বছরের শুরুতে ফের উত্তপ্ত মণিপুর, দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত ৪
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩১
বছরের শুরুতে ফের উত্তপ্ত মণিপুর, দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত ৪
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

নতুন বছরের শুরুতেই ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর। রাজ্যটিতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


সোমবার (১ জানুয়ারি) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।


আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে রাজধানী ইম্ফলসহ উপত্যকার পাঁচ জেলায় কারফিউ জারি করেছে রাজ্য সরকার। থৌবল ছাড়াও এ তালিকায় রয়েছে, ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, বিষ্ণুপুর এবং ককচিং।


স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রথমে হামলায় নিহত তিন ব্যক্তিকে একটি গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথিমধ্যে লিলং চিংঝাও এলাকায় গাড়ি আটকায় বিপক্ষের দুষ্কৃতীরা। লাশ বহনকারী গাড়ির চালককে গুলি করে খুন করার পাশাপাশি গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।


ঘটনার পর উপত্যকার পাশাপাশি লাগোয়া পাহাড়ি অঞ্চলেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা এন বীরেন সিংহ যুযুধান উভয় পক্ষের কাছে সংযত হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকও ডেকেছেন তিনি।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন বছরের প্রথম দিনে মণিপুরে নতুন করে সহিংসতায় চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে রাজ্যের পাঁচটি জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।


থাউবাল জেলার স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, একদল পুরুষ চাঁদাবাজির জন্য স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে সেখানে এসেছিল। যদিও তাদের এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। তবে হামলার ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বন্দুকধারীদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।


স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, দলটি বন্দুক নিয়ে এখানে এসেছিল এবং একজন লোকের সাথে কথা বলার সময় - যাকে তারা চেনে বলে মনে হয় - মারামারি শুরু হয়। একপর্যায়ে তারা সবাইকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে।


এদিকে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং ভিডিও বার্তায় সহিংসতার নিন্দা করেছেন এবং জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন।


তিনি বলেছেন, নিরাপরাধ মানুষকে হত্যার ঘটনায় আমি আমার অপরিসীম দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা অপরাধীদের ধরতে পুলিশের দলগুলোকে একত্রিত করেছি। আমি হাত জোড় করে লিলং (যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে) বাসিন্দাদের কাছে অপরাধীদের খুঁজে বের করতে সরকারকে সাহায্য করার জন্য আবেদন করছি। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি- সরকার আইনের অধীনে ন্যায়বিচার দেওয়ার জন্য তার ক্ষমতার সব কিছু করবে।


এছাড়া সহিংসতার ঘটনার পর সমস্ত মন্ত্রী এবং শাসক দলের বিধায়কদের নিয়ে জরুরি বৈঠকও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। এনডিটিভি বলছে, নতুন করে হওয়া এই সহিংসতার পরে থাউবাল, ইম্ফল পূর্ব ও ইম্ফল পশ্চিম, কাকচিং এবং বিষ্ণুপুর জেলায় পুনরায় কারফিউ জারি করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


দুই দিন আগে মণিপুরের সীমান্ত শহর মোরেহতে সন্দেহভাজন বিদ্রোহী এবং পুলিশ কমান্ডোদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্য আহত হয়েছিলেন। বিদ্রোহীরা বেশ কয়েকটি আরপিজি নিক্ষেপ করে যা মোরেহের তুরেলওয়াংমা লেইকাইয়ের সিডিও ফাঁড়ি ভবনের ভেতরে বিস্ফোরিত হয়। আর সেখানেই কমান্ডোরা অবস্থান করছিলেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


২০২২ সালের ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব মণিপুর’ এর (এটিএসইউএম) কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল।


এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলো মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই মণিপুরের আদি-বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘাতের সূচনা হয়েছিল।


সংঘাত ঠেকাতে গত বছরের ৬ মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। নামানো হয় সেনা ও আসাম রাইফেলস বাহিনীকে। সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির ভার দেওয়া হয় সিআরপিএফের সাবেক প্রধান কুলদীপ সিংহকে।


কুলদীপ সিংহের অধীনে এডিজিপি (ইন্টেলিজেন্স) আশুতোষ সিংহকে সমগ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপারেশনাল কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও মণিপুরে সংঘাত থামেনি। জাতিগত এ সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ঘরছাড়া হয়েছে ৬০ হাজারেরও বেশি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com