
আজ ১৭ মে, বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লিগের সদস্য হিসেবে ‘হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’ ২০০৬ সাল থেকে ১৭ মে দিবসটি পালন করে আসছে প্রতি বছর। এ বছরও জনসচেতনতায় এ দিবসটিকে ঘিরে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। জানা দরকার উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তের উপায় এবং এর বিধিনিষেধ সম্পর্কে।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার বা হাইপারটেনশন একটি অতি পরিচিত রোগ। সময়মতো এ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না করা হলে, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মত মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
শনাক্তের উপায়
উচ্চ রক্তচাপে দেখা যাবে, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড়, বমিভাব -- এরকম কিছু লক্ষণ। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। কিন্তু যদি কারো রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিলিমিটার মার্কারি বা তারচেয়ে বেশি হয় এক্ষেত্রে বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে।
তবে মানুষের রক্তচাপ একে অপরের থেকে কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। একজনের জন্য যেই রক্তচাপ বেশি বা কম, তা অন্যজনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হতে পারে। রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ থেকে ১২০/৮০ — এ সীমার মধ্যে থাকে তাহলে তা স্বাভাবিক রক্তচাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রক্তচাপ মাপার নিয়ম
১) পোশাকের ওপর ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্রের কাফ বাঁধবেন না। এতে ৫-৫০ mmHg ইউনিট বেড়ে যেতে পারে। আসল ফলাফল নাও পেতে পারেন। তাই ত্বকের ওপর কব্জিতে সরাসরি কাফ বাঁধুন। ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্রে সাধারণত দুধরনের কাফ থাকে। এক ধরনের কাফ কব্জিতে বাঁধা হয় এবং অন্যটি বাহুতে বাঁধা হয়। বাহুতে যে কাফ বাঁধা হয়, সেটি ব্যবহার করুন।
২) রক্তচাপ মাপার সময় শান্ত হয়ে বসুন। রক্তচাপ মাপার সময় কথা বলবেন না। এ সময় নড়াচড়া করলে বা অস্থির হয়ে পড়লে ভুল ইউনিট আসতে পারে। রক্তচাপ মাপার সময় চেয়ারের ওপর বসুন এবং হাতটা টেবিলের উপর রাখুন। সঠিক ভঙ্গিতে না বসলে কিন্তু সঠিক রক্তচাপের মাত্রা জানতে পারবেন না।
৩) রক্তচাপ পরিমাপের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে খাবার, অ্যালকোহল বা ধূমপান করবেন না। এতে রক্তচাপের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। একইভাবে শরীরচর্চা করার পরই রক্তচাপ পরীক্ষা করবেন না। এ সময় রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। তাই রক্তচাপের সঠিক মাত্রা নাও পেতে পারেন।
রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কারণ
উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কারণটি সবসময় চিহ্নিত করা যায় না। তবে বিভিন্ন কারণে এ সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে:
১. ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া
২. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
৩. খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল না থাকা
৪. অতিরিক্ত পরিমাণে মদ্যপান করা ছাড়াও অতিরিক্ত চা-কফি, কোমল পানীয় ও অন্যান্য ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় খাওয়ার অভ্যাস থাকা
৫. পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা
৬. রাতে একটানা ৬-৮ ঘণ্টার চেয়ে কম ঘুমানো
সমীক্ষা বলছে, দেশে প্রতি পাঁচজনে অন্তত একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তবে ৫৯ শতাংশ রোগীই জানেন না যে, তারা গুরুতর এ সমস্যায় আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপে রোগীকে সব সময়ই সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এ রোগটিই অন্যান্য শারীরিক নানা জটিলতা তৈরির কারণ।
প্রেশার বেড়ে গেলে কী করণীয়?
১. হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে শারীরিক চলাচল কমিয়ে দিন। কেননা, এতে রক্তের চাপ আরও বেড়ে যায়।
২. রক্তের চাপ কমাতে খেতে পারেন তেঁতুলের রস। এর পরিবর্তে খেতে পারেন লেবু-পানি।
৩. আপনার খাদ্যতালিকায় আদা রাখুন। এটি একটি সুপারফুড। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও পেশি শিথিল করে।
৪. রক্তচাপ বেড়ে গেলে প্রক্রিয়াজাত ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। সেই সঙ্গে চর্বিযুক্ত খাবার, খাবারের লবণ, ধূমপান এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে -- এমন খাবার এড়িয়ে চলুন।
৫. এ সময় চিনি, তেল, ঘি, মাখন ও রেডমিট একেবারেই খাওয়া যাবে না।
প্রতিরোধ করণীয়
১. ফল খাবেন বেশি। ২. সক্রিয় থাকুন। ৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। ৫. দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন।জীবনধারায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনলে তা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। এছাড়া এরই মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকলে সেটিও নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে। বিভিন্ন রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। আপনার জন্য কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা জানতে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]