স্বামীর সঙ্গে কলহ: ১২ দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে স্কুলশিক্ষিকা!
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৩, ২০:৩৩
স্বামীর সঙ্গে কলহ: ১২ দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে স্কুলশিক্ষিকা!
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

স্বামীর নির্যাতনে মরণাপন্ন অবস্থায় গত ১২ দিন ধরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা নিচ্ছেন স্কুলশিক্ষিকা সুদীপ্তা রায় ঘোষ (৬৭)। তিনি রাজধানীর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ইংরেজি মাধ্যমের সিনিয়র শিক্ষক। জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে গত ১২ দিন ধরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন আছেন।


সুদীপ্তা রায় ঘোষকে মারধরের একটি ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, শক্ত কিছু দিয়ে একজন নারীকে পেটাচ্ছেন একজন পুরুষ। আর তাকে মারধর থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছেন মধ্যবয়সী এক নারী। যিনি পেটাচ্ছেন তিনি তার স্বামী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সুনীল রঞ্জন ঘোষ (৭০)।


অভিযোগ উঠেছে, গত ১৬ জুলাই সুদীপ্তা রায় ঘোষকে মারধরের পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার তার স্বামী বলছেন, ভিডিওটি আড়াই থেকে তিন বছর আগের। ১৬ জুলাই রাতে দু'জনের মধ্যে কিছু ঝামেলা হয়েছিল। পরে রাতে নিয়মিত ওষুধের সাথে অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।


গত ১২ দিন ধরে পপুলার হাসপাতালের অ্যানেক্স ভবনের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)-তে চিকিৎসাধীন আছেন সুদীপ্তা রায় ঘোষ। আইসিইউর দায়িত্বরত চিকিৎসক সুজায়েত হোসেন জানিয়েছেন, ১৭ জুলাই সুদীপ্তা ঘোষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


স্ত্রীকে মারধরের ভিডিওটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। একজন শিক্ষিকা স্বামীর হাতে মারধরের শিকার হচ্ছেন- এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে ক্ষোভে ফেঁটে পড়ছেন অনেকে।


রয় অমল কুমার নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন- আমার বোন (সুদীপ্তা ঘোষ) ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষিকা, তাকে তার স্বামী সুনীল ঘোষ (রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী) এবং পুত্র শঙ্খময় ঘোষ জান্তবভাবে মারধর করে। বর্তমানে সে ঢাকার পপুলার নার্সিং হোমে কোমায়। মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। আমি ৭৫ বয়সী অসুস্থ দাদা। সুদূর কলকাতা থেকে কি করতে পারি? তাই বাংলাদেশের প্রশাসন এবং নিকটজনের কাছে অনুরোধ করছি, অপরাধীদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়। কোনোভাবেই তারা যেন নিস্তার না পায়।




রবিন আহসান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন- হ্যালো বাংলাদেশ সরকারের পুলিশ আপনারা একটু এগিয়ে আসুন শিক্ষক লেখক মুক্তিযোদ্ধা সুদীপ্তা ঘোষ এখন তার স্বামী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুনীল ঘোষ ও তার ছেলের নির্যাতনে অর্ধমৃত অবস্থায় পপুলার হাসপাতাল ধানমন্ডিতে আছে বলে সুদীপ্তা ঘোষ এর বড় ভাই কলকাতা থেকে জানিয়েছেন। তার দুই বোন ভাই কোলকাতায় থাকেন। তারা তিন বোনই বরিশাল অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিশোরী বয়সে!!!



মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক নামে একজন সেই পোস্টে কমেন্ট করে লিখেছেন- আহা! এই দিদির এই অবস্থা? বিচার দাবি করছি।


তাপস চৌধুরী লিখেছেন- নিষ্ঠুরতা। ভাবতেই কষ্ট হয়। এও কি সম্ভব?


ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে ডা. মোহাম্মদ সেলিমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন সুদীপ্তা ঘোষ। সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য আমি প্রকাশ করতে চাই না। সেটা পরিবারই ভালো বলতে পারবে। রোগীর ছেলেও চিকিৎসক, তিনি জানিয়েছেন, বাড়িতে ঝগড়া হয়েছিল।


সুদীপ্তা রায় ঘোষের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৪০ বছর আগে পারিবারিকভাবে সুনীল ঘোষের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাদের ৯ ভাইবোনের মধ্যে সুদীপ্তা ষষ্ঠ। ধানমন্ডির একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি তাঁর একটি কোচিং সেন্টারও রয়েছে। আর্থিক বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।


স্বামী সুনীল ঘোষ বাংলাদেশ টেলিভিশনের সংগীত পরিচালক। আগে বরিশালে কৃষি ব্যাংকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সুনীল ঘোষ বিবার্তাকে বলেন, ওটা (ভিডিও) অনেক আগের পারিবারিক দ্বন্দ্ব। সেটা কেউ উসকাই দিয়েছে। সে আঘাত করছিল, আমিও তাকে আঘাত করছিলাম। সেটা কে বা কারা... বাইরের লোকও বাসায় ছিল। কেউ ভিডিওটি করে দুই আড়াই বছরে পরে ছড়িয়েছে। এটি আড়াই বছর আগের।


তিনি বলেন, আমি ৭০ বছর বয়সী মানুষ, বাইপাসের রোগী। হার্টের পেশেন্ট, মুভ করতে পারি না। ৪০ বছর দাম্পত্য জীবন কাটাইলাম। মতের অমিল হয়। ঝগড়া হয়, মতবিরোধ হয়। কিছুক্ষণ পরে আবার ঠিক হয়ে যায়। এগুলো একান্ত পারিবারিক বিরোধ।


১২ দিন ধরে স্ত্রী আইসিইউতে কেন- জানতে চাইলে সুনীল ঘোষ বলেন, ডাক্তার বলেছে ওষুধপত্র বেশি খেয়ে ফেলেছিল। তবে এখন সেটা কেটে গেছে। অ্যাজমার পেশেন্ট, সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম আছে তার। অ্যাজমা থাকায় শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রবলেম হয়। ৬৭ বছর বয়স তার। এ কারণে একটু দেরি হচ্ছে। দু'একদিনের ভেতরে বেডে দিয়ে দিবে।


সুদীপ্তা রায় ঘোষের ছেলে ডা. শঙ্খময় ঘোষ বিবার্তাকে বলেন, ঝগড়া-ঝাটি অশান্তি এটা নরমাল পারিবারিক কলহ। ৪০ বছর ধরে তারা সংসার করছেন। এখন কলহের বিষয়টি হাইলাইট করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলে তো এটা দুঃখজনক ঘটনা।


তিনি বলেন, ওনাকে আইসিইউ’র বাইরে আনার চেষ্টা করতেছি। ওনার মুখে লাইফ সাপোর্ট দেয়া ছিল, যার কারণে গলা শুকিয়ে গেছে। ওনার শতভাগ কনশাসনেস ফিরে আসছে, ওনি লিখতেও পারছে। তবে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে। কারণ মুখের মধ্যে টিউব ঢুকানো । এটা থাকায় কথা বলতে পারছে না। এখন ডাক্তাররা টিউবটা খুলে বেডে নিয়ে আসতে চাচ্ছে।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com