ওজন কমাতে ভাত-রুটি বাদ; শরীরের ক্ষতির কারণ হচ্ছে কী?
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৮
ওজন কমাতে ভাত-রুটি বাদ; শরীরের ক্ষতির কারণ হচ্ছে কী?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

যারা ওজন কমাতে চান, তাদের কাছে কার্বোহাইড্রেট রীতিমতো ভীতিকর। ওজন কমাতে প্রথমেই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়ে ভাত-রুটি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে খাবারের তালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়ে দিলে, তা শরীরে জন্য ভালো না-ও হতে পারে।


গবেষকেরা প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, যাঁরা শর্করা থেকে দৈনিক ৫০-৫৫ শতাংশ ক্যালরি গ্রহণ করেন (খাদ্যগ্রহণে যুক্তরাজ্যের নির্দেশিকা ও মাঝারি মাত্রায় শর্করা খাওয়া), তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি অন্যদের (যাঁরা খুব কম বা বেশি কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করে) তুলনায় কম।


পুষ্টিবিদেরা বলছেন, সুস্থ থাকতে হলে সুষম খাবার খেতে হবে। নিজে নিজে কিছু করা যাবে না। অবশ্যই পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে তা করতে হবে। সুস্থ জীবনের জন্য প্রয়োজন তিনটি জিনিস। দিনের ঘুম বাদ দিতে হবে, রাতে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। একবারে বেশি না খেয়ে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার খাবার খেতে হবে। আর অবশ্যই ব্যায়াম করতে হবে। অল্প খেয়ে শুয়ে-বসে থাকলে লাভ হবে না। ক্যালরি বার্ন করতে হবে। বাইরে হাঁটার সুযোগ না থাকলে ঘরে কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। খেলাধুলা ও নাচ করলেও প্রচুর ক্যালরি দহন হয়।


ভাত আর রুটি দুটোই শর্করা বা শর্করা। সব শর্করাই খাওয়ার পর পরিপাকতন্ত্রে গিয়ে ভাঙে, তারপর রক্তে শোষিত হয় গ্লুকোজ বা মনোস্যাকারাইড হিসেবে। সেই গ্লুকোজ হলো আমাদের মূল চালিকা শক্তি। শরীরের প্রায় প্রতিটি শারীরবৃত্তীয় কাজে দরকার হয় এ গ্লুকোজ। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্লুকোজ বা শর্করা দেহে সঞ্চিত হয় চর্বি বা ফ্যাট হিসেবে। আমাদের মতো যারা শর্করা খাওয়া জাতি, সেই এশীয়দের তাই শরীরের মধ্যভাগ বা ভুঁড়ি চর্বিতে ঠাসা, লিভারে চর্বি, পেটের অভ্যন্তরে প্রতিটি অঙ্গের গায়ে চর্বি (ভিসেরাল ফ্যাট)।


বডি মাস ইনডেক্স (উচ্চতা অনুসারে ওজন) অপেক্ষাকৃত কম হলেও এশীয়দের শরীরের মধ্যভাগের এ চর্বিই হলো সব ক্ষতির মূল কারণ। বিজ্ঞানীরা এ ধরনের শরীরকে বলেন আপেল শেপড বডি, মানে মধ্যভাগ স্ফীত। আরেক ধরনের শরীর হলো পিয়ার শেপড বডি, মানে বাহু-কাঁধ-হাত-পা পেশিবহুল হলেও মধ্যভাগ সরু। আমরা হলাম আপেল। পৃথিবীর এ অঞ্চলে তাই দ্রুত বাড়ছে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি। তাই শর্করা অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলেও খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে, আর খেতে হবে বেছে। যে শর্করায় অপেক্ষাকৃত গ্লুকোজ কম উৎপন্ন হয়, সেটাই আদর্শ।


আবার, ১/৩ কাপ ভাতে আছে ১ গ্রাম আমিষ, ১৮ গ্রাম শর্করা, ০.১ গ্রাম ফ্যাট। এ শর্করা আবার প্রায় ফাইবারশূন্য, মানে সবটাই ভেঙে অতিরিক্ত গ্লুকোজ উৎপন্ন করে। আর এই সব মিলিয়ে আপনি ক্যালরি গ্রহণ করবেন ৮০ ক্যালরির মতো।


অন্যদিকে একটা হাতে বেলা রুটি বা চাপাতিতে আছে ৩ গ্রাম আমিষ, ১৫ গ্রাম শর্করা (যার মধ্যে অন্তত ২ গ্রাম হলো ফাইবার মানে শোষণ হবে না) আর ০.৪ গ্রাম ফ্যাট। আর মোট ক্যালরির পরিমাণ ৭১।


পুষ্টিবিদরা বলেন, শরীরের সমস্ত কলকব্জা সচল রাখতে গেলে প্রতি দিন নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী প্রোটিন, ভিটামিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটের মতো জরুরি উপাদানগুলির জোগান দিতেই হবে। বয়স এবং শারীরিক সুবিধা-অসুবিধা বুঝে ব্যক্তিবিশেষে প্রতি দিন ৬০ থেকে ১৩০ গ্রাম পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া, হঠাৎ খাবারের তালিকায় এমন পরিবর্তন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে বলেও মনে করেন চিকিৎসকদের একাংশ।


চাইলে ব্রাউন রাইস কিংবা বাদামি রঙের চালের ভাত খেতে পারেন। কেননা, এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ রয়েছে। শুধু এক কাপ ব্রাউন রাইসের মধ্যে রয়েছে ২২০ ক্যালরি এবং ৪ গ্রাম ডায়েটের উপযুক্ত আঁশ। গ্রামে অনেকে ভাতের বদলে মিষ্টি আলু সেদ্ধ খান। এ আলু শর্করা হলেও এতে প্রচুর আঁশ থাকায় জিআই কম।


সাদা ভাতে ব্রাউন রাইসের (ঢেঁকিছাঁটা লাল চাল) তুলনায় ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে, তাই এটি খেতে হবে স্বল্প পরিমাণে। আপনার যদি ৬০ শতাংশ শর্করার প্রয়োজন থাকে, তাহলে আপনি সেটি প্রতি বেলার খাবারে ভাগ করে নিন। ধরা যাক, দিনে ৭ থেকে ৮ বার খাবারে ৬ শতাংশ করে শর্করা ভাগ করে নিলেন।


খাদ্যতালিকা থেকে ভাত-রুটি একেবারেই বাদ দিলে যেসব সমস্যায় পড়তে পারেন,


১) মাথা ধরা এবং উদ্বেগ


ঘুম থেকে ওঠার পরও মাথা ধরে থাকে? ভেবে দেখুন শরীরে শর্করার অভাব হচ্ছে না তো? কারণ, মস্তিষ্ক তার সব কাজ পরিচালনা করার জন্য শর্করার উপর নির্ভর করে। শুধু তা-ই নয়, শরীরে সেরেটোনিন হরমোন ক্ষরণেও সহায়তা করে কার্বোহাইড্রেট। তাই কার্বের ভাঁড়ারে টান পড়লেও কিন্তু মনখারাপ বা হঠাৎ উদ্বেগ বাড়তে পারে।


২) দুর্বলতা


কাজ করতে গেলে যে শক্তি প্রয়োজন হয়, তার বেশির ভাগই আসে শর্করার জাতীয় খাবার থেকে। কিন্তু খাবারের তালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলে, শরীর সেই পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় করতে পারে না। ফলে কায়িক পরিশ্রম করতে গেলে অতিরিক্ত দুর্বল লাগে।


৩) কোষ্ঠকাঠিন্য


ডায়েট করা শুরু করলে অনেকেই প্রথম দিকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। তালিকা থেকে কার্ব এবং ফাইবারজাতীয় খাবার বাদ দেওয়ার ফলে এই সমস্যা হতেই পারে।


শর্করা বাদ দেওয়া যেমন খারাপ, তেমনি অতিরিক্ত শর্করা খাওয়াও ক্ষতিকর। কেননা, অতিরিক্ত শর্করা শরীরে চর্বি তৈরি করে। ফলে ওজন বেড়ে যায় এবং অন্ত্রকে উত্তেজিত করে। এ জন্য শর্করা খেতে হবে সীমিত পরিমাণে, একেবারে বর্জন নয়।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com