ছুটির দিনগুলোতে শিশুর শরীর-মনের বিকাশ সম্ভব যেভাবে
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৪৪
ছুটির দিনগুলোতে শিশুর শরীর-মনের বিকাশ সম্ভব যেভাবে
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

চলে আসছে ঈদের ছুটি। তাছাড়া রোজায় বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ, যদিও রোজায় সময়টা চলে যায় সিয়াম সাধনা, সেহেরি-ইফতার, শপিং নানা ঝক্কির কাজে। তাই কাজে লাগানো যেতে পারে ঈদের ছুটিটিকে। ঈদের ছুটি মানেই দূরদর্শনে বা নিজ গ্রামে যাওয়া। 


তবে বেড়াতে গেলেও এখন অবশ্য সেই অপেক্ষার ধার ধারে না শিশুরা। মুঠোফোন, টিভির নানা চ্যানেলে তাদের কাছে প্রতিনিয়ত হাজির ডোরেমন, মাসা, পেপাদের দুনিয়া। 


তবে রোজা ও ঈদের ছুটি যেন শুধু পর্দায় আর পড়ায় না কেটে যায়, সেই খেয়াল রাখতে হবে বড়দের। গল্পের বই, ছবি, রং তো বটেই... গাছ লাগানো, ঘর সাজানো, নতুন কিছু বানানো বা ছোটখাটো রান্নাতেও সঙ্গী করে নিন আপনার সন্তানকে।


আর যদি অফিস, কাজ সামলে কয়েকটা দিন ফাঁকা করতে পারেন তা হলে শুধু ঘুরতে যাওয়া নয়, কোনও রিভার ক্যাম্প, জঙ্গল সাফারি বা ট্রেকিংয়ের কথাও ভাবতে পারেন। লক্ষ্য একটাই, খুদে শুধু লেখাপড়ায় নয়, শরীর-মন সব দিক দিয়ে সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠুক।


পেরেন্টিং কনসালট্যান্টরা বলেন, ‘‘বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কগনিটিভ আর মোটর স্কিল, অর্থাৎ জ্ঞান আর পেশির সক্রিয়তা দুটোরই উন্নতি জরুরি।’’ তাঁর মতে, গরমের ছুটিতে বাচ্চাদের ব্যস্ত রাখাটাকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।


** বাইরে খেলাধুলো। যে সব বাচ্চা ভোরে উঠে স্কুলে যায়, ফিরতে বিকেল হয়, তাদের ক্ষেত্রে খেলার সময় থাকে না। এই সময়ে তাদের নানা রকম প্রশিক্ষণ শিবিরে ভর্তি করানো যেতে পারে। ফুটবল, সাঁতার, বাস্কেটবল, যার যে দিকে আগ্রহ। এতে সক্ষমতা বাড়বে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। পজিটিভ হরমোন সেরেটোনিনও বেশি ক্ষরিত হবে শরীর থেকে।


** মাজাঘষা করা যেতে পারে সৃজনশীল নানা দিকও। কারও আগ্রহ থাকলে নতুন ভাষা শিখতে পারে, হাতের কাজও শেখা যেতে পারে। এখন অনেক সংস্থা সামার ক্যাম্প করে। সেখানে নানা বয়সের ছোটদের জন্য নানা রকম ক্রিয়াকলাপ থাকে। মা-বাবারা একটু খোঁজখবর রেখে সেখানে নিয়ে যেতে পারেন সন্তানকে। মিনিয়েচার কিছু তৈরি, মাটির জিনিস বানানো, মাটির পাত্রে ছবি আঁকারও নানা ওয়ার্কশপ হয়। সেখানে নিয়ে গেলেও সন্তান নতুন কিছু শিখবে। মন ভাল থাকবে। বাড়বে উদ্ভাবনী শক্তি।


** বাড়ির নানা কাজের ধারণা দেওয়া যেতে পারে সন্তানকে। বয়সোচিত কাজ শেখালে শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। সক্রিয়তা বাড়ে। আবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও নিবিড় হয়। মা-বাবার কাজটা করতে কতখানি কষ্ট হয়, সেটা বুঝতে পারে সে। ফলে পরবর্তীতে সাহায্য করার মানসিকতা তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে পুরস্কারের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। পায়েল ঘোষের পরামর্শ, বাচ্চা দিনে ঘরের কাজ, তার নিজের কাজ ক’টা করল, তার ভিত্তিতে পয়েন্ট দেওয়া যেতে পারে। সপ্তাহ শেষে কত পয়েন্ট জমল, তা দেখে ছোট কিছু পছন্দসই উপহার, খাবার কিনে দেওয়া যেতে পারে। যাদের মা-বাবা দু’জনেই কর্মরত, কাজ ভাগ করা থাকলে সেই বাচ্চারও বাড়িতে একা লাগবে না।


** এ ছাড়া, স্কুলের, পাড়ার, নাচ-গানের বন্ধুদের ডেকে বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করা যেতে পারে। তাতেও সম্পর্ক মজবুত হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে বাচ্চাটা স্কুলে বন্ধুদের কাছ থেকে দুর্ব্যবহার পায় বা অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতার শিকার হয়, সেই বন্ধুরাই বাড়িতে এলে, একসঙ্গে খেলাধুলো হলে ভাল মিলমিশ হয়ে যায়। টিভি, মোবাইল আসক্তি কাটিয়ে এই সামাজিক যোগাযোগ, মানসিক বিকাশটা জরুরি।’’


** সন্তানকে নিয়ে বাড়ির আশপাশে, মাঠ, পার্ক বা বাজারেও যেতে পারেন। কী ভাবে জীবন চলে, কত ধরনের মানুষ, রকমারি সাজপোশাক, কথা বলার ধরন দেখতে পাবে সে। যত দেখবে, শুনবে তত বড় হবে ওর গণ্ডিটাও।


** দেখার মাঝে হয়তো কেউ কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে বা নেতিবাচক মন্তব্য করছে, সেখানেই ওর মনের ছাঁকনিটা তৈরি করে দেওয়ার সুযোগ পাবেন আপনি। একটু সংবেদনশীল হতে শিখবে ও। হয়তো বয়স্ক কারও বাজারের একটা ব্যাগই তাকে একটু বয়ে দিতে বলুন। এতে সে সাহায্য করতে শিখবে। তার সঙ্গে শিখতে পারবে ঠিক-ভুলের ফারাকটা। আর স্বাবলম্বী হবে। কোন জিনিসটার কত দাম, রাস্তাঘাটে চলতে গেলে কী-কী বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার... শিখে যাবে। আগামী দিনে পৃথিবীর যে প্রান্তেই সে থাকুক, নিজের পাশাপাশি অন্যকে গুরুত্ব দেওয়া, জায়গা দেওয়া যে জরুরি, বুঝবে সে। মূল্যবোধ তৈরি হবে। আবার একা থাকতে হলে নিজের কাজটুকু করে নিতে কোনও অসুবিধে হবে না।


সন্তানকে সার্বিক ভাবে গড়ে তোলার এই কাজ এক দিন বা এক মাসের নয়। তবে ছুটির সময়টা কাজে লাগানো যায় নিঃসন্দেহে।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com