রাত পোহালেই রবিবার, ৩০ এপ্রিল পরীক্ষায় বসছে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের ২০ লাখের ঊর্ধ্ব পরীক্ষার্থী। ইতোমধ্যেই এই পরীক্ষাকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে পরীক্ষা সম্পর্কিত সরঞ্জাম। করোনার কারণে এ বছরও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে হবে মাধ্যমিকের এই পরীক্ষা। এদিকে এবারের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসসহ গুজব ঠেকাতে শিক্ষা বোর্ডগুলো ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এরইমধ্যে কোচিং সেন্টার বন্ধ, কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশনা,ফেসবুক-মোবাইল লেনদেনে নজরদারিসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডগুলো বলছে, এবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন সুযোগ নেই, তবে কেউ গুজব ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, এ বছর ৩ হাজার ৮১০টি কেন্দ্রে মোট ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ২১ হাজার ১৯৭ জন ছাত্র ও ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন ছাত্রী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ জন সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, ২ লাখ ৯৫ হাজার ১২১ জন মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৭ জন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের।
এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় ৫০ হাজার ২৯৫ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞানেই বেড়েছে ৩৭ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী। আর ছাত্রী বেড়েছে ৩৮ হাজার ৬০৯ জন। গতবার এসএসসি ও সমমানে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ২০ লাখ ২১ হাজার।
এদিকে এবার পরীক্ষায় দেশের বাইরে ৮টি কেন্দ্র মোট ৩৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এর মধ্যে জেদ্দায় ৮৯ জন, রিয়াদে ৫১ জন, ত্রিপলীতে ৪ জন, দোহায় ৭৭ জন, আবুধাবীতে ৪১ জন, দুবাইয়ে ২৭ জন, বাহরাইনে ৬৫ জন, সাহাম ওমানের ২০ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। বরাবরের মতো এবারও পরীক্ষা দিতে অতিরিক্ত সময় পাবেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধকতা ও হাত না থাকা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শ্রুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসিতে ভোগা পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক, অভিভাবক, সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, এবারও সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচিতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে হবে পরীক্ষা। পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে শেষ হবে ১ টায়। পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে হবে। প্রথমে বহুনির্বাচনী এবং পরে রচনামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে বহুনির্বাচনী ও রচনামূলক বা সৃজনশীলে আলাদা আলাদাভাবে পাস করতে হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়,অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীকে নির্ধারিত সময়ের পর কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দিলে সেই পরীক্ষার্থীর নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও বিলম্ব হওয়ার কারণ ইত্যাদি তথ্য একটি রেজিস্ট্রারে লিখে রাখতে হবে। পরীক্ষার দিনই সেসব তথ্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে হবে। আর নিয়মানুযায়ী, ট্রেজারি বা থানা থেকে নির্দিষ্ট তারিখের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সব সেট পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হবে। তারপর পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে খুদে বার্তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে কোন সেটে সেদিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, তা (কোড জানানো হয়) জানিয়ে দেওয়া হবে। কেন্দ্র সচিব ছাড়া আর কেউ মুঠোফোন কিংবা ইলেকট্রনিক যন্ত্র নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিবও ছবি তোলা যায় না— এমন একটি সাধারণ মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারবেন। পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ কেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না। এমনকি কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার্থী ছাড়া ২০০ গজের মধ্যে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে শিক্ষা ও পরীক্ষার সুষ্ঠুভাবে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশনা,ফেসবুক-মোবাইল লেনদেনে নজরদারিসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রশ্নফাঁস ও গুজব ঠেকাতে যেসব উদ্যোগ
কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জন্য গত ২৬ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় মনিটরিং ও আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভা শেষে এ কথা জানান মন্ত্রী।
নজরদারিতে থাকবে ফেসবুক- মোবাইল লেনদেন
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পরীক্ষা চলাকালীন ফেসবুক ও মোবাইল ফোনে যে কোনো ধরনের গুজব, প্রশ্নফাঁস, অনৈতিকভাবে তথ্য সরবরাহ বা আর্থিক লেনদেন নজরদারিতে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তৎপর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
পরীক্ষা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বিটিআরসিকে সর্বোচ্চ সতর্ক রাখা হয়েছে। যেসব গ্রুপ বা ব্যক্তি ফেসবুকে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়াবে বা প্রশ্নফাঁস করে দেবে বলে প্রচারণা চালাবে তাদের আইডি শনাক্ত করে পুলিশের বিশেষ শাখা এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে দেওয়া হবে। এ রকম গুজব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের মোবাইল লেনদেনও নজরদারিতে থাকবে।
কী বলছে শিক্ষা বোর্ডগুলো ও মন্ত্রণালয়?
এবারের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা আন্তঃশিক্ষা বোর্ডর সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বিবার্তাকে বলেন, বিটিআরসি ইতোমধ্যে ফেসবুক ও মোবাইল লেনদেন নজরদারি শুরু করেছে। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারাও বিটিআরসিতে থাকবে। এছাড়াও ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ অন্যান্য সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের গুজব সৃষ্টিকারীদের পেজ দ্রুত বন্ধ করা হবে। এজন্য ফেসবুকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবে।
তিনি জানান, প্রশ্নঁফাস হওয়ার চেয়ে গুজব ঠেকানোই বড় কঠিন। কারণ প্রশ্নঁফাস করা কঠিন কিন্তু গুজন ছড়ানো সহজ। ২৫ এপ্রিল পরীক্ষা নিয়ে আইন শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত হয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার বিবার্তাকে বলেন, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে ইতোমধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে মাধ্যমিকের এই বোর্ড পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে গুজব সৃষ্টিকারীরা গুজব রটিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এই ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কায়সার আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, একজন শিক্ষার্থীর জীবনে এসএসসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। কাজেই আমরা আশা করবো শিক্ষার্থীরা নিজেদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পরীক্ষায় এর প্রতিফলন ঘটাবে।
এদিকে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ালে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন,এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। কেউ গুজব ছড়ালে ধরা পড়লেই কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।শনিবার, ২৯ এপ্রিল দুপুরে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কলেজের নবনির্মিত একাডেমিক ভবন উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য,এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারির শুরুতে ও এইচএসসি পরীক্ষা এপ্রিলের শুরুতে হতো। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে পুরো শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে গেছে। এবছর এসএসসি পরীক্ষার রুটিনে দেখা গেছে, পরীক্ষা শুরুর দিনে অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল বাংলা প্রথম পত্র, ২ মে বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ৩ মে ইংরেজি প্রথম পত্র, ৭ মে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র, ৯ মে গণিত, ১০ মে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ১১ মে ধর্মশিক্ষার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ১৪ মে পদার্থবিজ্ঞান, ১৫ মে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, ১৬ মে রসায়ন, ১৭ মে ভূগোল ও পরিবেশ, ১৮ মে জীববিজ্ঞান, ২১ মে বিজ্ঞান, ২২ মে হিসাববিজ্ঞান এবং ২৩ মে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ের পরীক্ষা হবে।
বিবার্তা/ রাসেল/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]