এক দফা আন্দোলনে নমনীয় বিএনপি
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১৯:৪৩
এক দফা আন্দোলনে নমনীয় বিএনপি
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীতে গত ২৮ জুলাই মহাসমাবেশ করেছে বিএনপি ও তার শরিকরা। সমাবেশের পরের দিন রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করে তারা। ওইদিন অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনরা একযোগে হামলা করেছে দাবি করে এর প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরসহ সকল মহানগর ও জেলা সদরে জনসমাবেশের ডাক দেয় দলটি।


রাজধানীতে মহাসমাবেশের পর মহানগর ও জেলায় কর্মসূচিকে অনেকেই এক দফা আন্দোলনের টানা কর্মসূচি থেকে বিএনপির সরে যাওয়া হিসেবে দেখছেন। অবস্থান কর্মসূচির মতো ‘কঠোর’ কর্মসূচির পর প্রতিবাদ সমাবেশের মতো ‘নরম’ কর্মসূচি দেওয়ায় দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে হতাশা। তাদের প্রশ্ন, সরকার পতনের এক দফা কঠোর আন্দোলন থেকে বিএনপিকে কেন সরে দাঁড়াতে হলো?


এদিকে বিএনপির এক দফার আন্দোলন বেলুনের মতো চুপসে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতারা। শুক্রবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় ১৪ দলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন। তারা বলেন, বিএনপি মরিয়া হয়ে তাদের পুরোনো সন্ত্রাসী রূপে আবির্ভূত হয়েছে। নির্বাচন বানচাল করতে বিদেশি শক্তিকে নিয়ে দেশের ভেতরে ষড়যন্ত্র করছে। এমনকি আগামী ৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ১৪ দলের সমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে এই সভার আয়োজন করা হয়। বিএনপিকে প্রতিহত করতে আগামী নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন ১৪ দলের নেতারা।


গত ১২ জুলাই রাজধানীতে বড় সমাবেশ করে সরকার হটানোর এক দফার আন্দোলন ঘোষণা করে বিএনপি। একই দিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র জোট ও দলগুলো। এরপর ২৮ জুলাই, শুক্রবার রাজধানীতে বড় মহাসমাবেশ করে বিএনপি। পুরো সময়জুড়েই নানা বক্তৃতা-বিবৃতিতে সরকারকে আর ছাড় না দিয়ে আন্দোলনকে কঠোর করে লক্ষ্য অর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপরই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নমনীয়তা দেখা যায় দলটিকে।


গত ২৮ জুলাই মহাসমাবেশে পর ২৯ জুলাই, শনিবার ঢাকায় যে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়- সে ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন ‍পুলিশ (ডিএমপি)-কে জানায়নি বিএনপি। ফলে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে রাজধানীর উত্তরা, গাবতলী, ধোলাইখাল ও মাতুয়াইলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে দলটির অন্যতম নীতিনির্ধারক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ প্রায় ৫০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। ঘটনার পর রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৫৪৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত ১৬টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় অন্তত ১৪৯ বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


সরকার পতনের এক দফা কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে হঠাৎই কর্মসূচিতে বিএনপির নমনীয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বিবার্তাকে বলেন, ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করার কারণে নেতাকর্মীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এজন্য কিছু কিছু জায়গায় আন্দোলন সংগ্রাম নমনীয় হতে পারে।


বিএনপির এক দফার আন্দোলন বেলুনের মতো চুপসে গেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতাদের বক্তব্যের বিষয় জানতে চাইলে সেলিমা রহমান বলেন, বলতে পারে, এরাতো অনেক কথাই বলছে। ১৪ দল বলতেছে, আওয়ামী লীগ বলতেছে। ওদের কথা ওরা বলেই যাবে।


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বিবার্তাকে বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কিছু গতি প্রকৃতি থাকে, সব সময় এক রকম হয় না। ১৯৭০ সাল থেকে আন্দোলন বিশ্লেষণ করুন; আজকে একরকম হবে, আগামী দিন আরেকরকম হবে, তারপরের দিন অন্যরকম হবে। এটাই হলো গণতান্ত্রিক আন্দোলন; একটি পর্যায়ে গিয়ে চূড়ান্ত গণবিস্ফোরণ এবং গণঅভ্যুত্থান- এটাই নিয়ম। আমরা সেভাবেই যাচ্ছি। এই সরকার তো ফ্যাসিবাদী সরকার, যারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছে। সকল বিচার বিভাগ দলীয়করণ করে তাদের মতো করে ব্যবহার করছে। সকল প্রশাসনকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করা হয়েছে। একমাত্র উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া এবং চায়না ছাড়া গণতান্ত্রিক বিশ্বে এরকম ফ্যাসিবাদ আর নেই।


আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে আজম খান বলেন, ‘তারা অস্থির হয়ে গেছে, তারা পতনের শঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে গেছে। মার্কিনিদের এত সমালোচনা ২০ ঘণ্টা জার্নি করে যাব না ঐ মহাদেশে; তারপর দল ধরে তাদের রাষ্ট্রদূতকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে গদগদ হয়ে গেছে। বিএনপি তাদের সাথে কথা বললেই নাকি ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। এই যে তাদের মধ্যে এত আতঙ্ক, এত অস্থিরতা; তাতেই বুঝা যায় বিএনপির আন্দোলন সফলতার দ্বারপ্রান্তে। বিএনপি যে মহাসমাবেশ করেছে, এরকম একটি মহাসমাবেশ স্বাধীনতার আগে বা পরে কেউ কখনো দেখে নাই। এখন তারা ভয়ে আতঙ্কে আবার ১৪ দল নতুন করে গোছাতে শুরু করেছে। সকলের মান-অভিমান ভাঙিয়ে নিজেদের কাছে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এর কারণ কী? বিএনপির আন্দোলন চুপসে গেছে এজন্য, নাকি বিএনপির আন্দোলন দাবানল সৃষ্টি করছে এজন্য? এটা বুঝতে হবে।


বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বিবার্তাকে বলেন, আমাদের টার্গেট হলো জনগণকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করে কীভাবে পূর্বের কর্মসূচি থেকে পরবর্তী কর্মসূচি আরও ভালো করা যায়। যেখানে ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় থাকে- সেখানে আক্রমণ আসলে সেটা কাটিয়ে উঠতেও কিছু সময় লাগে। যেখানে ২৯ জুলাই তারা একদিকে প্রশাসন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী, আরেক দিকে সশস্ত্র দলীয় বাহিনী- এদের আঘাতের পরে আমাদের একটুখানি সময় লাগবেই। এটাকে কঠোরতা-নমনীয়তা দিয়ে বিচার করা ঠিক হবে না।


গত ১২ জুলাই এক দফা আন্দোলন নতুন মাত্রায় শুরুর পর ১৮ ও ১৯ জুলাই মহানগর ও জেলা সদরে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপে ২৮ জুলাই শুক্রবার ঢাকায় মহাসমাবেশ করে দলটি। সেখান থেকেই ঘোষণা করা হয় ঢাকার প্রবেশমুখে পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির। ২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনরা একযোগে হামলা করেছে দাবি করে এর প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরসহ সকল মহানগর ও জেলা সদরে জনসমাবেশের ডাক দেয় দলটি।


গত ২ আগস্ট জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। রায়ে তারেক রহমানকে ৯ বছর ও ডা. জুবাইদা রহমানকে ৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এই রায়ের পর থেকে বিএনপি ও তাদের সাথে আন্দোলনে থাকা শরিকরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।


বিবার্তা/রোমেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com