অভিবাসন সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিতে ভোটে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ২২:১২
অভিবাসন সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিতে ভোটে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

২০৫০ সালের আগে দেশের জনসংখ্যা যাতে এক কোটি ছাড়িয়ে না যায় সেজন্য অভিবাসন সীমিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভোট হতে পারে সুইজারল্যান্ডে। তবে ভোটের দিন-তারিখ এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি।


সুইজারল্যান্ডের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের কোনও দাবি বা চাহিদার বিষয়টি ভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে। যে ইস্যুতে দেশটির জনগণ পরিবর্তন বা সংশোধন চায়, সেই ইস্যুতে দেড় বছরের মধ্যে দেশটিতে বসবাসরত এক লাখ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হয়।


দেশটির কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক দল সুইস পিপলস পার্টি (এসভিপি) বুধবার বার্নের ফেডারেল চ্যান্সেলারিতে এক লাখ ১৪ হাজার ৬০০ স্বাক্ষর যুক্ত আবেদন জমা দিয়েছে। দলটি মাত্র ৯ মাসেই এসব স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে।


সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল এসপিভি জানিয়েছে, 'গণ অভিবাসনের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে... যা আমাদের ছোট দেশটির ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।'


এসপিভি বলছে, এমন উদ্যোগ নেওয়ার কারণ হলো আমাদের এবং শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমাদের অনন্য ল্যান্ডস্কেপ, আমাদের উচ্চমানের জীবনযাত্রা, আমাদের সমৃদ্ধির গতি ধরে রাখাটা খুব জরুরি।


ফেডারেল চ্যান্সেলারিতে জমা দেওয়া স্বাক্ষরগুলো যাচাইয়ের পরই ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ও দিন-তারিখ চূড়ান্ত করা হয়। সাধারণত এই কাজটি সম্পন্ন করতে কয়েক মাস থেকে বছরও লাগতে পারে।


২০২২ সালে সুইজারল্যান্ডের স্থায়ী জনসংখ্যা ছিল ৮৮ লাখ ২০ হাজার। ২০১৮ সালে দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৮৫ লাখ ৪০ হাজার। দেশটির জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ বিদেশি।


এসপিভির আনা এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘‘সুইজারল্যান্ডের স্থায়ী জনসংখ্যা ২০৫০ সালের আগে এক কোটির বেশি হওয়া উচিত নয়।’’


স্থায়ী জনসংখ্যার মধ্যে দেশটিতে বসবাসরত সুইস নাগরিক এবং অন্তত এক বছর বসবাসের অনুমতি থাকা কিংবা অন্তত ১২ মাস ধরে দেশটিতে বসবাস করছেন এমন বিদেশিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।


প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যদি ২০৫০ সালের আগে দেশটির জনসংখ্যা ৯৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সরকার এবং পার্লামেন্ট আশ্রয় ও পারিবারিক পুনর্মিলন সংক্রান্ত ইস্যুতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।


যদি এই ব্যবস্থাগুলোও যথেষ্ট না হয়, তাহলে সুইজারল্যান্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকা মানুষের অবাধ চলাচলের চুক্তিটি বাতিল করতে হবে। জোট নিরপেক্ষ দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য না হলেও ২০০৮ সাল থেকে ভিসামুক্ত অবাধ চলাচলে শেনজেন জোনের অংশ। এসভিপি জানিয়েছে, এমন উদ্যোগ সুইজারল্যান্ডে অভিবাসন সৃষ্ট সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে।


তারা বলছে, অভিবাসনের কারণে দেশটিতে আবাসনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এছাড়াও বাসা ভাড়া, যানজট, গণপরিবহনে ভিড় বাড়ছে। স্কুলের মান কমছে, সহিংসতা এবং অপরাধ বাড়ছে, বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে, মাথাপিছু আয়ে স্থবিরতা নেমে এসেছে এবং স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম বেড়ে গেছে।


আর এসব কারণে ‘‘আমাদের সুন্দর গ্রামাঞ্চলে চাপ বাড়ছে’’ বলেও জানিয়েছে এসপিভি। সুইজারল্যান্ডের জার্মানভাষী অংশের কৃষকদের দল হিসাবে পরিচিত এসপিভি এখন দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তিনটি ইস্যুতে দলটি বিরোধিতা করে আসছে। এগুলো হলো, গণ অভিবাসন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং সুইজারল্যান্ডের নিরপেক্ষ অবস্থান।


দলটির নতুন নেতা ৪৩ বছর বয়সী পাহাড়ি কৃষক মার্সেল ডেটলিং অভিবাসন ইস্যুতে খুবই কট্টর হিসাবে পরিচিত। স্বাক্ষর জমা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আজ অনেক বিদেশি আসছেন, কিন্তু সঠিক মানুষেরা আসছেন না। আমাদের নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন প্রয়োজন, যা আমাদের দেশ এবং জনসংখ্যাকে উপকৃত করবে।’’


ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিস অনুমান করছে, ২০৫০ সালে দেশটির জনসংখ্যা হবে এক কোটি চার লাখ। তবে ঊর্ধ্বমুখী ধারা থাকলে সংখ্যাটি এক কোটি ১৪ লাখ হতে পারে। আর নিম্নমুখী প্রবণতা থাকলে সংখ্যাটি ৯৫ লাখে পৌঁছাতে পারে। সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস


বিবার্তা/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com