বাজারে নানা রকম তেলের চাহিদা বেড়ে গেলেও প্রাচীন সরিষার তেলের গুরুত্ব কিন্তু এতটুকুও কমেনি।
সরিষাবীজ থেকে তৈরি হয় সরিষার তেল। এটি গাঢ় হলুদ বর্ণের এবং বাদামের মতো সামান্য কটু স্বাদ ও শক্তিশালী সুবাসযুক্ত তেল। ওমেগা আলফা ৩ ও ওমেগা আলফা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় সরিষার তেলকে স্বাস্থ্যকর তেল বলা হয়। বিভিন্ন ভোজ্য তেলের ওপর করা একটি তুলনামূলক সমীক্ষায় দেখা যায়, সরিষার তেল ৭০ শতাংশ হৃৎপিণ্ড–সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমায়। সরিষার তেল ব্যবহারে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়, যা হৃদ্রোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।
১) সংক্রমণ কমায়
ঠান্ডার মরসুমে বাড়ে খুশকির সমস্যা। খুশকি ছাড়াও মাথার ত্বকে নানা রকম সংক্রমণ হতে পারে। সরিষার তেল মাথার ত্বকে ব্যাক্টেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণু তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রোধ করে।
২) ত্বকের জন্য ভাল
আবহাওয়ায় আর্দ্রতার অভাব হলে ত্বক অস্বাভাবিক হারে শুষ্ক হতে শুরু করে। ঘনত্ব বেশি হওয়ায় সরাসরি দেহে সরিষার তেল মাখতে সমস্যা হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে বানানো যে কোনও এক্সফোলিয়েটের মধ্যে মেশাতে পারেন সরিষার তেল। শুষ্ক ত্বক থেকে ফাটা গোড়ালি, সব সমস্যার মুশকিল আসান সরিষার তেল।
৩) চুল প্রাকৃতিক উপায়ে কালো করতে
এখন অল্প বয়সেই অনেকের চুলে রুপোলি রেখা দেখা যায়। কম বয়সে চুল পাকার সমস্যায় প্রতি রাতে চুলে সরিষার তেল লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে দিন। এর পর চুল ধুয়ে ঘুমোতে যান।
৪) রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে
হয়তো রোজের ব্যস্ততায় সানস্ক্রিন কিনতে ভুলেই গিয়েছেন। তা বলে কি রোদে এমনিই বেরিয়ে পড়বেন? বরং বেরোনোর আগে অত্যন্ত অল্প পরিমাণে সরিষার তেল মুখে লাগিয়ে নিন। এটা ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করবে। কাজ করবে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের মতোই। তবে বেশি পরিমাণ তেল লাগালে ত্বকে ধুলোবালি আটকে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।
৫) ক্যানসার দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে দেয় না
হালের বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নিয়মিত সরিষার তেল খেলে শরীরে ক্যানসার আক্রান্ত কোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে না। প্রাথমিক ভাবে কয়েকশো ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সর্ষের তেল মলাশয়ের ক্যানসার রুখে দিতেও সক্ষম।
৬) ওজন কমাতে সরিষার তেল
রিবোফ্ল্যাভিন (Riboflavin) ও নায়াসিন (Niacin) সমৃদ্ধ সরিষার তেল শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৭) দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায়
সুস্থ দাঁত ও জিঞ্জাভাইটিস ও পেরিওডন্টাইটিস রোগ প্রতিরোধে সরিষার তেল সহায়ক। ১/২ চা চামচ সরিষার তেল + ১ চা চামচ হলুদের গুঁড়া + ১/২ চা চামচ লবন মিশিয়ে দাঁত ও মাড়িতে হালকা করে দু’বেলা ঘষুন।
৮) ত্বকের তামাটে ভাব দূর করে
সরিষার তেল ত্বকের তামাটে ভাব ও দাগ দূর করে এবং ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে পারে। এ জন্য বেসন, দই, সরিষার তেল ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি আপনার ত্বকে লাগান। ১০-১৫ মিনিট পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন।
৯) ঠোঁটফাটা রোধ করে
ঠোঁট ফাটা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। অনেকের এই সমস্যা এত বেশি হয়ে থাকে যে লিপবাম কাজ করে না। অল্প একটু সরিষার তেল নিয়ে ঠোঁটে লাগান। এই প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ঠোঁটফাটা রোধ করে ঠোঁট নরম কোমল করে তোলে। শুষ্ক ঠোঁটের যত্নে সরিষার তেল ভালো কাজ করে। লিপবাম বা চ্যাপস্টিক—এগুলোর পরিবর্তে সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন।
১০) কার্ডিওভাসকুলার উপকারিতা
সরিষার তেল মনোস্যাচুরেটেড ও পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাটে সমৃদ্ধ বলে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমে।
সতর্কতা
সরিষা তেল ব্যবহারের আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে জেনে নিতে হবে যে আপনার সরিষার তেল খাঁটি কি না? নকল বা ভেজাল সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় সরিষার তেল কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু যেকোনো সরিষার তেল কি আমাদের জন্য উপকার বয়ে আনবে? মোটেও তা নয়। দোকানের খোলা সরিষার তেলে ভেজাল মিশ্রিত থাকে, যা ব্যবহার করলে নানা রকম অসুখ–বিসুখ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই খাঁটি সরিষার কেনার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে।
সরিষার তেলে সস্তা ভেজাল দেওয়ার জন্য অনেক সময় শেয়ালকাঁটার বীজের তেল ব্যবহার হয়। অতএব সতর্ক থাকুন।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]