বর্ষার মৌসুমে কাঁকরোল কেন খেতে হবে?
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩, ০৭:৩০
বর্ষার মৌসুমে কাঁকরোল কেন খেতে হবে?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কাঁকরোল একটি জনপ্রিয় সবজি ৷ এটি পুষ্টিকরও বটে ৷ এতে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, ক্যারোটিন, আমিষ, ভিটামিন-বি, শ্বেতসার ও খনিজ পদার্থ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে৷ বাংলাদেশে কুমড়ো পরিবারের যতো সবজি আছে তার মধ্যে কাঁকরোলের বাজার দর ও চাহিদা বাজারে অনেক বেশি৷


পুষ্টিবিদেরা বলছেন, উচ্ছে বা করলার মতো তেতো না হলেও কাঁকরোলের গুণ কিছু কম নয়। ফাইবার, ভিটামিন এবং অন্যান্য জরুরি পুষ্টিগুণে ভরপুর কাঁকরোল কিন্তু রোগ প্রতিরোধশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও আরও কিছু গুণ রয়েছে কাঁকরোলের।


প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁকরোলে ( ভোজন যোগ্য ) থাকে প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, চর্বি ১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ১.১ গ্রাম, শর্করা ৭.৭ গ্রাম, শক্তি ৫২ কিলো ক্যালোরি, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিগ্রা, ফসফরাস ৪২ মিগ্রা, আয়রন ৪.৬ মিগ্রা এবং ক্যারোটিন ১৬২০ মাইক্রো গ্রাম। বাংলাদেশে কাঁকরোল চাষের কোনো পরিসংখ্যান না-থাকলেও এটি সারা দেশে চাষযোগ্য গ্রীষ্মকালীন একটি অতি প্রচলিত সবজি।


১) ওজন নিয়ন্ত্রণ করে


ওজন নিয়ন্ত্রণের মূল কথাই হল কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া। সে দিক থেকে কাঁকরোল অনেকটাই এগিয়ে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ১০০ গ্রাম কাঁকরোলে ক্যালোরির পরিমাণ মাত্র ১৭। তা ছাড়া এই সব্জিতে জলের পরিমাণও বেশি। সুষম খাবারের তালিকায় রাখা যেতেই পারে কাঁকরোল।


২) চোখের জন্য ভাল


কাঁকরোলে রয়েছে ভিটামিন এ, যা চোখের জন্য খুবই উপকারী। চোখের পেশি মজবুত করতে কাঁকরোল খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।


৩) তারুণ্য ধরে রাখে


কাঁকরোলে ‘আলফা-ক্যারোটিন’, ‘লুটেইন’, ‘বিটা-ক্যারোটিন’ এবং ‘জ়িজ়ানন্থিনস’-এর মতো অজস্র ‘অ্যান্টি এজিং’ যৌগ রয়েছে। যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।


৪) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে


অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন ক্ষরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কাঁকরোল। ফলে রক্তে অতিরিক্ত শর্করা থেকে ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে। এ ছাড়াও কাঁকরোলের ‘হাইপোগ্লাইসেমিক’ যৌগগুলি অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলিকে সুরক্ষিত রাখতেও সাহায্য করে।


৫) হজমে সহায়তা করে


এছাড়াও,


** কাঁকরোলে ফাইবারের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। যা অন্ত্র ভাল রাখতে সাহায্য করে। ফলে বিপাকহার উন্নত হয়। ফাইবারের গুণে অনেক ক্ষণ পর্যন্ত পেট ভর্তি থাকে। বার বার খিদে পাওয়ার প্রবণতা কমে।


** কাঁকরোলে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম। এতে রয়েছে ফাইবার, মিনারেল, ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।


** গর্ভকালীন সময়ে অনেকের স্নায়ুবিক ত্রুটি দেখা দেয়। কাঁকরোল ভিটামিন বি এবং সি-এর ভালো উৎস। যা কোষের গঠন ও নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলে স্নায়ুবিক ত্রুটি হয়না।


** কাঁকরোলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট, পলিপেপটিড-পি এবং উদ্ভিজ্জ ইনসুলিন আছে। যা ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করে যকৃৎ, পেশি ও শরীরের মেদবহুল অংশে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষণ করে।


** কাঁকরোল ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় হজমে সাহায্য করে।


** কাঁকরোল ভিটামিন সি পরিপূর্ণ হওয়ায় প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টরূপে কাজ করে। যা শরীরের টক্সিন দূর করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।


** কাঁকরোলে আছে বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন, লিউটেইন, যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না, ত্বককে করে তারুণ্যদীপ্ত।


** কাঁকরোলের ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।


** জ্বর হলে কাঁকরোল পাতার রস কিছু সময় সেদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে পান করুন, জ্বর কমে যাবে।


** পাইলসের সমস্যা থাকলে পাঁচ গ্রাম কাঁকরোল বাটার সঙ্গে পাঁচ গ্রাম চিনি মিশিয়ে দিনে দুইবার পান করুন, পাইলস নিরাময় হবে।


** ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতেও কাঁকরোলের জুড়ি নেই। গোসলের সময় কাকরোল বাটা স্ক্রাব হিসেবে গায়ে মাখুন, ১০ মিনিট শরীরে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এতে দুর্গন্ধও কমে যাবে এবং ত্বকও কোমল থাকে।


** কাশি হলে তিন গ্রাম কাঁকরোল বাটা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে তিনবার পান করুন, কাশি কমে যাবে।


** শ্বাসকষ্ট হলে ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম কাঁকরোলের শেকড় বাটার সঙ্গে এক চা চামচ আদার রস ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খান, আরাম পাবেন।


** কিডনিতে পাথর হলে ১০ গ্রাম কাঁকরোল বাটা এক গ্লাস দুধে মিশিয়ে খান। এভাবে প্রতিদিন পান করুন, দ্রুত সেরে যাবে।


** কাঁকরোলের বিভিন্ন অংশ ভারতে ডায়াবেটিস রোগের ঐতিহ্যবাহী ভেষজ প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com