সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধের রায় ফাঁসের ঘটনায় তার স্ত্রী-পুত্র ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলার রায় আবারও পিছিয়ে গেছে। রবিবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর নতুন তারিখ ঠিক করে দিয়েছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যাললয়ের শিক্ষার্থীদের হলের দাবিতে আন্দোলনে রাস্তা বন্ধ থাকায় এ মামলায় কারাগারে থাকা চার আসামিকে এদিন আদালতে আনা হয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর। জামিনে থাকা সাকাপত্নী ফারহাত কাদের চৌধুরীও আদালতে উপস্থিত হন।
কিন্তু বেলা সোয়া ১টার দিকে বিচারক জানান, রায় প্রস্তুত করা সম্ভব না হওয়ায় তা পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে গত ১৪ অগাস্ট রায়ের দিন রাখা হলেও লেখা শেষ না হওয়ায় বিচারক তারিখ দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেন।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এ মামলায় দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হয় গত ৪ অগাস্ট। সেদিন শুনানিতে হাজির না থাকায় যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদেরের ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ হয়।
হুম্মামের আইনজীবী আমিনুল গণী টিটোর অভিযোগ, সেদিন শুনানিতে উপস্থিত হতে আদালত প্রাঙ্গণে নামার পরপরই ডিবি পরিচয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়। তবে আটকের খবর অস্বীকার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, হুম্মাম তাদের হেফাজতে নেই।
হুম্মামের সঙ্গে এই মামলার আসামি সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ছাড়া জামিনে থাকা বাকি চার আসামির জামিন বাতিল করে সেদিন কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
তারা হলেন ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলাম, সাকা চৌধুরীর ম্যানেজার মাহবুবুল আহসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী নয়ন আলী ও ফারুক হোসেন।
এ মামলায় অভিযুক্ত অপর আসামি আইনজীবী ফখরুলের সহকারী মেহেদী হাসান শুরু থেকেই পলাতক।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্য শুরু হয় ২৮ মার্চ।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় গতবছর নভেম্বরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সালাউদ্দিন কাদেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার রায় হয়েছিল ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর।
ওই রায়ের দিন সকালেই তার স্ত্রী, পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন। তারা রায়ের ‘খসড়া কপি’ও সংবাদকর্মীদেরও দেখান। তারা আদালতের রায় নিয়ে কটাক্ষও করেন।
রায় ঘোষণার পরদিন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) একেএম নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন। পরে ৪ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান শাহবাগ থানায় মামলা করেন।
২০১৪ সালের ২৮ অগাস্ট ডিবির পরিদর্শক মো. শাহজাহান এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন, যাতে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সালাউদ্দিন কাদেরের আইনজীবীর সহকারী মেহেদী বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখিয়ে ট্রাইবুনালের দুই কর্মীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের খসড়ার অংশবিশেষ বের করেন। ওই অংশটিই রায়ের দিন আদালতে সাংবাদিকদের দেখানো হয়।
আসামি নয়ন ও ফারুক এ মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলেও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর জানিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সালাউদ্দিন কাদের সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগে আপিল করেছিলেন। তা খারিজ হওয়ার পর তিনি রিভিউ আবেদন করেন। ওই আবেদনও খারিজ হওয়ার পর গত বছরের ২১ নভেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় সাবেক এই মন্ত্রীকে।
বিবার্তা/জিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]