মানবিক ত্রাণ সহায়তার আশায় গাজা
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:২২
মানবিক ত্রাণ সহায়তার আশায় গাজা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে শরণার্থী শিবির, হাসপাতালসহ বেসামরিক স্থাপনা। ফলে মানবিক সঙ্কটে পড়েছে গাজার বাসিন্দা। মানবিক ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার আশায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি প্রতিদিন জড়ো হচ্ছে গাজায়।


জাতিসংঘের মানবিক সহায়তার কেন্দ্রের সমন্বয়ক বলেছেন, 'রাফাহ ক্রসিং দিয়ে আজ যারা গাজা ছাড়লেন তাদের দিকে বেশি নজর ছিল আমাদের। কিন্তু যারা গাজায় রয়ে গেছেন তাদের পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে আমাদের।'


খান ইউনিস, জেনিন ক্যাম্প ও পশ্চিমতীরেও হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে ভেঙে গেছে গাজার সকল মৌলিক সেবা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি হামলার পর সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।


হাসপাতাল: গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েলের সংঘাতের পর ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৩টি হাসপাতাল সচল রয়েছে। বাকিগুলো হয় হামলায় ধ্বংস হয়েছে অথবা সরবরাহের অভাবে বাধ্য হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।


স্বাস্থ্য সেবাকর্মী: যে হাসপাতালগুলো সচল রয়েছে সেখানে ব্যাপক স্বাস্থ্য সেবাকর্মীর অভাব রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ কম কর্মী নিয়ে সেবা প্রদান চলছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা দাবি করেছে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সময় হামলায় ১৬ জন স্বাস্থ্য সেবাকর্মী নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও ৩০ জন।
পানি সরবরাহ: ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েল থেকে আসা গাজার সকল পানির লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর গত একমাসে আর পানির লাইন সচল করা হয়নি। তবে গতকাল তিনটি পানির লাইনের মধ্যে প্রথমবারের মতো মাত্র একটি পানির লাইন পুনরায় চালু করা হয়েছে।


বিদ্যুৎ সরবরাহ: গাজা এখনও সম্পূর্ণভাবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ব্যাকআপ জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুতের কাজ চালানো হচ্ছে। হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে গত ১১ অক্টোবর গাজায় বিদ্যুৎ, তেল বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। ৭ অক্টোবর হামলার পর মিশরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে ২১ অক্টোবর গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরায়েল। তবে, সেখানে তেল সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।


ত্রাণবাহী ট্রাক: গতকাল পানি, খাদ্য, ওষুধসহ মোট ৫৯ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। এ পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে বড় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করল গাজায়। সংঘাত শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত মোট ২১৭টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে গাজায় এই পরিস্থিতিতে প্রতিদিন এরকম ত্রাণবাহী ৫০০ ট্রাকের প্রবেশের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।


বেকারি: গাজায় বিশ্ব খাদ্য সংস্থার পরিচালিত মাত্র একটি বেকারি খোলা আছে। স্থানীয়ভাবে পরিচালিত ৮টি বেকারির মধ্যে মাত্র একটি খোলা আছে। যা গাজায় অবস্থানকারীদের জন্য খুবই স্বল্প। তাদের চাহিদা মেটানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।


এদিকে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবির। প্রাণ গেছে অন্তত ৫০ জনের। খান ইউনিস, জেনিন ক্যাম্প ও পশ্চিমতীরেও হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় আবারও বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ। এদিকে, অল্প সংখ্যক আহত ফিলিস্তিনিকে চিকিৎসার জন্য মিশরে পাঠাতে প্রথমবারের মতো খোলা হয়েছে গাজার রাফাহ ক্রসিং। প্রথম দিনে গাজা থেকে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে এ পর্যন্ত ৩২০ জন দ্বৈত নাগরিক এবং আহত ৭৬ জন ফিলিস্তিনি মিশরে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছে বিবিসি। আহত ফিলিস্তিনির সঙ্গে প্রায় ৫০০ দ্বৈত নাগরিককে এদিন রাফাহ ক্রসিং পার হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে। তারা মিশরের প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন।


গাজা উপত্যকায় গত ২৪ দিন ধরে সংঘাত চলছে। এ সময়ে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে এ পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই শিশু। চলমান হামলায় ৩ হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন। যা ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর সারা বিশ্বে সংঘাতের কারণে যত শিশু নিহত হয়েছে তার চেয়েও বেশি।


গত ৭ অক্টোবর হামাস আকস্মিক হামলা চালায় ইসরায়েলে। এতে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়। এরপর থেকে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com