্প প্রাথমিকভাবে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।


বিবার্তা/মোবারক

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com