গণহত্যায় জামায়াত ও পাকিস্তানিদের অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করেছেন জিয়া : হানিফ
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ১৭:২১
গণহত্যায় জামায়াত ও পাকিস্তানিদের অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করেছেন জিয়া : হানিফ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া একাত্তর সালের গণহত্যায় জামায়াতে ইসলামী ও পাকিস্তানিদের অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। তাই বাংলাদেশ ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।


শনিবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, ২৫ মার্চ: গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।


মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়— একাত্তরের গণহত্যা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গণহত্যা। যুদ্ধের নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ২ লাখের বেশি মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু সেই গণহত্যার স্বীকৃতি নেই। অনেক পানি গড়িয়েছে। আমরা এত বড় গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাইনি। কী কারণে পাইনি? এর বড় কারণ আছে।


আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে খুনি জিয়া ক্ষমতা দখল করে। গণহত্যায় জড়িত জামায়াতে ইসলামী, রাজাকার-আলবদরদের মধ্যে যারা বিচারাধীন ছিল— দালাল আইন বাতিল করে তাদের মুক্ত করে দিয়েছিল। যে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ ছিল, সেই জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিল। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। যারা গণহত্যায় জড়িত ছিল তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে জিয়া প্রমাণ করতে চাইলেন, মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা হয়নি।


তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ২০১৩ সালে বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ মারা যায়নি, এটা কল্পিত। হয়তো দুই লাখ মারা গেছে। এতে প্রমাণ হয়- তিনি তার স্বামীর পথ অনুসরণ করেছেন। এই গণহত্যা থেকে জামায়াতে ইসলামীকে, পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য জিয়া-খালেদা জিয়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তাদের অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করেছেন বলেই আজও আমরা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাইনি।


তিনি বলেন, মূলত ৭ মার্চের ভাষণ ছিল স্বাধীনতার মূল ঘোষণা। সেদিন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনভাবে পথ চলতে শুরু করেছিল। ওই ভাষণের পর পাকিস্তানিরা যখন দেখল বাঙালিদের আর ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তখনই অপারেশন সার্চলাইটের নামে গণহত্যার পরিকল্পনা নেয়। তাদের ধারণা ছিল আতঙ্ক সৃষ্টি করে বাঙালির আন্দোলন চিরতরে নিঃস্তব্ধ করে দেয়া। নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের ওপর সেদিন রাতে শুরু হওয়া গণহত্যা গোটা মুক্তিযুদ্ধের সময়জুড়ে চলেছে।


হানিফ বলেন, ১৯৩৯ থেকে ১৯৪২ সালে নাৎসি বাহিনীর হাতে ৬০ লাখের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। আর্মেনিয়ায় ১৭ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এগুলোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আছে। রুয়ান্ডা, কম্বডিয়া, বসনিয়াসহ সব গণহত্যার স্বীকৃতি আছে, শুধু বাঙালিদের ওপর হওয়া গণহত্যার কোন স্বীকৃতি নেই।


তিনি বলেন, ২৫ মার্চের হত্যাকাণ্ড ছিল গণহত্যা শুরুর অধ্যায়। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের গণহত্যা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম গণহত্যা। একাত্তরে বাংলাদেশে হওয়া গণহত্যাকে অবিলম্বে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।


তিনি বলেন, এই দেশে যতদিন বিএনপি-জামায়াত রাজনীতি করার সুযোগ পাবে ততদিন স্বাধীনতার ইতিহাস বারবার বাধাগ্রস্ত হবে, বিকৃত হবে। কারণ বিএনপি-জামায়াত পাকিস্তানের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী। তারা এখনও স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাসী নয়। তারা ইতিহাস বিকৃত করে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে- যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার থাকতে পারে না। আর তাদের দোসর হিসেবে বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধের সময় এসেছে।


হানিফ বলেন, সকল প্রকার অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব, গণহত্যা দিবসে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।


ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য এডভোকেট সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির প্রমুখ।


সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি ও দক্ষিণের প্রচার সম্পাদক সাইফুন্নবী সাগর।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com