যে কারণে ব্রিকসের সদস্য হতে পারলো না বাংলাদেশ
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:৩৬
যে কারণে ব্রিকসের সদস্য হতে পারলো না বাংলাদেশ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত বিশ্বের পাঁচ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তি ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ও ব্রিকসের চেয়ার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে আগ্রহ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। চীন ও ভারতের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়ার কারণে বিষয়টি নিয়ে আশাও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এ সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্য হতে আমন্ত্রিত দেশের তালিকায় নেই বাংলাদেশের নাম।


বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা এবং উন্নয়নমূলক সহযোগিতার লক্ষ্যে এ সম্মেলনকে সামনে রেখে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া হতে ইন্দোনেশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য থেকে তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইরান, সৌদি আরব, সিরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের এ পর্যন্ত প্রায় ৪০টিরও বেশি দেশ ব্রিকস জোটে যোগদানের আগ্রহ দেখিয়েছিল।


তার মধ্যে ব্রিকস ৬টি দেশকে সদস্য হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেগুলো হলো- আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ইথিওপিয়া।


বাংলাদেশের ব্রিকসে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে ২০ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেছিলেন, অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ব্রিকসে যোগ দিতে চায়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। উন্নত দেশগুলোর অনেকগুলোই চাহিদামতো অর্থায়ন পাচ্ছে না। ব্রিকস এতে সাহায্য করতে পারে। ব্রিকসে যোগদান না করলেও আমরা ইতিমধ্যে তাদের ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাথে যুক্ত আছি। তারা আমাদের দুটি বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। আশা করছি, আগামীতে আরো প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন মিলবে।


ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো বেশ আগে থেকেই নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন, ব্রিকস মুদ্রা প্রবর্তন এবং নিজস্ব রিজার্ভের কথা বলে আসছে। এটি কার্যকর হলে ব্রিকস দেশগুলো তাদের নিজেদের মুদ্রায় ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে। এতে ডলারে নির্ভরতা কমবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। এ কারণে ডলার সংকটের মধ্যে ব্রিকসে অংশ নিতে আগ্রহী হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এই জোটভুক্ত কিছু দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ততটা মসৃণ না।


গত ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে ‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ার্ক সামিট: সোশ্যাল জাস্টিস ফর অল’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে ব্রিকসের সদস্য দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সাথে বৈঠকের পর বাংলাদেশের ব্রিকসের সদস্য হতে চাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে।


ওই বৈঠকের পরেই ব্রিকসের সদস্যপদের জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ। তবে কোনো জোটে অংশ নিতে হলে আবেদনের পাশাপাশি ওই জোটের সদস্য দেশগুলো সমর্থন পাওয়ার জন্য যেভাবে সক্রিয় থাকার প্রয়োজন তেমনটা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে লক্ষ্য করা যায়নি। আর নতুন সদস্য যুক্ত করতে হলে ব্রিকসের ৫ সদস্যকে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে হয়। সেই ৫ দেশের সমর্থন পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যথাযথ পদ্ধতিতে চেষ্টা করা হয়নি। যার ফলে ৫ সদস্য বাংলাদেশকে সদস্য বানাতে সমর্থন দেয়নি।


এছাড়াও আরেকটি কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোটে অংশগ্রহণের বিষয়টিতে ঢিলেমি দেয়া হয়েছে মনে করা যায়। সেটি হলো বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগ ক্ষেত্র। বাংলাদেশের এই খাতটি মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নির্ভর। বিনিয়োগও ওইসব দেশ থেকেই বেশি আসে। ব্রিকস জোট অনেকটা পশ্চিমাদের বিপক্ষের জোট হিসেবে নিজেদের শক্তি বাড়াচ্ছে এমন ধারণা সামনে এসেছে। এ অবস্থায় ব্রিকসে যোগ দিলে বাংলাদেশের অর্থনীতি পশ্চিমাদের চাপে পড়তে পারে।


ব্রিকসে অর্থনৈতিক সুযোগের পাশাপাশি জোটের সদস্যদেশগুলোর ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরতার ঝুঁকিও আছে। তাই ব্রিকসে যুক্ত হওয়ার আগে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সহযোগিতার শর্তগুলো সতর্কভাবে মূল্যায়ন করাটা জরুরি।


ব্রিকসে যোগ দিয়ে অর্থনৈতিক সুফল নিশ্চিত করতে হলে দর-কষাকষিতে দক্ষতার পাশাপাশি জটিল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়গুলোকে সামাল দেওয়ার মতো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাসহ অভ্যন্তরীণভাবে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য থাকতে হবে। এখনো সেভাবে প্রস্তুত নয় বলেই ব্রিকস জোটে নেই বাংলাদেশ।


উদ্যোক্তারা বাদে ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রথম সদস্য হয়েছিল বাংলাদেশ। বৈশ্বিক রাজনীতির বর্তমান অবস্থা যাচাই করে ব্রিকসের মতো অর্থনৈতিক জোটের সাথে থাকার প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।


তবে ভূরাজনৈতিক কারণেই পর্যবেক্ষক বা সহযোগী সদস্য হিসেবে বাংলাদেশকে এ জোটে থাকার কথা বলছেন তারা।


এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, কিছু ইস্যু আছে। সেগুলো সব সময় সবখানে একই রকমের গুরুত্ব পায় না। আপনি কিছু বিষয় সেখানে সহযোগী হিসেবে উত্থাপন করতে পারেন। আমার কাছে মনে হয়, সহযোগী হিসেবে থাকলেও কোন ক্ষতি নেই।


২০০১ সালে গোল্ডম্যান শ্যাক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিল একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেছিলেন। সেখানে তিনি ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চীনের একটি জোট হওয়ার আভাস দিয়েছিলেন। আর এটি তৈরি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার উদ্যোগে।


পরবর্তীতে ২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন মিলে গঠিত হয় ‘ব্রিক (BRIC)’ নামে একটি অনানুষ্ঠানিক জোট। পরের বছর সে জোটে অন্তর্ভুক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তখন ‘ব্রিক’ নাম বদলে হয়ে যায় ‘ব্রিকস (BRICS)’। সময়ের সাথে সাথে এই অর্থনৈতিক জোটটি পশ্চিমা উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আখ্যায়িত হতে থাকে।


ভারতের গবেষণা প্রতিষ্ঠা অবজারভার ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যা, আয়তন এবং অর্থনৈতিক আকারের দিক থেকে ব্রিকস জোট বর্তমান বিশ্বের একটি বড় শক্তি।


ব্রিকসের পাঁচটি সদস্য দেশ পৃথিবীর ২৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে এবং বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশও এ দেশগুলোর। এমনকি বর্তমানে ব্রিকস সম্মিলিতভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৪৩ শতাংশ (আট ট্রিলিয়ন ডলার) নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের যত পণ্যসেবা উৎপাদন হয় তার ২১ শতাংশ আসে এই পাঁচটি দেশ থেকে।


সব সদস্যদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ভূ-রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য এবং উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে থাকে ব্রিকস।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com