
কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত। কলম ছিল তার অস্ত্র। সেই অস্ত্র দিয়েই লড়ে গিয়েছেন শোষণ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আর এই বিদ্রোহই তাকে অমর করেছে বাংলা সাহিত্যে। বুধবার ১১ জ্যৈষ্ঠ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী। একই সঙ্গে এ বছর পূর্ণ হলো তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’ রচনার শতবর্ষ।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তাঁর ডাকনাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন। পিতা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। বাবার অবর্তমানে মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে প্রথম কাজ। অভাব–অনটন ছিল শৈশব থেকেই তাঁর নিত্যসঙ্গী।
অল্প বয়সেই পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য নানা পেশায় জড়িয়ে যেতে হয়েছিল তাকে। ছোটবেলায় লেটো গানের দলেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি। লেটো গানের দল ছেড়ে ১১ বছর বয়সে আবারো ফিরে গিয়েছেন স্কুল জীবনে। প্রথমে রাণিগঞ্জ সিয়ারসোল স্কুল এবং পরে মাথরুন স্কুলে ভর্তি হলেও অর্থের অভাবে রুটির দোকানে কাজ শুরু করেন তিনি। তখন থেকেই সুযোগ পেলে কবিতা আর গান লিখতেন কবি।
বেশ বৈচিত্রম্যয় ছিল নজরুলের জীবন। ১৮ বছর বয়সে মাধ্যমিক পরীক্ষা না দিয়েই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ছিলেন প্রায় আড়াই বছর। সৈনিক জীবন শেষ করে ‘নবযুগ’ নামের এক সান্ধ্য পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছেন।
ইংরেজদের শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন নজরুল। প্রকৃতপক্ষে নজরুল ছিলেন সাম্যবাদী। তিনি শোষণের প্রতিবাদ করতেন। প্রতিবাদ করতেন বৈষম্যের। ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তার কলম যেমন চলেছে তেমন চলেছে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে। চলেছে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এমনকি নারী-পুরুষের বিভেদের বিরুদ্ধেও লিখেছেন অনেক।
১৯২২ সালে তার লেখা ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পর তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কবিতাগুলোর মাধ্যমে অত্যাচারী আর শোষক সমাজের বিরুদ্ধে জেগে উঠার আহ্বান জানাতেন তিনি। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার কারণে জেলও হয়েছিল। সেখানেও করেছেন কাব্যচর্চা।
তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ হলো অগ্নিবীণা। অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো প্রবন্ধ বা উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রেও দ্যুতি ছড়িয়েছেন নজরুল। লিখেছেন হাজার হাজার গান। সব মিলিয়ে সাহিত্যের জগতে আপন আলোয় উজ্জ্বল তিনি। লিচু-চোর, খুকি ও কাঠবিড়ালীর মতো অনেক শিশু-কিশোর বান্ধব কবিতাও ছিল তার।
১৯৪২ সালে এক দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন তিনি। মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই এ রোগের কারণে কর্মজীবন শেষ হয় তার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের আমন্ত্রণে সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন তিনি। পান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। তাকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৬ সালে ২৯ আগষ্ট মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবর দেয়া হয়।
বিবার্তা/রিয়াদ/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]