যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছামৃত্যুর বৈধতা সংক্রান্ত বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা। এর মধ্য দিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর বৈধতা দেওয়ার পথে আরেক ধাপ এগোলো দেশটি।
২৯ নভেম্বর, শুক্রবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে বিলটির পক্ষে-বিপক্ষে কয়েক ঘণ্টা যুক্তিতর্ক উত্থাপন করা হয়। পরে পার্লামেন্টের ৩৩০ জন সদস্য বিলটির পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে ভোট দেন ২৭৫ জন।
বিলটি পাস হওয়ার জন্য এখন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে উত্থাপন করা হবে এবং পার্লামেন্টারি কমিটির অনুমোদন পেতে হবে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিলটি পাস হওয়ার ক্ষেত্রে আজকের ভোটটিই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা।
বিলটি পাস হলে যুক্তরাজ্যই হবে স্বেচ্ছামৃত্যুর বৈধতা থাকা দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল দেশ। বর্তমানে বিলটি নিয়ে ব্রিটেনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
টার্মিনালি ইল অ্যাডাল্টস (এন্ড অব লাইফ) নামের এই বিল অনুযায়ী, মানসিকভাবে সুস্থ তবে অসহনীয় ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং যার আর ছয় মাসও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই, এমন কেউ চিকিৎসকের সহায়তায় স্বেচ্ছায় মৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারবেন।
বিলটির সমর্থনকারীদের যুক্তি হলো- এটি অসুস্থ ব্যক্তির কাছে তার অসুস্থতার যন্ত্রণা থেকে বাঁচার এবং শান্তিতে মৃত্যুবরণে সহায়ক। সেইসঙ্গে এটি ওই অসুস্থ ব্যক্তি কখন ও কীভাবে মারা যেতে চান, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও ক্ষমতা প্রদান করছে।
বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির আইনপ্রণেতা কিম লিডবিটার বলেন, 'এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার, আমরা জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে কোনোটা বেছে নেওয়ার বিষয়ে কথা বলছি না। বরং আমরা কথা বলছি মুমূর্ষু ব্যক্তি কীভাবে মারা যেতে চান, সেটি বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে।'
তবে বিলটির বিরোধিতাকারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এই ভেবে যে, নিজেদের ভালোর জন্য নয়, বরং বিলটি পাস হলে অসুস্থ ও দুর্বল ব্যক্তিরা পরিবার এবং সমাজের জন্য বোঝা হওয়ার ভয়ে তাদের জীবন শেষ করতে এক ধরনের চাপ অনুভব করতে পারেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ভেতরে যখন বিলটি নিয়ে যুক্তিতর্ক চলছিল, তখন বাইরে নিজের বাবার ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫৪ বছর বয়সি সাবেক নার্স ইমা হবস। তিনি জানান, তার বাবাকে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।
বিলটির বিষয়ে তিনি বলেন, 'এর অর্থ এই নয় যে সমাজে যাদের প্রয়োজন নেই তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। এটি হলো আপনার প্রিয়জনকে তার নিজের ইচ্ছা পূরণের সুযোগ করে দেওয়া।'
বিশ্বের যে দেশগুলোতে স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ
বেশিরভাগ দেশেই স্বেচ্ছামৃত্যু অবৈধ হলেও বেশ কয়েকটি দেশে এটি বৈধ। আর এমন দেশগুলোতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যাও কম নয়, ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটিরও বেশি।
কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, স্পেন ও অস্ট্রিয়ায় ২০১৫ সালে স্বেচ্ছামৃত্যুকে বৈধতা দিয়ে আইন পাস করা হয়। ওই সময়ও যুক্তরাজ্যের এমপিরা এই ইস্যুতে ভোট দিয়েছিলেন।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]