ক্ষুধায় প্রাণ গেল ফিলিস্তিনি শিশুর
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৫২
ক্ষুধায় প্রাণ গেল ফিলিস্তিনি শিশুর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে তীব্র ক্ষুধায় প্রাণ হারিয়েছে দুই মাসের শিশু। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। ইসরায়েলের অবরুদ্ধ ছিটমহলগুলোতে অনাহারে শিশু মৃত্যু হতে পারে জাতিসংঘের এমন সতর্কতার পরই ঘটনাটি ঘটেছে। খবর আল-জাজিরা।


ফিলিস্তিনের সংবাদ সংস্থা দ্য শিহাব জানিয়েছে, ক্ষুধায় মারা যাওয়া ওই শিশুর নাম মাহমুদ ফাতুহ। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) গাজার আল-শিফা হাসপাতালে মারা যায় সে।


ওই শিশুর মারা যাওয়ার সময়ের একটি ফুটেজ আল-জাজিরার কাছে রয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে এক শিশু। শ্বাস নিতে পারছে না সে। শ্বাস নিতে না পারায় বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠছে ওই শিশু।


মাহমুদ ফাতুহকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্যারামেডিক জানান, সে অপুষ্টিতে মারা গেছে।


এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, একজন নারী তার শিশুকে কোলে নিয়ে কাঁদছিল ও সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল। এমনটা দেখে আমরা তার কাছে ছুটে যায়। মায়ের কোলে থাকা শিশুটির ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, সে তার শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছে।


প্যারামেডিক বলেন, আমরা দ্রুত ওই শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বুজা যায় শিশুটি অপুষ্টিতে ভুগছে। মেডিকেলের কর্মীরা তাকে দ্রুত আইসিউতে নিয়ে যায়। সবশেষ কয়েকদিন ধরেই দুধ খেতে পারছিল না ফাতুহ। গোটা গাজাজুড়ে শিশুদের খাওয়ানোর মতো কোনো দুধ নেই।


গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। প্রতিক্রিয়ায় গাজা উপত্যকাসহ পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামলা শুরু পর থেকে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তা প্রদানে বাধা দিচ্ছে তারা। মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বৈশ্বিক আহ্বানেও সাড়া দিচ্ছে না তারা।


জাতিসংঘের অনুমান, গাজার ২৩ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির শিকার।


যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য, পানি ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। হামাসের সঙ্গে আলোচনার পর গত ডিসেম্বরে মানবিক সহায়তার জন্য একটি প্রবেশপথ খুলে দেয়। তবে, সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি বাহিনীর কঠোর চেক এবং কারেম আবু সালেম ক্রসিংয়ে ডানপন্থী বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভ সহায়তা সরবরাহকারী ট্রাকগুলোর প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেছে।


এছাড়া সহায়তার পণ্যগুলো গাজায় পৌঁছালে তা ঠিক মতো বিতরণ করা যাচ্ছে না। এর মূলে রয়েছে নিরাপত্তার স্বল্পতা। সহায়তা নেওয়া ট্রাকগুলোকে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশদের লক্ষ্যবস্তু করছে ইসরায়েলি বাহিনী।


গাজা উপত্যকার মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি উত্তরাঞ্চলে। গত অক্টোবরের শেষ থেকে মানবিক সহায়তা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন রয়েছে অঞ্চলটি। সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির তীব্র বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন।


গাজার উত্তরাঞ্চলের তামাল আদওয়ান হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক হুসাম আবু সাফিয়া বলেন, এখানকার পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। দিনকে দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে।


আল-জাজিরাকে এই চিকিৎসক বলেন, নবজাতকের মধ্যে দুর্বলতা এবং ফ্যাকাশে হওয়ার লক্ষণগুলো স্পষ্ট হচ্ছে। এর মূল কারণ তাদের মা অপুষ্টিতে ভুগছেন। দুর্ভাগ্যবশত গত সপ্তাহে অনেক শিশু মারা গেছে। আমরা যদি দ্রুত সঠিক সাহায্য না পাই তাহলে আমরা অপুষ্টির শিকার হব।


এমন পরিস্থিতি সত্ত্বেও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো উত্তর গাজায় সাহায্য দিতে পারছে না। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা গত সপ্তাহে উত্তর গাজায় সাহায্য পাঠাতে গিয়েও ব্যর্থ হয়। এর ঠিক দুদিন বাদেই তারা উত্তর গাজায় মানবিক সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দেয়।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com