
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাজের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়মুক্তি দেয়ার ঘটনাকে ‘বিপজ্জনক নজির’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সোমবার (১ জুলাই) তিনি বলেছেন, এই আংশিক দায়মুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবরে জানিয়েছে, রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের জন্য এই দায়মুক্তি প্রযোজ্য নয়। এই ঐতিহাসিক রায়ে প্রথমবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের কিছু মাত্রায় বিচারিক দায়মুক্তির স্বীকৃতি দেয়া হলো।
রায় ঘোষণার পর হোয়াইট হাউসে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় জো বাইডেন বলেন, যে মূলনীতির ওপর এই জাতি প্রতিষ্ঠিত, তা হলো- যুক্তরাষ্ট্রে কোনো রাজা থাকবে না। আইনের সামনে আমরা প্রত্যেক নাগরিক সমান। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়; এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও নয়।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যে রায় ঘোষণা করলেন, তা শুধু এই দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি বিপজ্জনক নজিরই নয়, বরং মার্কিন জনগণের জন্যও ক্ষতিকর। কারণ দেশের জনগণ আজ থেকে দেখছে যে একজন ব্যক্তি, যিনি ক্যাপিটল হিলে হামলার জন্য নিজের অনুসারীদের পাঠিয়েছিলেন, তিনি দায়মুক্তি ভোগ করছেন। সুপ্রিম কোর্টের উচিত এই রায়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের কাছে জবাবদিহি করা।
আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালের নির্বাচনেও তারা প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, তবে সে সময় ট্রাম্প ছিলেন প্রেসিডেন্ট।
২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেয়ার চেষ্টা, যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলায় উসকানি, পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য ঘুষ প্রদান, কর ফাঁকি এবং রাষ্ট্রের গোপন নথি সরানোর অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা চলছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এছাড়া কর ফাঁকি, সম্পদের তথ্য গোপন ও ২০১৫ সালের নির্বাচনের আগে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ প্রদানের ঘটনায় নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের জেলা আদালতে ইতোমধ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেসব অভিযোগের বিচারকাজও চলছে।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের নেতৃত্বে ৬ জন বিচারপতির একটি বেঞ্চ যে রায় ঘোষণা করেছেন— তাতে বলা হয়েছে দেশের প্রেসিডেন্টের পদে থাকা অবস্থায় যেসব দাপ্তরিক অপরাধমূলক পদক্ষেপ ট্রাম্প নিয়েছেন, সেসবের ক্ষেত্রে দায়মুক্তি ভোগ করবেন তিনি।
তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে যেসব অপতৎপরতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে, সেসবের জন্য বিচারের মুখোমুখী হতে হবে ট্রাম্পকে। এক্ষেত্রে কোনো সুবিধা তিনি পাবেন না।
এর আগে ৬ জানুয়ারির ঘটনা থেকে সুরক্ষা পেতে নিম্ন আদালতে আবেদন করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই আবেদন খারিজ হয়। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নিম্ন আদালতের সেই আদেশ বাতিল হয়ে গেল। একইসঙ্গে মামলাটি আরও পর্যালোচনার জন্য নম্ন আদালতে পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্তে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস।
সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তের কারণে এটা স্পষ্ট যে নভেম্বরের আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও ক্যাপিটলে হামলা সংক্রান্ত মামলার তেমন অগ্রগতি হবে না। আর তিনি যদি আবার ক্ষমতায় আসেন, তাহলে এ মামলায় বিচার বন্ধের চেষ্টা করতে পারেন। এমনকি নিজেকে ক্ষমা করেও দিতে পারেন।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]