ঔপনিবেশিক আমলে ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কা থেকে লুট করা শত শত মূল্যবান প্রত্নবস্তু ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেদারল্যান্ডস। যে জিনিসগুলো ফেরত দেয়া হবে তার মধ্যে একটি রত্ন-খচিত ব্রোঞ্জের কামান এবং ‘লম্বক কোষাগার’ থেকে লুট করা গহনাও রয়েছে।
৭ জুলাই, শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যদি এসব মূল্যবান প্রত্নবস্তু ফেরত দেয়ার অনুরোধ করে তাহলে সরকারকে এসব আইটেম ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয় একটি প্রতিবেদনে। নেদারল্যান্ডস তার ঔপনিবেশিক অতীতকে ক্রমবর্ধমানভাবে সামনে এনে ভুল স্বীকারের পাশাপাশি এসব সামগ্রী ফিরিয়ে দিতে সম্মত হওয়ার বিষয়টি সামনে এলো।
বিবিসি বলছে, অন্যান্য দেশও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লুণ্ঠিত মূল্যবান নিদর্শনগুলো ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ১৮৯৭ সালের ব্রিটিশ সামরিক অভিযানের সময় নাইজেরিয়া থেকে চুরি হওয়া কিছু তথাকথিত বেনিন ব্রোঞ্জ ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে ব্রিটিশ এবং জার্মান জাদুঘরগুলোর স্বাক্ষর করার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।
সংস্কৃতিমন্ত্রী গুনে উসলু বলেছেন, ‘(এটিই) প্রথমবার আমরা এমন বস্তু ফিরিয়ে দিচ্ছি। এগুলো আসলে নেদারল্যান্ডসে কখনোই হওয়া উচিত ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমরা শুধু বস্তু ফেরত দিচ্ছি না। আমরা আসলে এমন একটি সময় শুরু করছি যেখানে আমরা ইন্দোনেশিয়া এবং শ্রীলঙ্কার সাথে আরও নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করতে চলেছি।’
ইন্দোনেশিয়ার কাছে ফেরত দেয়া জিনিসের মধ্যে ‘লম্বক ধন’ রয়েছে। যার মধ্য রয়েছে- মূল্যবান পাথর, স্বর্ণ ও রৌপ্যের একটি ভাণ্ডার। এগুলো ১৮৯৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার লম্বক দ্বীপের একটি রাজপ্রাসাদ থেকে ডাচ ঔপনিবেশিক সেনাবাহিনী লুট করেছিল।
অন্যদিকে অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি সুসজ্জিত ব্রোঞ্জ কামান ফিরিয়ে নেবে শ্রীলঙ্কা। এটি বর্তমানে আমস্টারডামের রিজকস মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্য রাখা রয়েছে। ১৭৪০ এর দশকে শ্রীলঙ্কার এক অভিজাত ব্যক্তি এটি ক্যান্ডির রাজাকে উপহার দিয়েছিল বলে মনে করা হয়।
এরপর কামানটি ১৭৬৫ সালে ডাচদের হাতে পড়ে। সেসময় মূলত ডাচ সৈন্যরা শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডি রাজ্য আক্রমণ এবং জয় করে।
বিবিসি বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপের এই দেশটি তার অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশ খোলামেলাভাবে কথা বলে আসছে। দাস ব্যবসার মতো হীন কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার ‘অতীত ইতিহাসের’ জন্য সপ্তাহখানেক আগে ক্ষমা চান নেদারল্যান্ডসের রাজা উইলেম-আলেক্সান্ডার।
তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি ‘ব্যক্তিগত ও তীব্রভাবে’ তাকে মর্মাহত করেছে।
উল্লেখ্য, ১৭ শতকের পর নেদারল্যান্ডস বিশ্বের অন্যতম বড় ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সে সময় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে ডাচরা। আর দেশটির দাস ব্যবসায়ীরা ৬ লাখ মানুষকে দাস হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করেছিল।
এছাড়া গত ১৭ শতকে নেদারল্যান্ডস অবৈধভাবে বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার বৃহৎ অংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, কুরাকাও এবং পূর্ব পাপুয়ায় তাদের ঔপনিবেশিবাদ প্রতিষ্ঠা করে এবং ট্রান্সআটলান্টিকের দাস ব্যবসায় বড় অবস্থান তৈরি করে।
তবে নিজেদের এই অতীত হীনকর্ম স্বীকার করতে অনেক সময় নিয়েছে দেশটি। বর্তমানে ডাচ স্কুলগুলোতে দাস ব্যবসা ও এর ভয়াবহতা নিয়ে পড়ানো হয়। স্কুলের পাঠ্যসূচিতে এটি যুক্ত করা হয় ২০০৬ সালে।
বিবার্তা/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]