প্রাণ বাঁচাতে চাচা-চাচির লাশের মধ্যে লুকিয়ে ছিল হিন্দ
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৫৩
প্রাণ বাঁচাতে চাচা-চাচির লাশের মধ্যে লুকিয়ে ছিল হিন্দ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গাজায় একটি পরিবারের গাড়িকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ট্যাংকের গুলিবর্ষণের ঘটনার ১২ দিন পর ওই পরিবারের ছয় বছর বয়সী ফিলিস্তিনি মেয়ে হিন্দ রাজাব নামের এক শিশুর লাশের সন্ধান মিলেছে। প্রাণ বাঁচাতে চাচা-চাচির লাশের মধ্যে লুকিয়ে ছিল হিন্দ রাজাব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেনি শিশুটি। ইসরায়েলি ট্যাংকের গুলিতে নিহত হয় ছোট্ট হিন্দ।


ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, শহরের তাল আল-হাওয়া শহরতলির একটি গোলচত্বরের কাছে হিন্দ, তার চাচা, চাচি এবং তাদের তিন সন্তানের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে।


হিন্দের আরেক চাচা সামীহ হামাদেহ বলেছেন, পরিবারটিকে বহনকারী গাড়িটি বুলেটে বিদ্ধ হয়ে ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল।


ওই গাড়ির ভেতরে থাকা পরিবারের পাঁচজনই নিহত হয়েছেন বলে শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) নিশ্চিত করে ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস)। এছাড়া তাদের উদ্ধারে পাঠানো রেড ক্রিসেন্টের দুই ক্রুও মারা গেছেন।


ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থা বলেছে, সেই হামলার ঘটনায় তারা তাদের ক্রু সদস্য ইউসুফ জেইনো এবং আহমেদ আল-মাদউনকে হারিয়েছেন।


কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, গত ২৯ জানুয়ারি চাচা-চাচি আর তিন চাচাতো ভাইবোনের সঙ্গে গাজা সিটি থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাল-আল-হাওয়ার দিকে যাচ্ছিল হিন্দ রাজাব। পথে তাদের বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরায়েলি ট্যাংক। এতে গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়। এ সময় ছোট্ট শিশু হিন্দ রাজাব গাড়িতে বসেই ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) জরুরি নম্বরে ফোন দিয়ে তাকে বাঁচাতে বলে।


সে বলতে থাকে, ‘আমি খুব ভয় পাচ্ছি। দয়া করে তোমরা আসো। অনুগ্রহ করে কাউকে এসে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলুন’। এসময় ফোনের এপাশ থেকে ব্যাপক গুলির শব্দ পান পিআরসিএসের জরুরি কল অপারেটরের।


শিশুটিকে শান্ত করার চেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছিলেন কল অপারেটরের। তিনি বলছিলেন, হিন্দকে মরিয়া হয়ে কাঁদতে শোনা যাচ্ছিল সে সময়।


কল অপারেটরদের সঙ্গে হিন্দের সেই কথোপকথনের রেকর্ড প্রকাশ হয়েছে। তাতে বোঝা গেছে, ওই সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে গাড়িতে থাকা স্বজনদের লাশের মধ্যে লুকিয়ে ছিল হিন্দ।


সেদিন ফোন কেটে যাওয়ার পর পরই হিন্দকে উদ্ধার করতে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল পিআরসিএসের দুই সদস্য। কিন্তু এর পর থেকে তাদেরও হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না।


সেই ঘটনার ১২ দিন পর আজ শনিবার ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, পরিবারের চার সদস্যসহ হিন্দ কালো রঙের কিয়া গাড়িতে ছিল। গাড়িটি ১২ দিন ধরে সেখানেই পড়ে আছে। এটির উইন্ডস্ক্রিন ও ড্যাসবোর্ড টুকরা টুকরা হয়ে পড়েছিল। গাড়ির চারপাশে গুলির চিহ্ন রয়েছে। গাড়িটির পেছনে কয়েক মিটার দূরে উল্টো অবস্থায় পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্সটি, হিন্দকে আনতে যেটি পাঠানো হয়েছিল। সেই গাড়ির ভেতরে মিলেছে ওই দুই ক্রুর মরদেহ।


তারা আরও জানিয়েছে, ব্যাপক গোলাগুলির কারণে ঘটনাস্থলে গত ১২ দিন ধরে পৌঁছাতে পারেনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মীরা।


বিবিসির কাছে পিআরসিএস দাবি করেছে, শিশুটিকে উদ্ধার করতে যাওয়া রেডক্রসের অ্যাম্বুলেন্সটিকে ইচ্ছা করে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।


পিআরসিএসের মুখপাত্র নিবাল ফারসাখ বিবিসিকে বলেছিলেন, ক্রুরা সেখানে পৌঁছানোর পর জানিয়েছিল, তারা হিন্দ যে গাড়িতে ছিল, সেটি দেখতে পেয়েছে এমনকি, তাকেও দেখতে পেয়েছে। সর্বশেষ যা শুনছিলাম তা ছিল গুলির শব্দ।


তথ্যসূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com