ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ বাতিল করল নয়াদিল্লি
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৪৭
ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ বাতিল করল নয়াদিল্লি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে অবাধ চলাচল বা ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ বাতিল করেছে নয়াদিল্লি।


৮ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।


বিবৃতিতে অমিত শাহ বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম বাতিল করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’


প্রসঙ্গত ভারতের মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল এবং নাগাল্যান্ড রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে মিয়ানমারের। এতদিন পর্যন্ত এসব সীমান্তে তেমন কড়াকড়ি ছিল না। দুই দেশের নাগরিকরা কোনো নথিপত্র ছাড়াই সীমান্ত পেরিয়ে উভয় দেশের ভেতর ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত চলাচল করতে পারতেন। দুই দেশের সীমান্তের দু’পাশের এই ৩২ কিলোমিটার এলাকাকে ‘ফ্রি রেজিম মুভমেন্ট’ বলা হয়।


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিতে এটি স্পষ্ট যে এখন থেকে আর সেই সুযোগ থাকছে না দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে মিজোরাম-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে; শিগগিরই মণিপুর-মিয়ানমার, অরুণাচল-মিয়ানমার এবং নাগাল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তেও বেড়া নির্মাণ শুরু হবে।


মিজোরামের সঙ্গে ৫১০ কিলোমিটার, মণিপুরের সঙ্গে ৩৯০ কিলোমিটার, অরুণাচল প্রদেশের সঙ্গে ৫২০ কিলোমিটার এবং নাগাল্যান্ডের সঙ্গে ২১৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে মিয়ানমারের। মিয়ানমারের সঙ্গে এই চার ভারতীয় রাজ্যের সীমান্তের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার। নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের দিক থেকেও মিয়ানমারের জনগণ এবং এই ভারতের এই চার রাজ্যের জনগণ বেশ কাছাকাছি।


২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী নেত্র অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন।


সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পরপরই ফুঁসে উঠেছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনতা। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। কিন্তু মিয়ানমারের পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভ দমনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করার পর ২০২২ সালের দিকে গণতন্ত্রপন্থিদের একাংশ জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দেওয়া শুরু করে।


২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ)। জোটভুক্ত ৩টি গোষ্ঠী তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এই সংঘাতের নেতৃত্বে রয়েছে।


সংঘাতের কারণে গত মঙ্গলবার নাগরিকদের মিয়ানমার ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিল ভারত। তার ধারাবাহিকতাতেই নেওয়া হলো ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম বাতিলের পদক্ষেপ।


এদিকে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলো ইতোমধ্যে এ পদক্ষেপের বিরোধিতা শুরু করেছে। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা পর পাল্টা এক বিবৃতিতে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাল দুহোমা বলেছেন, সীমান্তের দুই পাশে বসবাসকারী একই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর লোকজনকে আলাদা করা চেষ্টা সঠিক নয়।


বিবার্তা/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com