শীতকাল মানেই আলসেমি। তাছাড়া, শীতের আমেজে ঠান্ডায় মোটা হয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। আর আলসেমি তো আছেই। ফলে শরীরচর্চা করার উৎসাহ হারিয়ে যায়। তার উপর শীতকাল মানেই উৎসবের মৌসুম। বিয়েবাড়ি থেকে পিকনিক— ভূরিভোজ ইত্যাদি। তেল-মশলাদার খাবার স্বাভাবিক ভাবেই ওজন বাড়িয়ে দেয়।
এদিকে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম উপায় হল শরীরচর্চা। সেটাই যদি বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে ওজন হাতের মুঠোয় রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। শীতকালে কি তা হলে মোটা হয়ে যাওয়াই একমাত্র অবস্থা? ওজন কমানোর কি কোনও উপায় নেই? আছে।
শীতের ৩ সবজি ওজন কমাতে কাজ করে ম্যাজিকের মতো। জেনে নিবো সেই ৩ সবজির গুণাগুণ,
বেগুন
বেগুনের কোনও গুণ নেই, এ কথা যারা বলেন তারা এই সবজিটির অনেক গুণের সম্পর্কেই হয়তো জানেন না। পুষ্টিবিদদের মতে, বেগুন পুষ্টিতে ভরা একটা সবজি। পুষ্টিগুণে ভরা বেগুন আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যার মতো একাধিক শারীরিক সমস্যার সমাধানে বেগুন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সারা বছর পাওয়া গেলেও, শীতে বেগনি রঙের বেগুন বেশি পাওয়া যায়। পুষ্টিবিদদের মতে, সবুজ নয়, ওজন কমাতে বেগনি রঙের পাকা বেগুন বেশি উপকারী। ভর্তা থেকে পোড়া— সব ধরনের পদেই বেগুন সুস্বাদু। এই সব্জিতে ভিটামিন, প্রোটিন এবং মিনারেলসের পরিমাণ অনেক বেশি। অন্যান্য সব্জির তুলনায় বেগুনে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম। শর্করাও কম পরিমাণে থাকে। ফলে শীতে ওজন হাতের মুঠোয় রাখতে রোজের পাতে রাখতে পারেন বেগুন।
ক্যাপসিকাম
১০০ গ্রামের একটি ক্যাপসিকামে রয়েছে ৮৬০ মিলিগ্রাম প্রোটিন, ৪ দশমিক ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ দশমিক ৭০ মিলিগ্রাম চর্বি, ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ৩৭০ আইইউ ভিটামিন-এ। এ ছাড়া সামান্য পরিমাণ ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি৬, থায়ামিন, লেবোফ্লেবিস ও ফলিক এসিড পাওয়া যায়।
খনিজ উপাদানের মধ্যে ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, আয়রন ৩৮০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৭৫ মিলিগ্রাম ও ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। এ ছাড়া জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও ফ্লোরাইড সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায়।
ঝাল স্বাদের এই সব্জি শরীরের অনেক সমস্যা নিমেষে দূর করতে সাহায্য করে। ওজন কমিয়ে স্থূলতার ঝুঁকি কমাতেও এর জুড়ি মেলা ভার। ক্যাপসিকামে রয়েছে থার্মোজেনেসিস নামক উপাদান। এটি শরীরের ক্যালোরি পুড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করে। শীতের রান্নায় বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতে পারেন ক্যাপসিকাম। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও ক্যাপসিকাম উপকারী।
বাঁধাকপি
শীতের আরও এক জনপ্রিয় সব্জি হল বাঁধাকপি। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ এই সব্জি ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক কাপ বা ৯০ গ্রাম বাঁধাকপিতে রয়েছে ২২ ক্যালরি শক্তি। প্রোটিন আছে ১ গ্রাম, ফাইবার ২ গ্রাম; আর প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সির ৫৪ শতাংশ, ভিটামিন কের ৮৫ শতাংশ, ফোলেটের ১০ শতাংশ, ম্যাঙ্গানিজের ৭ শতাংশ, ভিটামিন বি সিক্সের ৬ শতাংশ, ক্যালসিয়ামের ৪ শতাংশ, পটাশিয়ামের ৪ শতাংশ ও ম্যাগনেশিয়ামের ৩ শতাংশ মেলে।
শরীরে জমে থাকা যাবতীয় টক্সিন বাইরে বার করে দিতে পারে বাঁধাকপি। শরীর ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখে বাঁধাকপি। শীতকালে ওজন বেড়ে যাক, তা না চাইলে পাতে রাখুন বাঁধাকপি।
বাঁধাকপি খুব মিহি করে কেটে ১০ মিনিট রেখে সালাদে ব্যবহার করলে এর সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। এর ফাইবার হজমে সহায়তা করার পাশাপাশি মন্দ কোলেস্টেরল কমায় এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। পাকস্থলী ও অন্ত্রের ভেতরের অংশকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পাকস্থলীর আলসার নিরাময় করে।
বাঁধাকপিতে রয়েছে ভুরপুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। এর ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস কোষকে সজীব রাখে, কোষের প্রদাহ দূর করে, ফোলা কমায়; যা ক্যানসার, হার্টের অসুখ, ডায়বেটিস ও আলঝেইমার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]